ওয়্যাক্সিংয়ের সাতসতেরো

.
.

হাতে-পায়ে লোম! অনেকে হয়তো বিষয়টি সহ্যই করতে পারেন না। অনেকের কাছে এটি আবার কোনো ব্যাপারই না। যাঁরা নিয়মিত হাত-পা লোমমুক্ত রাখতে চান, তাঁদের জন্য সহজ পদ্ধতিটা হলো ওয়্যাক্সিং! ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে লোম গোড়া থেকে উঠে আসে, ফলে ত্বক দীর্ঘদিন থাকে লোমমুক্ত। সেই প্রাচীন মিসর থেকে সৌন্দর্যের এই চর্চা চলে আসছে। অতিরিক্ত উষ্ণ আবহাওয়ায় ত্বককে কোমল ও পরিষ্কার রাখার জন্যই মিসরের নারী-পুরুষ সবার জন্যই এর প্রচলন ছিল।

রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনও এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, অবাঞ্ছিত লোমের কারণে ত্বক খসখসে হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে পশমের গোড়ায় জমে থাকে ধুলাবালি। তাই ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে ত্বক থাকে পরিষ্কার ও কোমল। 

প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ওয়্যাক্স লাগানো হচ্ছে পায়ের ত্বকে। মডেল: সারা, কৃতজ্ঞতা: পারসোনা, ছবি: নকশা
প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ওয়্যাক্স লাগানো হচ্ছে পায়ের ত্বকে। মডেল: সারা, কৃতজ্ঞতা: পারসোনা, ছবি: নকশা

লোম তোলার নানা ধরন
সবার ত্বক এক ধরনের নয়। সবার বয়সও এক নয়। আবার কারও লোম বাড়ে দ্রুত, কারও কম। সে ক্ষেত্রে বয়স, ত্বকের ধরন ও সংবেদনশীলতা অনুযায়ী রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়্যাক্সিং।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী মূলত দু ধরনের ওয়্যাক্সিং রয়েছে। কোল্ড এবং হট ওয়্যাক্সিং। যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের জন্য কোল্ড ওয়্যাক্সিং। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ত্বক পরিষ্কার করে বেশি করে পাউডার ব্যবহার করতে হয়, যাতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে আসে। অপরদিকে যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁদের জন্য হট ওয়্যাক্সিং। এ ক্ষেত্রে পাউডার ব্যবহার না করলেও চলে।
এ ছাড়া রয়েছে হারবাল ওয়্যাক্সিং। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো এই ওয়্যাক্সিং। এ ধরনের ত্বকে অনেক সময় ওয়্যাক্স করার পর র‍্যাশ দেখা দেয়। আবার দেখা দিতে পারে অ্যালার্জির প্রকোপও। তাই প্রাকৃতিক উপাদান যেমন মধু দিয়ে এ পদ্ধতিতে লোম তুলে ফেলা হয়।
তবে যে ধরনের ওয়্যাক্সিংই হোক না কেন, ব্যবহারকারীকে অবশ্যই ১৭ বছরের হতে হবে। এর আগে আন্ডার আর্মস ছাড়া হাত-পায়ের লোম না তোলাই ভালো।
ঘরে বসেই ওয়্যাক্সিং
মাঝারি একটি পাত্রে ১ কাপ চিনির সঙ্গে পানি মিশিয়ে শিরা তৈরি করুন। এর সঙ্গে ১ কাপ মধু এবং আধা কাপ লেবুর রস মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। ওয়্যাক্সিং করার শুরুতেই নির্দিষ্ট স্থানে পাউডার দিয়ে নিন। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠবে। একটি কাঠের চামচ দিয়ে মিশ্রণটি হাত-পায়ে লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটির ওপর সুবিধাজনক আকৃতির লিনেন কিংবা নরম সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর কাপড়টি শুকিয়ে এলে সেটি টান দিয়ে তুলে ফেলুন। তবে হ্যাঁ, ওয়্যাক্সিংয়ের পর অবশ্যই হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে। লোম তুলে ফেলার ফলে শরীরের স্থানটি লাল হয়ে যায়, অনেক সময় জ্বালাপোড়া করে। স্থানটিতে কিছুক্ষণ বরফ ঘষতে পারেন। কিংবা আফটার শেভিং ক্রিম লাগিয়ে রাখতে পারেন। 
উপকারিতা
প্রাচীন মিসরে যখন ওয়্যাক্সিংয়ের প্রচলন শুরু হয়, তখন উষ্ণ আবহাওয়া এবং ত্বকের কোমলতার কথা চিন্তা করা হতো। বর্তমান সময়েও তেমনটি। সারা দিন বাইরের ব্যস্ততা। ঘরেও নানান কাজ। এত সবের মধ্যে ত্বকের শত্রু হয়ে ওঠে ধুলাবালি। লোমকূপে ধুলাবালি, নানা জীবাণু এবং মৃতকোষ জমে থেকে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অবাঞ্ছিত লোমের জন্য ত্বকটাও যে হয়ে ওঠে অনমনীয়। আর গরমে অতিরিক্ত লোমের কারণে শরীরে হতে পারে দুর্গন্ধ। সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান দেবে ওয়্যাক্সিং। অনেকে ওয়্যাক্সিংয়ের বিকল্প হিসেবে রেজার কিংবা থ্রেডিং পদ্ধতি বেছে নেন। দীর্ঘদিন এগুলো করা হলে ত্বকে অনেক সময় কালচে দাগ পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ওয়্যাক্সিং অনেকটাই নিরাপদ। 

ওয়্যাক্স লাগানোর পর নরম সুতি কাপড় লাগিয়ে টান দিন
ওয়্যাক্স লাগানোর পর নরম সুতি কাপড় লাগিয়ে টান দিন
লোম তোলার পর ত্বকে বরফ দিলে আরাম মিলবে
লোম তোলার পর ত্বকে বরফ দিলে আরাম মিলবে

অপকারিতা

অনেকে মনে করেন, ওয়্যাক্সিংয়ের ফলেই ত্বকে কালচে দাগ পড়ে। আফরোজা পারভীনও কথাটি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, ঘন ঘন ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে এমনটা হয়। যদিও ১৫ থেকে ২৫ দিন পর ওয়্যাক্স করা উচিত, তারপরও অনেকের লোম দ্রুত গজিয়ে যায়। তাঁদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হতে পারে। অনেকের আবার ঝুলে পড়া ত্বক ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে আরও ঝুলে যায়।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ডারমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘বাইরের ধুলাবালি ও সূর্যের রোদ থেকে রেহাই পাবার জন্য হাত-পায়ে লোম থাকা দরকার। কেননা লোমগুলো আমাদের ত্বকের ওপর আবরণ হিসেবে কাজ করে। আর লোম যদি তুলে ফেলা হয়, তাহলে ত্বক হয়ে পড়ে অরক্ষিত।’ একইভাবে ওয়্যাক্সিংয়ের ফলে অনেক সময় ত্বকে অ্যালার্জি অথবা র‍্যাশও দেখা দিতে পারে। তাই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, যতটা সম্ভব ওয়্যাক্সিং এড়িয়ে চলাই ভালো। আর যদি করতেই হয়, তবে নিতে হবে সঠিক পরিচর্যা। প্রতিবার ওয়্যাক্সিংয়ের পর সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করলে কিছুটা ক্ষতি কম হবে।

চাই সঠিক পরিচর্যা

ওয়্যাক্সিংয়ের পর স্থানটিতে বরফ ঘষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যাঁদের ত্বক বেশি শুষ্ক, তাঁরা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে আপনার ত্বকে র‍্যাশ কিংবা অ্যালার্জি হবে না। ত্বকও থাকবে মোলায়েম। লোম পুরোপুরি ফিরে না এলে ওয়্যাক্সিং না করাই ভালো। আর ত্বক অতিরিক্ত মাত্রায় সংবেদনশীল হলে ভালো কোনো রূপচর্চাকেন্দ্রে গিয়েই ওয়্যাক্সিং করাতে পারেন। এতে কালচে দাগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। অবশ্যই বাইরে বেরোনোর আগে হাত-পায়ে সানস্ক্রিন ভালোমতো লাগিয়ে নিন। এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক থাকবে সুরক্ষিত।