কেন পান করবেন ডিটক্স পানি

শরীর থেকে সব দূষিত উপাদান বের করতে ডিটক্স পানির বিকল্প নেই।
ছবি: নকশা

ঈদুল আজহার রেশ এখনো যায়নি। যেটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি খাবারের টেবিলে। সেখানে এখনো থাকছে ভারী ভারী সুস্বাদু সব খাবার। কিন্তু তেল–চর্বিযুক্ত এসব খাবার খেয়ে শরীরের হাল হচ্ছে বেহাল। সে জন্য দরকার শরীর থেকে বাড়তি টক্সিন বা দূষিত উপাদান বের করে দেওয়া। সেই কাজ ভালোভাবে করবে ডিটক্স পানি।

আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা যত সব দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার জন্যই ডিটক্স পানির ব্যবহার। চাইলে বাড়িতেই নানা রকম ডিটক্স পানি বানিয়ে নেওয়া যায়। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বললেন, এক জগ পানিতে আদা, লেবু, পুদিনাপাতা ও শসা রেখে দিতে পারেন। সেখান থেকে ছেঁকে পানি খেতে পারেন। জিরাপানি ভালো ডিটক্স হিসেবে কাজ করে। কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীর ডিটক্স হয়। শুধু পানিতেও ডিটক্সের কাজ হয়। সে জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুই গ্লাস উষ্ণ গরম পানি পান করতে পারেন। উষ্ণ পানি পানের কোনো অসুবিধা নেই।

ডিটক্স ওয়াটার সারাদিন অল্প অল্প করে পান করা ভালো।

তবে বিশেষজ্ঞের মতে, ডিটক্স করার পদ্ধতি আমাদের মাঝেমধ্যে বদলানো দরকার। দীর্ঘ সময় আমরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করব না। এক রকম ডিটক্স পানি ১৫ দিন পান করে অন্যটা পান করতে পারেন। তাহলে শরীর সব ধরনের উপকার পাবে। তবে ডিটক্স পানি পানের ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ, দেখতে হবে শরীর কোনটি কীভাবে নিতে পারছে। গ্যাসের সমস্যা না থাকলে সকালে গরম পানিতে লেবু ও মধু যোগ করতে পারেন। এর আধা ঘণ্টা পর সকালের নাশতা করলেন। ঈদের সময় প্রচুর মাংস খাওয়া হয়। এ সময় ২ টেবিল চামচ টক দই নিয়ে তাতে পানি, জিরা, গোলমরিচ, লবণ দিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন।

দেখা যায়, অনেকে একবারে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করেন সারা দিন। এই রূপবিশেষজ্ঞের মতে, তেমন করা মোটেও ঠিক নয়। সারা দিন অল্প অল্প করে পানি পান করা উচিত। তবে রাতে কিছুটা কম পান করাই ভালো, তা না হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ডিটক্স পানি সকালে একটি কাচের জগে রেখে দিতে পারেন। পরে সারা দিন পান করে সন্ধ্যার দিকে বাকিগুলো ফেলে দিতে হবে। না হলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। সারা দিনে পান করতে পারেন যতটা ইচ্ছা। গোসল থেকে বের হয়ে এসেও এক গ্লাস পানি পান করুন।

সবশেষে এই সময়ে শরীর ঠিক রাখার জন্য তিনি ভাত খাওয়ার ১৫ মিনিট আগে পানি পানের পরামর্শ দেন। এরপর খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর পানি পান করবেন। খাবারের মাঝে পানি পানে হজমে সমস্যা হয়। আর ডিটক্স করার জন্য ঠান্ডা পানি নয়, ঘরের তাপমাত্রায় আছে এমন পানি নেওয়াই ভালো।

ডিটক্স ওয়াটারের নেই কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো শোনালেন এই পানির গুণাগুণের কথা। তিনি বলেন, এসবের তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। চিনি ছাড়া আদা চা ডিটক্স। আদা–পুদিনার জুস, লেবুপানি ডিটক্স করে। তবে আদা, লেবু—এসবে অনেকের গ্যাস হয়। তাঁদের হয়তো কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সে জন্য বুঝে ডিটক্স পানি পানের পরামর্শ আখতারুন্নাহার আলোর। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, এমন রোগীদের শরীরে হয়তো পটাশিয়াম বেশি। পুদিনাপাতা, বেদানার রস, বিটের জুস ডিটক্স পানিতে যোগ করলে ক্ষতি হবে। কারও ডায়াবেটিস থাকলে মধু দিয়ে বানানো ডিটক্স পানি পানে ক্ষতিই হবে। কিন্তু কারও যদি কোনো রোগ না থাকে, তাহলে ডিটক্স পানি পানে কোনো সমস্যা নেই। শরীর ঠিক রাখতে যেকোনো ভারী খাবার খেয়েই তাই এক গ্লাস ডিটক্স পানি পান করে নিতে পারেন। তিনি বলেন, যেকোনো সময়ই ডিটক্স পানি পান করতে পারেন। পানি হালকা গরম করে পান করলে আরও ভালো। তাহলে চর্বিজাতীয় খাবারও হজম হয়ে যাবে। এই পানিতে পুষ্টি পাবেন, কিন্তু শরীরে কোনো ক্যালরি যোগ হবে না। তবে যাঁরা কম স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাঁরা খাবার না খেয়ে যদি শুধু ডিটক্স পানি পান করতেই থাকেন, তাহলে সমস্যা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের অনেকখানি দায়িত্ব নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারেন ডিটক্স পানির হাতে।