খুশকিমুক্ত ঝলমলে চুলের জন্য এক্সফোলিয়েশন

আমাদের দেহে প্রতি ২৭ দিন পরপর মৃত কোষ উঠে গিয়ে নতুন কোষ জন্ম নেয়। আর এই মৃত কোষ ঠিক ততক্ষণ আমাদের ত্বকে লেগে থাকে, যতক্ষণ আমরা নিজে থেকে এটি সরানোর ব্যবস্থা না নিই। আর এর জন্য প্রয়োজন এক্সফোলিয়েশন।

এক্সফোলিয়েশনের অভাবে ত্বক বিবর্ণ এবং নিষ্প্রাণ দেখায়। যাঁরা ত্বকের সঠিক যত্ন নিয়ে থাকেন, তাঁরা কখনোই রূপচর্চার এই ধাপটি এড়িয়ে যান না। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের মাথার ত্বকের জন্যও এক্সফোলিয়েশনের দরকার আছে।

সুস্থ ঝলমলে চুলের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এক্সফোলিয়েশনের ভেতর
ছবি: প্রথম আলো

বেশির ভাগ মানুষের চুলচর্চা শ্যাম্পু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। আর খুব অল্পসংখ্যক মানুষ চুলে তেল লাগান। আর এর থেকেও কম মানুষ চুলের জন্য বিশেষ প্যাক ব্যবহার করেন। অথচ সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল কিন্তু আমরা সবাই চাই। এর জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হবে। শ্যাম্পু, তেল ও চুল অনুযায়ী বিশেষ প্যাক—এই সবকিছুই যেমন লাগবে, তেমনি এর সঙ্গে যোগ করতে হবে এক্সফোলিয়েশন। কারণ সুস্থ ঝলমলে চুলের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এর ভেতর।

শরীরে ত্বকের মতো মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পেও জমে মৃত কোষ। শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে কিছু মৃত কোষ উঠে গেলেও ভালোভাবে তা কখনোই যায় না। আর যাঁদের স্ক্যাল্প বেশি শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং খুশকিযুক্ত, তাঁদের এক্সফোলিয়েশন অত্যন্ত জরুরি। কারণ তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসৃত হয়। যার ফলে ধুলাবালি, ময়লা বেশি আটকায়। শুধু শ্যাম্পু দিয়ে এই ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এ ধরনের ত্বকেই খুশকির প্রবণতা বেশি। ঠিকমত এক্সফোলিয়েট করলে দ্রুতই খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর শুষ্ক ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করতে পরিমিত এক্সফোলিয়েশন দরকার। এতে দূর হবে ফ্লেকিনেস।

চুলে কোনো প্যাক লাগানোর আগে এক্সফোলিয়েট করে নিলে ত্বকের গভীরে প্যাকটির পুরো পুষ্টি খুব ভালোভাবে প্রবেশ করে
ছবি: প্রথম আলো

চুলে কোনো প্যাক লাগানোর আগে এক্সফোলিয়েট করে নিলে ত্বকের গভীরে প্যাকটির পুরো পুষ্টি খুব ভালোভাবে প্রবেশ করে। এ ছাড়া এটি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর

বাজারে অনেক ধরনের এক্সফোলিয়েটর কিনতে পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে এগুলো একটু বেশি ব্যয়বহুল। চাইলেই হাতের কাছে থাকা মাত্র কয়েকটি জিনিস দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন নিজের স্ক্যাল্প অনুযায়ী এক্সফোলিয়েটর।

ব্রাউন সুগার
ছবি: পেকজেলসডটকম

ব্রাউন সুগার ও ওটমিল

আর্দ্রতার জন্য এই এক্সফোলিয়েটর সব ধরনের স্ক্যাল্পের জন্যই প্রযোজ্য। দুই টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার, দুই টেবিল চামচ ওটমিলের গুঁড়া আর সঙ্গে নিজের পছন্দমতো যেকোনো হেয়ার কন্ডিশনার দুই টেবিল চামচ। তবে এখানে প্রাকৃতিক হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা ভালো। কারণ, বাজারে যে কন্ডিশনার পাওয়া যায় সেগুলো চুলের গোড়ায় লাগানো যায় না। এ ক্ষেত্রে কালো চা বা সবুজ চায়ের লিকার মেশাতে পারেন। যেকোনো চুলের জন্য এটি খুব ভালো এবং সহজ কন্ডিশনার।

তেল-মধুর স্ক্রাব

চুলের বৃদ্ধির জন্য এই এক্সফোলিয়েটর অনেক উপকারী। এটি শুধু স্ক্যাল্পের মৃত কোষই সরায় না, সঙ্গে বাড়তি পুষ্টিও জোগায়। এক টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, এক চামচ মধু, আধা চামচ লবণ মিশিয়ে বানান এক্সফোলিয়েটরটি।

মধু। তেল-মধুর স্ক্রাব এক্সফোলিয়েটর হিসেবে ব্যবহার করা যায়
ছবি: পেকজেলসডটকম

তেল-লেবুর স্ক্রাব

খুশকি দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ দাওয়াই। এর সঙ্গে লবণ যোগ করলেই হয়ে যাবে দারুণ এক্সফোলিয়েটর। লবণ একটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর। এ ছাড়া এটির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকি দূর করতেও বেশ কার্যকর। দুই চামচ লবণ, দুই চামচ জলপাই বা নারকেল তেল (বা দুটি তেল এক চামচ করে) আর এক চামচ লেবুর রস। ব্যস! তৈরি খুশকিনাশক এক্সফোলিয়েটর। সপ্তাহে একবার ব্যবহারেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এক্সফোলিয়েটর সব সময় ভেজা চুলে লাগানো উচিত। এ জন্য প্রথমে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে তারপর ভেজা স্ক্যাল্পে আঙুল দিয়ে ঘষে ঘষে এটি লাগাতে হবে। তবে ঘষার সময় নখ লাগানো থেকে বিরত থাকুন।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, ফেমিনা, বি বিউটিফুল