তেলে পাবেন আর্দ্রতা

ত্বক ও চুলের জন্য তেল ম্যাসাজ দারুণ উপকারী। মডেল: সারা, ছবি: নকশা
ত্বক ও চুলের জন্য তেল ম্যাসাজ দারুণ উপকারী। মডেল: সারা, ছবি: নকশা

উষ্ণতা খোঁজার এই দিনে ত্বক চায় আর্দ্রতার ছোঁয়া। হরেক রকম ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি তেলও হতে পারে এই আর্দ্রতার উৎস। তেল মানেই বুঝি শুধু চিটচিটে ভাব! একদমই তা নয়। বরং শীতের সময়টাতে ত্বক ও চুলের যত্নে কাজে লাগাতে পারেন নানান রকম তেল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুষার সিকদার বলেন, শীতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সবচেয়ে ভালো তেল অলিভ অয়েল। ত্বকের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে যায় এটি। এতে আলাদাভাবে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে না বলে অতি সংবেদনশীল ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। ত্বকের আর্দ্রতা ফিরে পেতে ময়েশ্চারাইজিং লোশনের চেয়েও অলিভ অয়েল বেশি কার্যকর।
জেনে নিন তেলের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর কিছু পরামর্শ—
* মাথার ত্বকের শুষ্কতার ফলে খুশকি হয়। এ সমস্যা এড়াতে মাথার ত্বকে তেল লাগানো প্রয়োজন। রাতে তেল লাগিয়ে সকালে চুল ধুয়ে ফেললেও অসুবিধা নেই।
* চুলের সুস্থতায় জবা ফুল বেটে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগানো যেতে পারে। এর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
* গোড়ালি ফাটার সমস্যায় যেকোনো তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদ জানালেন, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল আর সরষের তেলে রয়েছে ভিটামিন ই। এসব তেল ব্যবহারে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এ ছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে নানান ধরনের তেল।
সোনালী’স এইচডি মেকআপ স্টুডিওর রূপবিশেষজ্ঞ সোনালী ফেরদৌসি মজুমদার বলেন, ‘শীতের শুষ্কতায় রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নানান রকম তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শুষ্ক ত্বকে তেল ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও লাবণ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
তবে রাতে তেল লাগিয়ে সকালে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে বলে জানালেন তিনি। নানান ধরনের তেলের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর পরামর্শ—

নারকেল তেল
শুষ্ক ত্বকের যত্নে দারুণ কার্যকর নারকেল তেল। ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে নারকেল তেল। ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে ফেলে ত্বক কোমল রাখতেও সাহায্য করে এটি।
খুশকি, চুল পড়া, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়াসহ নানান সমস্যায় নারকেল তেল বেশ উপকারী।

আমন্ড অয়েল
শুষ্ক চামড়া উঠে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়েন কেউ কেউ। শুষ্ক ত্বকের এমন নানান সমস্যায় আমন্ড অয়েল বেশ কার্যকর।
তুলার ছোট বল তৈরি করে আমন্ড অয়েলে ভিজিয়ে নিন। চোখের নিচে মৃদুভাবে ম্যাসাজ করুন। প্রতিরাতে এভাবে ম্যাসাজ করলে চোখের নিচের কালো ভাব কমে যাবে।
আমন্ড অয়েলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। নিয়মিত আমন্ড অয়েল ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখা কমে আসবে।
চুলের পুষ্টি জোগাবে আমন্ড অয়েল। চুল পড়া ও চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে এটি। আঙুলের ডগার সাহায্যে চুল ও মাথার ত্বকে নিয়মিত ম্যাসাজ করুন আমন্ড অয়েল।

আরগন অয়েল
রোজ রাতে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করে নিয়ে আরগন অয়েল লাগিয়ে রাখতে পারেন। ১-২ ফোঁটা আরগন অয়েল হাতের তালুতে নিলে এটি খানিকটা উষ্ণতা পাবে। এরপর এই তেল মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। এটি সহজেই ত্বকের সঙ্গে মিশে যায় বলে ত্বকে চিটচিটে ভাব থাকে না।
চুলের রুক্ষতা, আগা ফেটে যাওয়া ও শুষ্ক ভাব এড়াতে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন আরগন অয়েল। রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে যাঁরা চুল রং করান, তাঁরা এসব পদার্থের প্রভাব থেকে চুলকে বাঁচাতে আরগন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

জোজোবা অয়েল
ত্বকের আর্দ্রতা ও পুষ্টি জোগাতে ব্যবহার করতে পারেন জোজোবা অয়েল।
চুলে জোজোবা অয়েল লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে। শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের সঙ্গে জোজোবা অয়েল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

ল্যাভেন্ডার অয়েল
যাঁরা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন বা বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারে যাঁদের ত্বকে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাঁদের ত্বকের জন্য ল্যাভেন্ডার অয়েল বেশ উপকারী।

অলিভ অয়েল
শুষ্ক ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল বেশ কার্যকর। তবে ব্রণ থাকলে অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো।

তিলের তেল
ত্বকের ব্ল্যাক হেড, ব্রণ আর কালো দাগ দূর করতে তিলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। তিলের তেল যেমন সারা রাত ত্বকে লাগিয়ে রাখা যায়, তেমনি ক্লিনজিং ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যাতেও কাজে লাগবে তিলের তেল।
গোসলের সময় পানিতে ২-৩ টেবিল-চামচ তিলের তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা বেরিয়ে আসবে। এরপর কুসুম গরম পানি ও মৃদু সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
এক ফোঁটা তিলের তেল হাতের তালুতে ঘষে নিয়ে শুকনো চুলে লাগিয়ে নিন। এটি কন্ডিশনারের কাজ করবে।

চা পাতার তেল (টি ট্রি অয়েল)
ব্রণ প্রতিকারে চা পাতার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ব্যবহারের আগে ত্বকে সামান্য একটু লাগিয়ে দেখুন, এটি আপনার ত্বকে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া করছে কি না।

ফেসপ্যাকেও তেল
* এক চা-চামচ অলিভ অয়েল ও আধা চা-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াবে।
* এক কাপের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং এর সমপরিমাণ পানির সঙ্গে আধা কাপ তিলের তেল মিশিয়ে ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন রোজ রাতে। তবে এটি লাগানোর আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।
* যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির, তাঁরা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ২০-২৫ ফোঁটা চা-পাতার তেল, মধু, এক টেবিল-চামচ ওটস মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

তেলে স্ক্রাবিং
পরিষ্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর তিলের তেল ভালোভাবে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। আধা চা-চামচ চালের গুঁড়ার সাহায্যে মুখ পরিষ্কার করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন।

তেল দিয়েই লোশন
তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সেখান থেকে ২৫ মিলিলিটার রস নিয়ে ৬০ মিলিলিটার গোলাপজল ও ১৫ ফোঁটা চা-পাতার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে লোশন তৈরি করুন। ফ্রিজে রেখে এটি ব্যবহার করতে পারবেন ১৪ দিন পর্যন্ত। লোশনটি ব্যবহারের আগে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।