অন্দর
নিজেই রাঙান নিজের দেয়াল
বাড়ির যে দেয়ালটির অবস্থা বেশি শোচনীয়, নিজেই সেটা রং করে নিতে পারেন।
বাড়ি রং করার জন্য এই সময়টাই মোক্ষম। পুরো বাড়ি রং করতে প্রয়োজন পেশাদার রংমিস্ত্রি। অতিমারির এই সময়ে সেটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যে দেয়ালটির অবস্থা বেশি শোচনীয়, চাইলে নিজেই সেটা রং করে নিতে পারেন। সঙ্গে বাড়ির অন্য সদস্যরা থাকলে সময়টাও দারুণ কাটবে।
বাড়ির কোন দেয়ালে রং করবেন, সেটা আগে বাছাই করে নিন। বিশেষ কোনো রং বা থিম—কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবেন, সেটা ঠিক করে তবেই কাজে নামতে বললেন স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেটামরফিকের স্থপতি ফারাহ মৌমিতা। বসার ঘর, খাবার ঘর কিংবা কমন স্পেসের কোনো একটি দেয়ালে রং করা যেতে পারে। নিজের শোবার ঘরের একটি দেয়ালও বেছে নিতে পারেন। ঘরের বাকি দেয়াল এবং আসবাবের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে, এমন রং বাছাই করুন। ঘরের একটি দেয়ালে তো একটু নিরীক্ষা করা যেতেই পারে। চাইলেই উজ্জ্বল কোনো রং দিয়ে এর ওপর নকশা করতে পারেন অথবা একই দেয়ালে অনেকগুলো রং ব্যবহার করতে পারেন।
যদি চান ভিন্নতা
চিরুনি, ব্রাশ কিংবা থালাবাসন পরিষ্কার করার স্পঞ্জ—সাধারণ এই জিনিসগুলোই আপনার ঘরের দেয়ালে দারুণ নকশা আঁকতে সাহায্য করবে। নিজের পছন্দমতো আকৃতির প্লাস্টিক বা শক্ত কাগজ নিয়ে সেটাতে নকশা কাটুন। নকশা করা এই কাগজকে বলা হয় স্টেন্সিল। এবার এই নকশা দেয়ালের সঙ্গে ধরে রাখুন এবং রং করুন। নিজের ঘরে কার্টুন চরিত্রগুলোও এভাবে দেয়ালে এঁকে ফেলতে পারবে আপনার ছোট্ট শিশুটিও।
আপনি যেমনটা নকশা চাচ্ছেন, তেমনভাবে মাস্কিং টেপগুলো দেয়ালে আটকে ফেলুন। এরপর টেপের ওপরে রং স্প্রে করুন বা ব্রাশ দিয়ে পেইন্ট করুন। রং করা হয়ে গেলে মাস্কিং টেপ তুলে ফেলুন।
পরিবারের সবার স্মৃতি দেয়ালে ধরে রাখতে চাইলে সবচেয়ে সহজ উপায়টি হলো দেয়ালে হাতের ছাপ ফুটিয়ে তোলা। হাতগুলোতে রং মেখে দেয়ালে চেপে ধরুন। এই হাতের ছাপ সব সময় বাড়ির দেয়ালে টিকে থাকবে।
পড়ার কিংবা শোবার ঘরের দেয়ালে নিজের পছন্দের কথা, উক্তি কিংবা একটা কবিতার লাইন তো আঁকাই যায়। খুব সহজেই এটা করা সম্ভব। ঘরের দেয়ালে রং করুন। এরপর মোটা কাগজে বড় করে পছন্দের কথাটি লিখে আউটলাইন কেটে নিন। এরপর এটি দেয়ালে বসিয়ে তার ওপর রং করে নিন।
‘ডু ইয়োরসেলফ’, অর্থাৎ নিজেই করি, এই ধারণা মাথায় রেখে বার্জার পেইন্ট নিয়ে এসেছে ইলিউশন টুলস। এতে থাকছে স্যান্ডার মেশিন, ডিজাইন করা রোলার এবং স্টেন্সিল, জানালেন বার্জার পেইন্টসের মার্কেটিং বিভাগের ক্যাটাগরি ম্যানেজার সৈয়দ শরিফ রাসেল। স্যান্ডার মেশিন ধুলা না উড়িয়েই সিরিশ কাগজের মতো কাজ করবে। নিজেরা রং করার ক্ষেত্রে রবিউল্যাক পেইন্ট এবং প্রাইমার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।
সাবধানতা
প্রথমেই মোটামুটি বাতিল হওয়া জামাকাপড় পরে নিন। হাতে গ্লাভস পরা থাকুক। একটু মোটা ধরনের অ্যাপ্রোনও পরে নিতে পারেন।
রং করার আগে ঘরের সমস্ত ফার্নিচার সরিয়ে দিন। একান্তই যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে দেয়ালের দিক থেকে সেগুলো সরিয়ে ঘরের মাঝখানে রাখুন। প্লাস্টিক পেপার বা মোটা কাপড় দিয়ে এগুলো সম্পূর্ণ ঢেকে দিন, রং পড়ে যাতে নষ্ট না হয়।
রং করার সময় ব্রাশ থেকে রঙের ফোঁটা মেঝেতে পড়ে। এগুলো তুলতে সময় যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য রং করার আগে মেঝেতে কাগজ পেতে দিন।
দেয়ালে লাগানো ছবি, আয়না, ঘর সাজানোর অন্যান্য জিনিস থাকলে নামিয়ে নিন। সিলিং ফ্যান, বাল্ব, টিউবলাইট, দেয়াল থেকে নামিয়ে কাপড় বা কাগজে ঢেকে রাখুন।
রং করার আগে
প্রথমে ঘরের দেয়ালে পছন্দের রং ভালোভাবে ব্রাশ করে লাগিয়ে নিন। রং শুকিয়ে যাওয়ার আগেই বাসায় ব্যবহৃত ঝাড়ু দিয়ে টানা লম্বা করে ঘষে দিন। এ ক্ষেত্রে আপনি শলাকা ঝাড়ুও ব্যবহার করতে পারেন।
যদি ঘর আগে রং হয়ে থাকে, তাহলে সেই রং ভালোভাবে মোটা সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে তুলে দিন। সিরিশ কাগজ ব্যবহার করতে সমস্যা হলে স্যান্ডার মেশিন ব্যবহার করুন। এতে ধুলা ছড়িয়ে চোখে-মুখে পড়বে না। আগের রং ভালোভাবে তুলতে ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন।
যদি দেয়ালে ফাটল বা গর্ত থাকে, সেগুলো আগে পুডিংজাতীয় কিছু দিয়ে ভরাট করে নিন।
রং করার আগে প্রাইমার লাগিয়ে দেয়াল শুকিয়ে নিন। প্রাইমারকে রঙের বেজ কোটও বলা হয়। বাজারে বেশ কিছু কোম্পানির প্রাইমার পাওয়া যায়। প্রাইমার দেয়ালে রং সুন্দরভাবে বসতে সাহায্য করে, সেই সঙ্গে দেয়ালে কোনো দাগ থাকলে সেটাও ঢেকে ফেলে। দেয়াল ঘষার পর ব্রাশ অথবা রোলার দিয়ে প্রাইমার লাগিয়ে নিতে হবে।