ফুলে রূপ খোলতাই

এ সময়ের ফুলগুলো দিয়ে করা যাবে রূপচর্চা। মডেল: মিমি কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ
এ সময়ের ফুলগুলো দিয়ে করা যাবে রূপচর্চা। মডেল: মিমি কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ

বৃষ্টিস্নাত দিনে জানালায় বসে ফুলের পাপড়ি বৃষ্টি জলে ভাসানোয় মন ভালো হয়। পাশাপাশি নানা রকম ফুলের পাপড়ি কিংবা নির্যাসে হতে পারে রূপের খোলতাইও। প্রাকৃতিক উপায়ে নরম কোমল ত্বক পেতে ফুলের পাপড়ি বা নির্যাসের জুড়ি নেই। ফুলে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান—যেগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় আর ত্বককে রাখে সুস্থ।

এই রোদ এই বৃষ্টির পাল্টাপাল্টি অভিমানে এ সময় ত্বকে নানা রকম প্রভাব পড়ে। এই আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেড়ে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বক থেকে আরও বেশি পরিমাণে তেল নিঃসৃত হয়। বাইরের ধুলাবালু ত্বকে বসে যায়। এতে ব্রণ হয়, কালচে ছোপ পড়ে, র‍্যাশ বেরোয়, ছত্রাক পড়ে ত্বকে নাজেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় প্রয়োজন নিয়মিত ত্বকের যত্ন। এমনই বলছিলেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন। তিনি জানান, গাঁদা, গোলাপ, পদ্ম, বেলি, জবা, কদম—নানান ফুল দিয়েই করা যেতে পারে ত্বকের যত্ন। এতে করে দূর হবে বর্ষাকালীন ত্বকের নানা রকম সমস্যা এবং ত্বকও থাকবে মসৃণ সুন্দর। 

ফুল দিয়ে ত্বকের যত্ন আত্তির ঘরোয়া কিছু উপায়
গাঁদাফুল: ত্বক উজ্জ্বল রাখতে কয়েকটি টাটকা গাঁদা ফুল নিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ২ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

স্বাভাবিক ত্বকের জন্য দুই চা–চামচ দই, দুই চা– চামচ গাঁদা ফুলের পেস্ট এবং ৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার ৩০ মিনিটের মতো মিশ্রণটি ঢেকে রেখে তারপর মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

১ লিটার পানিতে ৭/৮টি গাঁদা ফুলের পাপড়ি ফেলে পানিটা ফুটিয়ে নিন। এবার পানিটা ছেঁকে নিয়ে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ টেবিল চামচ বাদাম তেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন। শুষ্ক ত্বকের টোনার হিসেবে এটি ব্যবহার করুন।

l গাঁদা ফুলের পাপড়ি বেটে নিয়মিত মুখে লাগালে মুখের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।

এ সময়ের ফুলগুলো দিয়ে করা যাবে রূপচর্চা। মডেল: মিমি কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ
এ সময়ের ফুলগুলো দিয়ে করা যাবে রূপচর্চা। মডেল: মিমি কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ



l এক কাপ শুকনো গাঁদা ফুল এবং দুই চা–চামচ জলপাই তেল একসঙ্গে মিশিয়ে গোসলের পানিতে ফেলে গোসল সেরে নিন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল মসৃণ।

l ব্রণ দূর করতে গাঁদা ফুলের পাতার রস মুখে লাগান, কমে যাবে।

বেলিফুল: বেলি ফুল দিয়ে সাধারণত স্বাভাবিক ত্বকের যত্ন করা হয়। বেলি ফুল এবং কাঠবাদাম পেস্ট করে তাতে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

গোলাপ ফুল: গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি করে নিন ময়েশ্চারাইজার। এক কাপ গোলাপজল, আধা কাপ গোলাপের পাপড়ি একটু গরম করে নিন। তারপর পাপড়ি ছেঁকে নিন, ঠান্ডা হলে এর সঙ্গে গ্লিসারিন ও ঘৃতকুমারীর (অ্যালোভেরা) রস মিশিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করুন নিয়মিত।

পদ্ম ফুল: শুষ্ক ও স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে ব্যবহার করুন পদ্ম ফুলের প্যাক। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে করে তুলবে লাবণ্যময়। পদ্ম ফুলের কয়েকটি পাপড়ি বেটে নিয়ে এতে এক চা–চামচ বেসন ও দুই চা চামচ দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

এ তো গেল মুখের যত্নের কথা। হাত–পায়ের ত্বকেরও চাই সঠিক যত্ন। শাহীনা আফরিন সেই উপায়ও বাতলে দিলেন।

হাতের যত্নে: গোলাপ ফুলের পাপড়ি এক টেবিল চামচ, দুই টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার, একটা ডিমের কুসুম ভালো করে পেস্ট করে পুরো হাতে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলে লাগিয়ে নিন ময়েশ্চারাইজার। বর্ষার জলে ভিজে কিংবা কড়া রোদে পুড়ে কালো দাগ পড়ে গেলে এই প্যাকটি ব্যবহারে মরা কোষ উঠে গিয়ে ত্বককে দেয় মসৃণ উজ্জ্বলতা।

গম ভেজে গুঁড়া করে তিন থেকে চার চামচ গাঁদা ফুলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে তাতে আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে হাতে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটিও ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।

পায়ের যত্নে: প্রথমে হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রেখে তারপর মিউমিস স্টোন দিয়ে পা ভালো করে ঘষে মরা কোষ তুলে ফেলুন। তোয়ালে দিয়ে ভেজা পা মুছে লাগিয়ে নিন চার টেবিল চামচ কেউলিন পাউডার, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস, দুটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চিমটি কর্পূর দিয়ে আগেই বানিয়ে রাখা প্যাকটি।

১ কাপ ঘৃতকুমারীর রস বা পদ্ম ফুল ১ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে গরম অবস্থাতেই সেটাতে ১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন এবং ৩ চা–চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে। এটি রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে পায়ে লাগিয়ে নিন। এটি পা ফাটা রোধ করে পা’কে মসৃণ এবং আর্দ্র রাখবে।