সপ্তাহে কত দিন শ্যাম্পু করবেন

আপনার চুল যদি ভীষণ রুক্ষ হয়, তাহলে সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করবেন।
ছবি: কবির হোসেন

শিরোনামে যে প্রশ্নটি করা হয়েছে, তার আসলে একক কোনো উত্তর নেই, যেটি সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে আপনি যদি মনে করেন যে যত বেশি শ্যাম্পু করবেন, ততই চুলের জন্য ভালো, তবে ভুল করবেন। সেটা যদি বাজারের সবচেয়ে ভালো শ্যাম্পুও হয়, তবুও। আবার যদি চুলের ধরন না বুঝেই সপ্তাহে এক দিন বা দুই সপ্তাহে এক দিন শ্যাম্পু করেন, সেটাও ভুল।

নর্থ ক্যারোলাইনা ওয়েক ফরেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর অ্যামি ম্যাকমাইকেল জানান, কিছু না জেনেই প্রতিদিন যদি শ্যাম্পু করেন, তাহলে হয়তো আপনি চুলের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করার ফলে আপনার চুল পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে। চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে ভেঙে যেতে পারে। আবার আপনি যদি চুলের ধরন না বুঝে সপ্তাহে এক দিন বা দুই সপ্তাহে এক দিন শ্যাম্পু করেন, তাহলেও চুলে ময়লা জমে মাথার ভেতরে চুলকানি শুরু হয়ে যেতে পারে। আবার তেলের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে সেখানে ধুলাবালু আটকে চুলে জট পড়ে যেতে পারে।

তাহলে কেমন চুলে সপ্তাহে কত দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, শ্যাম্পু জিনিসটা আসলে কী?

শ্যাম্পু কিছু উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি হয়, যা তেল–ময়লা, মৃত কোষ সরিয়ে চুলকে পরিষ্কার ও রেশমি করে, যাতে আপনি পরিচ্ছন্ন থাকেন, চুল সুন্দর দেখায় আর চুলের স্টাইলও করতে পারেন মনমতো। ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডার্মাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেনিন লুক জানান, সাধারণ স্বল্প মাত্রার পরিষ্কারক যেমন সারফ্যাকট্যান্টস পানির সাহায্যে তেল–ময়লাগুলোকে মাথার ভেতর থেকে ধুয়ে পরিষ্কার করে। সোডিয়াম লরেথ সালফেট, অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট, সোডিয়াম লরেল সালফেট, অ্যালুমিনিয়াম লরেল সালফেট—সাধারণত এগুলোই মূল উপাদান।

এ ছাড়া এর সঙ্গে থাকে পর্যাপ্ত পানি, কোকামাইড বা কোকামাইডোপ্রোপাইলের মতো ফোমিং এজেন্ট। আরও থাকে সিলিকন; যেমন সিমথিকন চুলকে স্নিগ্ধ, সিল্কি আর উজ্জ্বল করে। এগুলোর সঙ্গে প্যানথিনল, ফ্যাটি অ্যালকোহল বা বাদামের তেলও থাকে, যাতে শ্যাম্পু করার পর চুলের স্বাভাবিক ময়েশ্চার ও আর্দ্রতা অটুট থাকে।
এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে, কোন চুলে সপ্তাহে কত দিন শ্যাম্পু করবেন।

যদি আপনার চুল ভীষণ তৈলাক্ত হয়, তাহলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতেই পারেন
ছবি : প্রথম আলো
  • ড.  ম্যাকমাইকেল জানান, এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি জিম করেন, নিয়মিত মাথা ঘামে বা এমন শহরে থাকেন বা এমন পরিবেশে কাজ করেন, যেখানে ধুলাবালু বেশি, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই শ্যাম্পু ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে বেশি।

  • চুলে তেলের মাত্রাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। যদি আপনার চুল ভীষণ তৈলাক্ত হয়, তাহলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতেই পারেন। যদি ভীষণ রুক্ষ হয়, তাহলে সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করবেন। এমনকি দুই সপ্তাহে একবার করলেও অসুবিধা নেই। আর যদি মোটামুটি ঠিকঠাক হয়, তাহলে সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু করলেই হবে। অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবে আপনি সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু করবেন।

  • চুলের টেক্সচারও এ ক্ষেত্রে একটি নিয়ামক। আপনার চুল হতে পারে সোজা, ঢেউখেলানো, কোঁকড়ানো বা খুবই কোঁকড়ানো। হেয়ার ফলিকলের আকৃতির কারণে একেকজনের চুল একেক রকম হয়। আপনার চুলের হেয়ার ফলিকল যত ওভাল বা অ্যাসাইমেট্রিক্যাল হবে, আপনার চুল ততই কোঁকড়ানো দেখাবে।

  • চুল কোঁকড়ানো হলে সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করতেই হবে। আর সে ক্ষেত্রে শ্যাম্পু পরিমাণেও লাগবে একটু বেশি। কেননা, কোঁকড়ানো চুলে ময়লা সহজে ভেতরে ঢুকতেও পারে না, আর ঢুকলে সহজে বেরও হয় না। তৈলাক্ত চুলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করবেন। আর সোজা ঠিকঠাক চুলে সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট।