ঈদে সাজুন জয়ার মতো

ঈদ ঘনিয়ে আসছে। পরিস্থিতি যেমনই থাক, সবাই বছরকার এই উৎসবকে উপভোগ করতে চাইবে। ঘরে থাকলেও তো সাজগোজ করতে হবে। অন্তত বিষাদ কাটাতে। কেমন হবে এবারের ঈদের লুক, তা নিয়ে জল্পনা থাকছে। তবে এই ঈদে নন্দিত অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানে যে লুকে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই সাজে আপনিও হয়ে ‍উঠতে পারেন অনন্য। সেই পরামর্শ দিয়েছেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম

প্রটোটাইপ কসমেটিক্সের প্রথম ব্যবহার দেখা যায় মিসরীয়দের সৌন্দর্যচর্চায়। অনেক মিসরীয়র মমির চেম্বারে কেনিটার ও কিটে পাওয়া গেছে। ক্লিওপেট্রা লিপস্টিক হিসেবে ব্যবহার করতেন কারমাইন বিটল বা গুবরে পোকার রং। সাধারণরা ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহার করত পানিমিশ্রিত কাদা। আজ একটু শেয়ার করলাম ছোট্ট একটা মেকআপ ইতিহাস। মেকআপ আমাদের সাজ–সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ জন্যই সঠিক স্টেপ জানা, নিজের মুখের গড়ন জানা ও সঠিক রং পছন্দ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  

TMz AHMED

এখন আমরা প্রচণ্ড অস্থির একটা সময় পার করছি, কোভিড–১৯ আমাদের প্রাত্যহিক লাইফস্টাইলে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এখন আমাদের অনেক কিছু মেইনটেইন করে চলতে হয়। সব সময় মাস্ক পরে থাকতে হয়। সেই কারণে কিছু ত্বকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে আছে প্রচণ্ড গরম আর রোদের তাপ। দুটিই আমাদের ত্বককে অনেক ড্যামেজ করে, ডি–হাইড্রেট করে শরীর ও ত্বক। স্কিন ডি–হাইড্রেটেড হয়ে গেলে আমাদের শরীরে র‌্যাশ বের হয়। ত্বকের কোষ মরে যায়। এ জন্যই আমাদের প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। আর সেটা যেন আমরা অবশ্য মেনে চলি।

এখন শুরু করি ঈদ স্পেশাল মেকআপ যেটা এক্সক্লুসিভলি জয়া আহসান করবেন ঈদের দিন। শুরু করার আগে কিছু বিষয় অনুসরণ করা উচিত, তাহলে মেকআপকে ত্বকে পারফেক্টলি সেট করতে সাহায্য করে।

প্রথমে ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে, এরপর ত্বক ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিয়ে তুলায় ভালো টোনার নিয়ে পুরা মুখে লাগাতে হবে। এটা ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স যথাযথ রাখতে সাহায্য করে। এরপর ত্বকের জন্য ভালো হবে এমন একটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সেরাম ব্যবহার করতে হবে। সেরাম ত্বকে তৎক্ষণাৎ শুষে নেয় আর ত্বকে পুষ্টি দেয়, আর্দ্র করে। এ ছাড়া ধুলাবালু থেকেও রক্ষা করা করে। শেষ করার আগে ত্বকে অবশ্যই সানস্ক্রিন দিতে হবে। স্কিন সেট হয়ে গেলে আমরা সরাসরি চলে যাব মেকআপে। একটা জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে যে স্কিন সেট করার জন্য আমাদের নিজেদের স্কিন টাইপ এবং কন্ডিশন অবশ্যই বুঝতে হবে।

প্রথম ধাপ হলো ফাউন্ডেশন ব্যবহার। ত্বকের টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে ফাউন্ডেশন বাছাই করতে হবে। বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে ফাউন্ডেশন সুন্দরভাবে সেট করে দিতে হবে। এরপর আমি কন্টুর করে মুখটাকে শার্প করব। সবার মুখের গড়ন কিন্তু ভিন্ন; তাই নিজের প্রোপার কন্টুরিংয়ের জন্য নিজের মুখের গড়নটা ঠিকমতো বুঝতে হবে। তারপর কন্সিলার দিয়ে ডার্ক স্পট ঢেকে দেব এবং হাইলাইট করব মুখকে। বেজকে সেট করব আমরা কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে।

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব। ঈদে আমরা সবাই কিন্তু নতুন কিছু পরি। আমি প্রায় সময় বলি যে ঈদে বেশির ভাগ সময়েই যে কাপড়ই কিনি না কেন, সেটার ওপর একটু সোনালি ছোঁয়া থাকেই। এবারের ঈদ স্পেশালে জয়া আহসান সিলেক্ট করেছেন প্রিয়ালীর একটা হালকা বেবি পিংক রঙের শাড়ি; এর ওপর সুন্দর গোল্ডেন কাজ আছে। তারপর গরমের সময় হালকা রং হচ্ছে পারফেক্ট।

শাড়ির রং, কাজ এবং আজকের স্পেশাল উৎসব মাথায় রেখে চোখের মেকআপটা এমনভাবে করব, যেটা আপনারা সবাই বাসায় সহজে করতে পারবেন। প্রথমে ক্রিজে লাগাব হালকা ব্রাউন কালার, যেটা ম্যাট ফিনিশ হয়। কণা প্যালেট থেকে নিলে ওয়াইল্ড কালারটাই বাছব। চোখের বাইরের কালারটা নিয়েছি আরেকটু ডার্ক ব্রাউন। চোখের পাতায় দিয়েছি একটা রাস্টিক ব্রাউনিশ গোল্ড কালার। যেহেতু শাড়িতে অনেক সোনালি কাজ আছে, তাই চোখের পাতার মাঝখানে হালকা করে দিয়েছি গোল্ড কালার। আর আজকের লুকে এমন কালার ব্যবহার করেছি, যেটা দেখা যায় আমাদের উৎসব আর পোশাকের রঙে একটু না একটু থাকেই।

আর লুকটা আমরা ঈদের দিনের সকালে করতে পারি। কারণ, অনেক সময়ই দেখা যায়, ঈদে আমরা দুটি ড্রেস পরি। দিনে একটা, রাতে একটা। সুতরাং, যখন রাতের ড্রেসটা পরব, তখনও আমরা হালকা সোনালি রং যোগ করে দিতে পারি। তারপর আই মেকআপটা শেষ করব আইলাইনার এবং মাশকারা দিয়ে। এবার হয়ে গেল চোখের মেকআপ।

এরপর ব্যবহার করেছি হাইলাইটার। ত্বকে গ্লো দিতে। চিক বোনের ওপরে ও নাকের ওপরে ব্রাশ দিয়ে দেব গ্লো করার জন্য। এখন লুকটা কমপ্লিট করছি লিপস্টিক দিয়ে। গরমের সময় ম্যাট লিপস্টিকটাই আমি প্রিফার করি। কারণ, এটা দীর্ঘক্ষণ থাকবে। শাড়ির রং হচ্ছে বেবি পিংক। তাই আমরা লিপস্টিক ব্যবহার করব হালকা গোলাপি রঙের।

ঈদ এবং গরম—দুটিই মাথায় রেখে হেয়ারস্টাইলটা করেছি। এটা একবারেই সহজ। সামনে হালকা টুইস্ট ও পেছনে বান। শাড়ির সঙ্গে হেয়ার স্টাইলটা অনেক সুন্দর করে কমপ্লিমেন্ট করে।

জীবনে সমস্যা আসবেই, কিন্তু আমাদের সেটা ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। সবার জীবন যাতে ঝঞ্ঝাটমুক্ত ও সহজ হয়, এ জন্য থাকল আমার তিনটি টিপস, যেগুলো আমি নিজেই অনুসরণ করি।

  • প্রচুর পানি পান করবেন এবং পানি–জাতীয় খাবার খাবেন, যা আপনার শরীরকে হাইড্রেট করবে।

  • বাইরে থেকে এসে খুব ভালো মানের ফেসওয়াশ অথবা ঘরে তৈরি হারবাল প্যাক দিয়ে ফেস ক্লিন করবেন এবং ত্বকে বরফ ঘষবেন। এটা ত্বকে পানির অভাব দূর করবে এবং পোরস মিনিমাইজ করবে।

  • প্রতিদিন হেয়ার ওয়াশ করলে মাইল্ড এবং প্রোটিন বেজড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। কন্ডিশনার অবশ্যই লাগাবেন।

এই ছোট তিনটি টিপস আপনাদের প্রতিদিনের যাপনে যোগ করলে অবশ্যই কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আর অবশ্যই মাস্ক পরবেন। বাইরে থেকে এসে হাত ধুবেন এবং অবশ্যই স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখবেন। মনে রাখবেন, আপনি সুরক্ষিত থাকলে আপনার পরিবারের সদস্যরাও সুরক্ষিত থাকবেন। এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক।