ঈদের আগে এক সপ্তাহ ধাপে ধাপে ত্বকের যত্ন

ঈদের আগে বাড়তি কাজের চাপ থাকবেই। না চাইলেও চেহারায় চলে আসবে ক্লান্তির ছাপ। ঈদের আগে এক সপ্তাহ যতটা সম্ভব ত্বকের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করুন। চোখের নিচে কালো দাগ, ত্বকে কালো ছোপ, মালিন্য কিছুটা হলেও কমে আসবে। পাশাপাশি ঈদের দিন ত্বকের ওপর মেকআপ বসানোর কাজটাও সহজে করা যাবে। এ যত্ন হোক ধরন বুঝে।

‘রোজার এক মাস অনেক সময়ই নানা কাজে ত্বকের যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত পানি পান, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া ইত্যাদি কারণে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঈদের কিছুদিন আগেই ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া ভালো।’—বলছিলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি।

পরিষ্কার মুখে মাস্ক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। মডেল : মারশিয়া, কৃতজ্ঞতা : শোভন মেকওভার।
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

তৈলাক্ত ত্বক

তৈলাক্ত ত্বকে গ্রন্থির আধিক্য থাকে। তাই প্রচুর তেল বের হয়। এ ধরনের ত্বক পরিষ্কার করার কিছুক্ষণ পরই আবার তৈলাক্ত হয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি বেশ উপকারী। গোলাপজলের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য এটি বেশ ভালো একটি মাস্ক। পরিষ্কার মুখে মাস্ক লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। পরে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস বেশি হয়। তাই নিয়ম করে স্ক্রাবিং করুন। চিনিমধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। হালকা ভেজা ত্বকে হাত ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে। সপ্তাহে দুবার এ স্ক্রাব ব্যবহারে ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডসের প্রকোপ কমে। তবে ব্রণের সমস্যা থাকলে স্ক্রাব না করাই ভালো। ব্রণ এড়িয়ে তারপর স্ক্রাবিং করতে হবে।

ত্বক ভালো রাখতে সাইট্রাস বা টকজাতীয় ফল বেশ সাহায্য করে। লেবুর শরবত, মাল্টা বা কমলার রস, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন। শসার সালাদ খাওয়া যেতে পারে। এতে কাঠবাদাম মিশিয়ে নিলে ভালো। স্বাভাবিক দুধের পরিবর্তে সয়া বা কাঠবাদামের দুধ কাজে দেবে। এ ছাড়া টক দই খেতে পারেন। এতে তৈলাক্ত ভাব কমবে, ত্বক ভালো থাকবে—জানালেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন।

শুষ্ক ত্বকে এমন মাস্ক ব্যবহার করুন, যা ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
ছবি : সুমন ইউসুফ

শুষ্ক ত্বক

শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রেও ঘরোয়া বিভিন্ন উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। শুষ্ক ত্বকে অসময়ে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া মৃত কোষের স্তরও পড়ে দ্রুত। তাই নিয়মিত যত্ন নিন। আলাদা কোনো আভা না থাকায় এ ধরনের ত্বক প্রাণহীন দেখায়। তাই এমন মাস্ক ব্যবহার করুন, যা ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। দুধের সরের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ ও কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ওপরের দিকে হাত ঘুরিয়ে মালিশ করুন পাঁচ মিনিট। এরপর পানির ঝাপটা দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে এই মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করুন। টানা সাত দিন ব্যবহারে ত্বকের শুষ্ক ভাব অনেকটাই কমে আসবে। যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের গরমেও সমস্যা হতে পারে। খাদ্যতালিকায় পানি রাখতে হবে, সঙ্গে তরল খাবার। ফলের রস খাবেন। ভিটামিন এ, ই রয়েছে, এমন খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। পাশাপাশি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খেতে হবে। স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। সরাসরি কম চর্বিযুক্ত দুধ পান করুন।

স্বাভাবিক ত্বকে মসুর ডালের প্যাক লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন।
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

স্বাভাবিক ত্বক

স্বাভাবিক ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। আর্দ্রতা থাকার কারণে খুব শুষ্ক বা তৈলাক্ত হয় না। তবে এ ধরনের ত্বক বয়সের সঙ্গে শুষ্ক হতে শুরু করে। নরম ব্রাশে সাবান বা ফেসওয়াশ লাগিয়ে ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগান। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে রক্ত চলাচল খুব ভালো হয়। চোখের চারপাশে কাঠবাদামের তেল লাগাতে পারেন। ত্বকেও কাঠবাদামসমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করুন। পাকা পেঁপে এ ধরনের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। একটুকরা পাকা পেঁপে নিয়ে সেটা মুখে ও গলায় ঘষে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কমলা লেবুর খোসার বাটা, কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল, খাঁটি মধু একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখমণ্ডলে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। মসুর ডালের বাটা, মধু, কাঁচা দুধ, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে পেস্টের মতো করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতে হবে। গোটা শস্য, মাছ–মাংস, সবজি, ডিম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন। ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যান।