উদ্ভিজ্জ দুধে ত্বকচর্চা

দুধ কেবল প্রাণিজ নয়, উদ্ভিজ্জ দুধও এখন অনেকটাই সুলভ। পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি সৌন্দর্যচর্চায়ও এসব দুধ বেশ কার্যকর।

ছবি: পেকজেলসডটকম, আনস্প্ল্যাশঅলংকরণ: লাইফস্টাইল ডেস্ক

দুধ বললে আমাদের মাথায় প্রথমে আসে গরু বা ছাগলের দুধের কথা। কিন্তু গত এক দশকে দুধের জগতে হয়েছে অনেক সংযোজন। এসব দুধের উৎস কিন্তু কোনো প্রাণী নয়। ভিগান-বিপ্লবের জন্য এখন উদ্ভিজ্জ দুধের চাহিদা আকাশছোঁয়া। রূপচর্চাতেও এরা কম যায় না। পশ্চিমা বিশ্বে এখন অনেক স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড তাদের পণ্য তৈরিতে এসব দুধ কাজে লাগাচ্ছে।

ছবি: প্রথম আলো

পুষ্টিগুণের দিক থেকে উদ্ভিজ্জ দুধ কোনো অংশে প্রাণিজ দুধের চেয়ে কম নয়। ত্বকের নানা সমস্যা সমাধানে এবং সুস্থতায় ঘরোয়া উপায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ দুধ আপনার বিউটি রুটিনে যোগ করতে পারেন অনায়াসে।

আমন্ড দুধ

ছবি: পেকজেলসডটকম

আমন্ড দুধ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্ল্যান্ট বেসড দুধ। ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ আমন্ড ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এর দুধ ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে নানা রকমের সমস্যা সমাধানে বেশ সহায়ক।

অ্যান্টি-এজিং
আমন্ড দুধ ত্বকের অকালবার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুর্দান্ত একটি উপাদান। এর ভেতর বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং ই মিলেমিশে ত্বকে উঁকি দেওয়া বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে।

দুই টেবিল চামচ আমন্ড দুধের সঙ্গে দুই চামচ ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালোমতো আপার মোশনে মুখে লাগাতে হবে। ৩০ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাক শুধু ত্বকের অবাঞ্ছিত বলিরেখাই কমাবে না, সেই সঙ্গে বিভিন্ন দাগ–ছোপ কমিয়ে দেবে উজ্জ্বলতা।

আমন্ড দুধের সঙ্গে প্রয়োজন মতো ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রস, অ্যালোভেরা জেল কিংবা মধু মিশিয়ে তৈরি করে নেয়া যেতে পারে ব্রণ বা ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া রোধের ঘরোয়া প্যাক
ছবি: পেকজেলসডটকম

অ্যান্টি–অ্যাকনে
যাঁরা ব্রণের স্থায়ী সমাধান খুঁজছেন, তাঁরা ত্বকে আমন্ড দুধ লাগাতে পারেন। এতে রয়েছে জিংক। ব্রণের যম হিসেবে যার রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। আরও আছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম, যা ব্রণের প্রবণতা কমায়।

এক টেবিল চামচ আমন্ড দুধের সঙ্গে এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও এক চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে মাস্কটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ভালো ফলের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এ মাস্ক ব্যবহার করুন।

শুষ্কতা কমাতে
আমন্ড দুধে আছে লিনোলেয়িক নামের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা হ্রাস করতে পারে। এ জন্য মুখ ধোয়ার পর আমন্ড দুধ টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

নারকেল দুধ

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতেই কেবল নয়, ত্বকের সুস্থতায় নারকেলের দুধ রাখতে পারে বিশেষ ভূমিকা।

ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমাতে কার্যকর নারকেল দুধ ও অ্যালোভেরা জেল
ছবি: উইকিপিডিয়া

রোদে পোড়াভাব কমাতে
নারকেল দুধ ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমাতে কার্যকর। কারণ, এতে আছে অনেক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এ ছাড়া এটি ত্বকের লালচে ভাব, ফোলাভাবও কমাতে পারে। এ জন্য দুই টেবিল চামচ ঠান্ডা নারকেল দুধের সঙ্গে এক চামচ অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখলেই চলবে।

আর্দ্রতা বাড়াতে
নারকেল দুধ দারুণ ময়েশ্চারাইজিং উপাদান। এটি ত্বকের শুষ্কতার বিরুদ্ধে বেশ শক্ত হাতে লড়াই করতে পারে। এ জন্য এ দুধ কোনো কিছুর সঙ্গে না মিশিয়ে কেবল তুলার প্যাডের সাহায্যে মুখে ব্যবহার করলেও চলবে।

ওট দুধ

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট ওট। এ থেকে যে দুধ হতে পারে, এ সম্পর্কে ধারণা অনেকের কম। পুষ্টিগুণে অতুলনীয় ওট ত্বকের জন্য বেশ ভালো। হাজার বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় এটি রূপচর্চার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ত্বক পরিষ্কারে
প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ওট দুধের জুড়ি মেলা ভার। এতে আছে স্যাপোনিন নামের ক্লিনজিং উপাদান। এটি রোমকূপের বাড়তি তেল ও ময়লা পরিষ্কার করতে পারে। এর জন্য ওট দুধ তুলার সাহায্যে মুখে লাগিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।

ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে ওট দুধ ও টমেটোর রস
ছবি: পেকজেলসডটকম

অতিরিক্ত তৈলাক্ততা রোধে
ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণের ক্ষমতা রাখে ওট দুধে বিদ্যমান অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। দুই টেবিল চামচ ওট দুধের সঙ্গে এক টেবিল চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাক রোজ ব্যবহার করা যেতে পারে।