গরমে চুলের যত্ন
গরমে সবার জীবনই প্রায় অতিষ্ঠ। ঘরে-বাইরে সবখানেই রোদের তাপ। সেই সঙ্গে আছে ধুলাবালু। আবহাওয়ার এই চরম অবস্থার প্রভাব পড়ছে আমাদের চুলে। কারণ, যেখানে তাপ, সেখানেই ঘাম। আর ঘামের সঙ্গে যোগ হয় স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল।
এই তেল-চিটচিটে ঘাম ও বাতাসের ধুলাবালু মিশে চুলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হয়ে দেখা দেয় খুশকি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি। সেই সঙ্গে এদের প্রভাবে চুল পড়তে থাকে। চুল দেখায় রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চুলের বিশেষ পরিচর্যার বিকল্প নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে চুলের যত্নের ধাপগুলো সম্পর্কে।
শ্যাম্পু এবং অন্যান্য
এই পরিচর্যার প্রথম ধাপ চুল পরিষ্কার রাখা। এ জন্য ঘরে থাকলে সপ্তাহে অন্তত চার দিন চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আর বাইরে গেলে অবশ্যই প্রতিদিন শ্যাম্পু দিতে হবে। মাথার ত্বকের ধরন এবং চুলের কোনো সমস্যার ওপর নির্ভর করে এটি বাছাই করা উচিত।
চাইলে প্রাকৃতিক ক্লিনজিং উপাদান দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো রিঠা আর শিকাকাই। আগেকার দিনে যখন শ্যাম্পু ছিল না, তখন সবাই এই দুটি ফল দিয়ে চুল পরিষ্কার করত। এতে চুল পরিষ্কার তো হয়ই, সঙ্গে খুশকি, উকুন, চুল পড়াও কমে যায়। গজায় নতুন চুল।
রিঠা আর শিকাকাই শ্যাম্পু বানানোও খুব সহজ। ১৫-২০টা রিঠার সঙ্গে ৫টা বা ৭টা শিকাকাই কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর এই ভেজানো পানির সঙ্গে আরও কিছু পানি মিশিয়ে চুলায় অল্প তাপে ১৫ থেকে ২০ মিনিট জ্বাল দিলেই তৈরি হয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন প্রাকৃতিক শ্যাম্পু। এ শ্যাম্পু এক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করা যাবে।
রিঠা-শিকাকাই শ্যাম্পু ছাড়াও চুল পরিষ্কার করতে ওট মিল্ক অনেক কার্যকর। এক কাপ ওটসের সঙ্গে দুই কাপ পানি মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয়ে গেল। পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ওট মিল্ক লাগিয়ে পাঁচ মিনিট স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ওটসে আছে সাপোনিন নামের এক প্রাকৃতিক ক্লিনজিং উপাদান, যা স্ক্যাল্পের অবাঞ্ছিত ফ্লেকস ও মৃত কোষ দূর করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করতে পারে সহজে।
চুল শুকানো
চুল পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলতে হবে। আর শুকানোর জন্য ফ্যানের ঠান্ডা বাতাস সবচেয়ে বেশি ভালো। শুধু পানিতে ভেজা চুল নয়, ঘামে ভেজা চুল যত দ্রুত সম্ভব শুকিয়ে ফেলতে হবে। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই ফ্যানের বাতাসে সময় নিয়ে চুল শুকানোকে ঝামেলা মনে করেন। তাই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে চান। এর গরম বাতাস চুল ড্যামেজ করে থাকে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে চাইলে কোল্ড এয়ার অপশন দেখে কিনতে পারেন।
চুলে তেল
এ যুগের বেশির ভাগ মেয়ের চুলে তেল দেওয়াতে অনীহার শেষ নেই। কিন্তু চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবারই উচিত সপ্তাহে অন্তত এক দিন তেল দেওয়া। নারকেল, জলপাই, আমন্ড তেল চুলের জন্য অনেক ভালো। এর বাড়তি পুষ্টি ও সুরক্ষার জন্য মেশাতে পারেন লেবু, আমলকীর রস, পেঁয়াজের রস বা মধু। সব সময় গোসলের আগে তেল দিতে হয়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটই যথেষ্ট মাথার ত্বকের গভীরে তেল পৌঁছানোর জন্য। তেল দিয়ে ১০ মিনিট স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে। এতে এর রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। ভালো ম্যাসাজ স্ট্রেস কমাতে পারে।
চুল ঢাকুন ছাতা বা স্কার্ফে
মহামারির জন্য সবাইকে এখন ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। কিন্তু অতি প্রয়োজনে যদি ঘর থেকে বের হতেই হয়, তাহলে মুখ ঢাকার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকুন চুলও। তাহলে বাইরের ধুলাবালু এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূর্যের মারাত্মক ইউভি রশ্মি থেকে চুলকে বাঁচানো যাবে।
চুলের প্যাক
গরমে মাথা ঠান্ডা রাখতে এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে ঘরে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এর প্রধান উপাদান হিসেবে বেছে নিন অ্যালোভেরা ও মেহেদি।
মেহেদি মাস্ক
দুভাবে মেহেদি মাস্ক বানানো যায়। একটিতে দুই কাপ বাটা মেহেদিপাতার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ চায়ের লিকার যোগ করতে হবে। আর অন্যটিতে দেড় কাপ মেহেদিপাতার সঙ্গে মেশাতে হবে দুই চামচ টক দই, এক চামচ মেথির গুঁড়া এবং সামান্য লেবুর রস। এ সব কটি উপাদান চুলের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারও খুশকি বা চুল পড়া বা রুক্ষতার সমস্যা থাকলে সপ্তাহে একবার এই মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে।
অ্যালোভেরা মাস্ক
অ্যালোভেরার সঙ্গে কিছু না মেশালেও চলে। তবে খুশকির সমস্যা থাকলে লেবুর রস মেশালে এর কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যাবে। তেলের সঙ্গে মিশিয়েও চুলে লাগানো যেতে পারে। এতে চুল হবে সিল্কি, ঘন ও ঝলমলে।