পরিবেশদূষণে অবদান নানা শিল্প খাতই রাখছে। বিশ্বের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিও এর বাইরে নয়। বিভিন্ন বিউটি ব্র্যান্ড প্রতিবছর ৭৭ বিলিয়ন ইউনিট প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদন করে, যার ৭০ শতাংশই শেষমেশ ভাগাড়ে গিয়ে জমে। আর সারা বিশ্বে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৪০ শতাংশ আসে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। এখনই সচেতন না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যা হবে বেশি। এ পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব শুধু জিরো ওয়েস্টের মাধ্যমে।
এসব বিষয় চিন্তা করেই অনেক স্কিন কেয়ার ও মেকআপ ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্টের জিরো ওয়েস্ট প্যাকেজিং ব্যবস্থা চালু করেছে, যা একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও মিনিমাল।
ইকো-ফ্রেন্ডলি কন্টেইনার
বেশির ভাগ পার্সোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট ওয়াটার বেসড। তাই প্রয়োজন হয় লিকপ্রুফ কনটেইনারের। এ জন্য কসমেটিক কোম্পানি বহু বছর ধরে প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে এখন তারা ধীরে ধীরে কনটেইনারের টেকসই বিকল্প ব্যবহার করছে। এগুলো সাধারণত জীবাণুবিয়োজ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। পরিবেশবান্ধব উপাদানগুলোর শীর্ষে রয়েছে রিসাইকেবল গ্লাস বা কাচ, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সিলিকন, বাঁশ ইত্যাদি।
প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে আরও ব্যবহৃত হচ্ছে পোস্ট-কনজুমার রেজিন। রেজিন জৈবযৌগের মিশ্রণে তৈরি একধরনের পলিমার। পোস্ট-কনজুমার রেজিন রিসাইকেল প্লাস্টিক থেকে বানানো হয়। এটি খুবই টেকসই। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই রিসাইকেল রেসিন উৎপাদন করতে ভার্জিন রেসিনের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম গ্রিনহাউস গ্যাস বা কার্বন নিঃসরিত হয়।
মিনিমাল প্যাকেজিং
বিউটি ইন্ডাস্ট্রি অতিরিক্ত প্যাকেজিং কমানোর চেষ্টা করছে। তাই তারা ব্যবহার করছে জীবাণুবিয়োজ্য কাগজ, কাপড়, প্ল্যান্ট বেসড র্যাপ ইত্যাদি। বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেখানে সম্ভব সেখানে আউটার প্যাকেজিং যেমন, বাবল র্যাপ, সেলোফোন বক্স বা অন্যান্য জাঁকালো র্যাপিং থেকে দূরে থাকছে। কিছু লেবেল পরিবেশ রক্ষার খাতিরে আরেক ধাপ এগিয়ে ব্যবহার করছে সিড এমবেডেড কাগজ এবং ব্যাগ। পণ্য হাতে পাওয়ার পর এই ব্যাগ বা র্যাপার মাটিতে ফেলে বা পুঁতে দিলেই হবে। কয়েক দিন পর সেখান থেকে বের হবে শাকসবজির চারা। পরিবেশবাদীদের মতে, এই অভিনব প্যাকেজিংয়ের চেয়ে পরিবেশবান্ধব আর কিছু হতেই পারে না!
লিকুইড=সলিড
অনেক স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে লিকুইড প্রোডাক্টের সলিড ভার্সন উৎপাদন করছে। এসবের প্যাকেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জীবাণুবিয়োজ্য কাগজ। কিছু লেবেল তো মোড়কের ধারেকাছেও যাচ্ছে না। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট থেকে শুরু করে ময়েশ্চারাইজার, ফেসিয়াল স্ক্রাব, এমনকি সানস্ক্রিনও পাওয়া যাচ্ছে বার আকারে। এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করা সম্ভব।
নেকেড প্যাকেজিং
কিছু ব্র্যান্ড নেকেড বা জিরো প্যাকেজিংয়ের মতো বেশ সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রদূত যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরিবেশবান্ধব প্রসাধন ব্র্যান্ড ‘লাশ’। তারাই প্রথম ১০০ ভাগ প্যাকেজিং–ফ্রি প্রোডাক্ট নিয়ে আসে বাজারে। এখন অনেক ব্র্যান্ডের নেকেড প্রোডাক্টের আলাদা রেঞ্জ আছে। এসব পণ্যের ভেতর আছে বাথ বোম্বস, বাথ অয়েল, ম্যাসাজ বারস, শ্যাম্পু বারস, বাবল বারস, শাওয়ার জেলস এবং আরও অনেক কিছু।
রিফিল স্টেশন
গ্রিন মুভমেন্টে সাড়া দিয়ে অনেক বিউটি ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে রিফিলেবল প্যাকেজিং সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে পণ্য ফুরিয়ে গেলে বোতল বা টিউবটি রিফিল স্টেশনে দিলে ব্র্যান্ডগুলো আবার রিফিল করে দেবে। এটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এই প্যাকেজিং সিস্টেমটি শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, সাশ্রয়ীও বটে। অনেক নামকরা লেবেল, যেমন: ব্লিচ লন্ডন, লে লাবো, আওয়ারগ্লাস, আলিমা পিওর, লকসিটান তাদের পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিয়ে আসছে। স্কিন কেয়ার বা মেকআপ প্রোডাক্টই শুধু নয়, অনেক পারফিউম, ডিওডোরেন্ট ব্র্যান্ডও রিফিলের ব্যবস্থা করেছে।
মাল্টিপারপাস প্রোডাক্ট
এখন বিউটি ট্রেন্ডে মাল্টিপারপাস প্রোডাক্ট খুবই জনপ্রিয়। অনেকগুলো আলাদা মেকআপ বা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট না কিনে এগুলো ব্যবহার করা যায়। সৌন্দর্যচর্চা পণ্যে মাল্টিপারপাস কনসেপ্টটি কিন্তু একদম নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড এমন পণ্য উৎপাদন করছে। এসবের ভেতর রয়েছে শ্যাম্পু প্লাস কন্ডিশনার, ময়েশ্চারাইজার প্লাস সানস্ক্রিন, হোল বডি (বডি, ফেস, হেয়ার) অয়েল, মাল্টিপারপাস সুদিং বাম ইত্যাদি।
অনেক মেকআপ ব্র্যান্ডের এমন পণ্য আছে। যেমন, চ্যাপস্টিক ব্র্যান্ডের, টোটাল হাইড্রেশন, যা একই সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার এবং টিন্ট হিসেবে কাজ করবে। মিল্ক মেকআপের, লিপ প্লাস চিকস্টিক, অর্থাৎ লিপ কালার কাম ব্লাশঅন।
টারটে ফোর ইন ওয়ান সেটিং মিস্ট, যেটি প্রাইমার, সেটিং স্প্রে, হাইড্রেশন মিস্ট, স্কিন রিফ্রেশার হিসেবে কাজ করে। এমন আরও অনেক মাল্টিপারপাস প্রোডাক্ট আছে বাজারে। যাঁরা পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি টাকা বাঁচাতে চান, তাঁরা নিজেদের বিউটি রুটিনে এমন পণ্য যোগ করতে পারেন।
রিইউজেবল রিমুভার
সৌন্দর্যচর্চায় মেকআপ রিমুভার থাকাটা মাস্ট। রিমুভারের তালিকায় সবার প্রথমেই আসে মাইসিলার ওয়াটার, ক্লিনজিং মিল্কের নাম। তবে এখন রিমুভার হিসেবে টাওয়াল স্টাইল স্পেশাল ক্লথ বেশ জনপ্রিয়।
এটি দিয়ে স্কিন এক্সফোলিয়েটও করা যায়। এ ছাড়া রিইউজেবল কটন প্যাডও আছে, যা কটন এবং টেরি ক্লথ দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো একবার ব্যবহার করে ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যায়। এটি সাশ্রয়ী এবং অবশ্যই সাসটেইনেবল।