ত্বক শুষ্ক না ত্বকের পানিশূন্যতা

একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমাকে একটি প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়, তা হচ্ছে ত্বকের শুষ্কতা ও পানিশূন্যতার মধ্যে পার্থক্য কী। আমরা অধিকাংশ সময়ই জানি না আমাদের ত্বক শুষ্ক না পানিশূন্য। এ জন্য প্রথমেই আমি বলতে চাই ত্বকের শুষ্কতা এবং পানিশূন্যতার মধ্যে পার্থক্যে আছে। শুষ্ক ত্বক হচ্ছে ত্বকের একটি ধরন। আমাদের ত্বক মূলত চার ধরনের: শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র ও স্বাভাবিক ত্বক। আর পানিশূন্যতা হচ্ছে ত্বকের অবস্থা। ত্বকের এমন আরও অবস্থা রয়েছে। এর একটি অবস্থা হচ্ছে পানিশূন্যতা। এর থেকে মুক্তির উপায় আজ জানাব আপনাদের। আমাদের দেশে এখন বর্ষা ঋতু। এই ঋতুতে বৃষ্টির আধিক্য থাকলেও গরম যেন পিছু ছাড়ে না। এ সময় আর্দ্রতাও থাকে বেশি। তবে গরমের তুলনায় কিছুটা কম। তবু এই সময়েও আমাদের শরীরে পানির চাহিদা থাকে অনেক। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে পানির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

শরীরে পানির অভাব থেকে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়তে পারে আমাদের ত্বকেও। পানিশূন্য ত্বকের প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে ত্বকে চুলকানি হওয়া, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, ত্বকে ক্লান্তি ভাব দেখা দেওয়া এবং ত্বকের উপরিভাগে হালকা সাদা সাদা রেখা দেখা দেওয়া। অনেক সময় অনেকে পানিশূন্য ত্বকের লক্ষণ না বুঝতে পেরে মনে করে তাঁর ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরিচর্যা করা শুরু করেন। যেমন অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। কিন্তু তাতে ত্বকে কোনো রকম সুফল না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। সুতরাং প্রথমেই আমাদের নিশ্চত করতে হবে ত্বকের অবস্থা। ত্বক কী শুষ্ক না পানিশূন্য।

পানিশূন্য ত্বকের জন্য এই নির্দেশগুলো মেনে চলতে হবে

১. হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
২. হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এটি ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করে।
৩. কফি পান করা কমাতে হবে।
৪. যে প্রসাধনীতে পানির আধিক্য রয়েছে, তা ব্যবহার করতে হবে।
৫. সাধারণ ব্যায়াম করতে হবে।
৬. যাঁদের ত্বকের পানিশূন্যতা বেশি বা অন্য কোনো কিছুতে পানিশূন্যতা দূর হচ্ছে না, তারা চাইলে একটি বিশেষ ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

মাস্কটি তৈরির পদ্ধতি আমি আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি। যাতে আপনারা বাড়িতে সহজেই এটি তৈরি করতে পারেন। শশা গ্রাইন্ড করে, অ্যালোভেরা জেল, টক দই, মধু এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর হালাকা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সবশেষে হাইড্রেটিং ক্রিম লাগাতে হবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটি হাইড্রেটিং ক্রিম ব্যবহারের কথা বলে থাকি; একটি হলো উইমেন’স ওয়ার্ল্ডের অ্যালো ক্রিম এবং অপরটি হলো ওলে অ্যাকটিভ হাইড্রেটিং ক্রিম।

মনে রাখতে হবে, স্কিন হাইড্রেটেড রাখা আমাদের শরীরের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শরীরে পানি কমে গেলে ত্বকও পানিশূন্য হয়ে পরে এবং শারীরবৃত্তীয় কাজগুলোও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। শরীর ক্লান্ত লাগে, ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বকের স্বাভাবিক কাজও সম্পন্ন হয় না, যেমন ত্বকের নতুন কোষ তৈরি হয় না। মৃত কোষ জমে গিয়ে ত্বকের রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরের ৭৫ শতাংশ পানি। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। আশা করি, শুষ্কতা এবং পানিশূন্যতার বিষয়টি কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছি। আর নিজের যত্ন নেওয়া এবং নিজেকে ভালোবাসা খুবই জরুরি। কারণ, নিজে ভালো থাকলেই আপনার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের ভালো রাখতে পারবেন।

ছবি ও ভিডিও: লেখক