ত্বকের সুপারফুড মিষ্টি কুমড়া

ছবি: পেকজেলসডটকম

অতিপরিচিত একটি ফল মিষ্টি কুমড়া। যদিও আমাদের দেশে এটি সবজি হিসেবেই বেশি পরিচিত। অনেকের কাছে এটি খুব প্রিয় খাবার, আবার কেউ কেউ এর নাম শুনলেই নাক কুঁচকায়। আমাদের দেশে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ভর্তা, ঘণ্ট, মাছ–মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে তরকারির মতো ঝাল পদ করা হলেও, পশ্চিমা দেশগুলোয় কিন্তু এটি দিয়ে তৈরি হয় নানা স্বাদের নানা রকম ডেজার্ট। পুষ্টিবিদদের মতে, এটি একটি সুপারফুড। কিন্তু ফলটির আরও একটি জাদুকরী ক্ষমতা আমাদের অনেকেরই অজানা। তা হলো, এই ফলের রয়েছে বিভিন্ন রকম ত্বকের সমস্যা সমাধানের দারুণ ক্ষমতা। কেবল যাদের মিষ্টি কুমড়ায় অ্যালার্জি রয়েছে, তারা বাদে অন্য সবার সব ধরনের ত্বকের জন্যই এটি খুব ভালো স্কিন কেয়ার ইনগ্রিডিয়েন্ট। তবে শুষ্ক ও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি একটু বেশি উপকারী।

ছবি: উইকিপিডিয়া

মিষ্টি কুমড়ার উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকা। তবে এখন পুরো বিশ্বে এর চাষ হয়। স্কিন কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে এর ব্যবহার খুব বেশি পুরোনো নয়। প্রথমে এর বীজ দিয়ে তৈরি তেল বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর বর্তমানে মিষ্টি কুমড়ার পাল্প দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণের সমস্যা রোধ আর ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া কমাতে এটি খুব ভালো একটি উপাদান। এ ছাড়া হাইড্রেটর ও এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ কাজের।

মিষ্টি কুমড়াকে বলা হয় ভিটামিনের আধার। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই-সহ চার রকম ভিটামিন বি। এগুলো হলো নায়াসিন, রিবোফ্লাভিন, বি সিক্স এবং ফোলেট। এতে আরও আছে জিঙ্ক, নানা ধরনের উপকারী ফ্যাটি এসিড। আছে আলফা ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন আর ক্যারোটিনয়েডস। এসব উপাদানের জন্যই মিষ্টি কুমড়া দেখতে উজ্জ্বল কমলা রঙের। এ ছাড়া রয়েছে ফ্রুট এনজাইমস, আলফা হাইড্রক্সি এসিডস এবং অবশ্যই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এর বীজেও রয়েছে ভিটামিন ই, ফ্যাটি এসিড আর জিঙ্ক।

মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, ফ্যাটি এসিড আর জিঙ্ক
ছবি: পেকজেলসডটকম

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন সি, ও বিটা ক্যারোটিন ত্বকের ইউভি ও ফ্রি র‍্যাডিকেল ড্যামেজ রিপেয়ারে একসঙ্গে কাজ করে এবং ইউভি ও ফ্রি র‍্যাডিকেল ড্যামেজই ত্বকের রিঙ্কেল এবং ক্যানসারের জন্য দায়ী। ভিটামিন এ, সি আর বিটা ক্যারোটিন ত্বককে মসৃণ ও নরম করার পাশাপাশি কোলাজেন বুস্ট করে এজিং সাইন যেমন রিঙ্কেলস, ফাইন লাইনস এবং ডার্ক স্পটস প্রতিরোধ করে। আবার এর ভেতর বিদ্যমান ফ্রুট এনজাইমস আর আলফা হাইড্রক্সি এসিডসও ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। পাশাপাশি নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে থাকে।

মিষ্টি কুমড়া ব্রণের প্রতিকারক হিসেবেও কাজ করে। জিঙ্ক ও ভিটামিন বি–কে বলা হয় ব্রণের যম। নায়াসিন আর ফোলেট ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই রক্ত সঞ্চালন ব্রণ তৈরিতে বাধা দেয়। জিঙ্ক ত্বকের হরমোন লেভেল এবং অয়েল প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে। আর ভিটামিন এ ব্রণের দাগ কমায়। সিবাম আমাদের শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তেল। অতিরিক্ত সিবামের জন্যও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। কুমড়ার বীজে থাকা ভিটামিন ই আর ফ্যাটি এসিড এই তেলের উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। তৈলাক্ত ত্বক আর সেই সঙ্গে ব্রণের সমস্যায় ভুগলে, অনায়াসে ব্যবহার করা যেতে পারে মিষ্টি কুমড়ার বীজসমৃদ্ধ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বা সরাসরি পামকিন সিড অয়েলও ব্যবহার করা যেতে পারে। তেলটি পুরোপুরি ননস্টিক। তাই যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়।

কুমড়ার পেস্ট মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে
ছবি: উইকিপিডিয়া

মিষ্টি কুমড়ায় ভরপুর বিটা ক্যারোটিন কিন্তু ত্বকের অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে খুব কাজের। অন্যদিকে এতে থাকা ভিটামিন আর খনিজ উপাদান শুষ্ক ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।

বাজারে যেসব স্কিন ব্রাইটেনিং আর অ্যান্টি–এজিং ক্রিম ও মাস্ক পাওয়া যায়, সেগুলোয় এখন মিষ্টি কুমড়ার ব্যবহার বেড়েছে। আবার মিষ্টি কুমড়ার এনজাইম কাজে লাগিয়ে বানানো হচ্ছে হাইড্রেটর, ময়েশ্চারাইজার, এক্সফোলিয়েটর, পিলিং মাস্ক। এর এক্সট্রাক্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে টোনারও। কেউ চাইলে প্রসাধনী ব্যবহার না করে, বাসায় তৈরি মিষ্টি কুমড়ার পাল্প, মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি খুব ভালো স্কিন ফুড। এর মলিকুল খুব সূক্ষ্ম, তাই সহজে ত্বকের গভীরে পৌঁছায় এবং ক্লিনিক্যালিও ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।