দেখতে দেখতে একটা বছর শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি ২০২০–এর একদম দ্বারপ্রান্তে। এ বছরটা ছিল একটু অন্য রকম। পৃথিবীর সব মানুষকেই একটা চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে মহামারি পরিস্থিতির কারণে। এ জন্য যাপিত জীবনে এসেছে পরিবর্তন।
পরিবর্তন এসেছে বিউটি ট্রেন্ডেও। সৌন্দর্যচর্চার এমন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, যার প্রভাব থেকে যাবে আগামী কয়েক বছর।
বোল্ড আই মেকআপ
গত কয়েক বছর মেকআপ ট্রেন্ডে ছিল লিপস্টিকের দৌরাত্ম্য। তবে এ বছরের চিত্রটি একদম ভিন্ন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এখন মাস্ক পরতে হচ্ছে। এ জন্য ঢাকা পড়েছে ঠোঁট। সবার নজর তাই চোখের দিকে। সৌন্দর্য সচেতন সবাই এখন নানা রঙে–ঢঙে সাজাচ্ছেন চোখ। এ জন্য চড়া রঙের আইশ্যাডো, মাসকারা, আইলাইনারের কাটতি বেড়েছে। মাস্কের সঙ্গে মিক্সড বা ম্যাচ করে চোখ লাগাচ্ছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, যত দিন মাস্ক থাকবে তত দিন এই ধারার কোনো পরিবর্তন হবে না।
মেকআপে স্কিন কেয়ার
স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে এ বছর বেড়েছে সৌন্দর্য সচেতনতা। আগে সবাই মেকআপ করত শুধু নিজেদের সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে, কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঢাকতে। আর এখন মেকআপ ত্রুটি আড়ালের পাশাপাশি তা সারিয়ে তোলার কাজও করবে। এমন অনেক মেকআপ পণ্যের উত্থান হয়েছে এ বছর। নতুন প্রজন্মের এসব মেকআপের ভেতর আছে বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম, প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত লিপস্টিক, কালার লিপ বাম, ময়েশ্চারাইজারযুক্ত প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, ব্লাশন ইত্যাদি।
মিনিমাল মেকআপ
কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছিল ‘নো মেকআপ-মেকআপ ট্রেন্ড’ এবং মিনিমাল মেকআপ। এবার লকডাউনের জন্যই এদের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে। ঘরবন্দী ও মাস্কবন্দী জীবনে খুব বেশি মেকআপ করার প্রয়োজনীয়তা কমেছে। শুধু জুম মিটিংয়ে বসার আগে অল্প কিছু জিনিসপত্র দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছেন সবাই। হালকা রঙের লিপস্টিক, আইলাইনার, লাইট ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার, কনসিলার এসবের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকছে সাজ।
ন্যাচারাল ব্লাশ
কন্টুরিংকে হটিয়ে তার জায়গা দখল করে নিয়েছে ন্যাচারাল ব্লাশ। ছোটখাটো অনুষ্ঠানে সাজার জন্য মিনিমাল মেকআপের ওপর একটু ব্লাশ লাগানোর চল দেখা যাচ্ছে। গ্লিটারি ব্রোঞ্জ ব্লাশের বদলে চাহিদা বেড়েছ বেবি পিংক, পিচ, লাইট পাম, বেরি, রোজ ব্লাশনের।
স্কিন কেয়ার
সৌন্দর্য সচেতনতা বাড়ায় বেড়েছে স্কিন কেয়ার। ব্যস্ততার জন্য যাঁরা এত দিন নিজের ত্বকের তেমন কোনো যত্ন নিতে পারেননি, তাঁরা লকডাউনের সময়টুকু ঘরে বসেই ত্বকের ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রান্নাঘরে থাকা উপাদান দিয়ে হয়েছে রূপচর্চা। বেড়েছে শিট মাস্ক ও প্রাকৃতিক মাস্কের ব্যবহার।
কয়েক বছর ধরে স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড ছিল অ্যান্টিএজিংকেন্দ্রিক। এ বছরও এর তেমন কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অ্যান্টিএজিং উপাদান হিসেবে রেটিনলের জায়গা দখল করেছে বাকুচিওল। এটি রেটিনলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বিকল্প। তবে রেটিনলের চেয়েও এটি অনেক বেশি ভালো এবং কোমল। সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই। এমনকি গর্ভবতী আর প্রসূতি মায়েরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
অন্যদিকে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে আরও আবির্ভাব হয়েছে নায়াসিনামাইডের। এটি একধরনের ভিটামিন বি৩। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায় এবং অসামঞ্জস্যতা দূর করে। পাশাপাশি অ্যাকনে, রোজেশিয়া, ইনফ্ল্যামেশনের মতো ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করে। স্কিন এক্সপার্টদের মতে আগামী বছরগুলোতে মেকআপ প্রোডাক্টেও নায়াসিনামাইডের ব্যবহার হবে।
হেয়ার ট্রেন্ড
হেয়ার ট্রেন্ডে ছিল অনেক চমক। স্যালন বন্ধ তাই ঘরই হয়ে উঠেছিল স্যালন। ইউটিউব দেখে চুল কাটা থেকে শুরু করে রং করা সব হয়েছে বাসার ভেতর। চুল কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। সে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে নিজেদের মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করাও একটা ট্রেন্ডে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েদের ছোট চুল (যেমন ফ্রেয়া বেহা এরিকসেনের বব) আর ছেলেদের বড় চুল রাখার চল শুরু হয়েছে। আর যাঁরা চুল ছাঁটার ধারেকাছেও যাননি, তাঁরা বেলা হাদিদ, হেইলি বিবারের মতো সেলিব্রেটিদের দেখাদেখি চুল সাজিয়েছেন আশি দশকের স্ক্রাঞ্চি দিয়ে।