বিস্ময়কর টি ট্রি অয়েল

অনেকেই জানে গাছটা চা–গাছ। আর সেই গাছ থেকে আহরিত তেল। বাস্তবে সেটা নয়। তবে জেমস কুক সাহেবের বদৌলতে নামটা রয়ে গেছে। তবে নামে যেটাই হোক এই তেলের গুণাগুণ বিস্ময়কর।

চা গাছ নয় এটা মেলালুকা অল্টারনিফোলিয়াছবি: উইকিপিডিয়া

বর্তমানের সৌন্দর্যচর্চায় খুব পরিচিত একটি উপাদান টি ট্রি অয়েল। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সৌন্দর্যসচেতন মানুষদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে এটি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে অনেকেই আসলে জানেন না এ তেলের উৎস টি। বেশির ভাগ মানুষ একে চা–গাছ হতে সংগৃহীত তেল মনে করেন। টি ট্রি অয়েলের আক্ষরিক অর্থ ‘চা–গাছের তেল’ হলেও আদতে এর সঙ্গে চায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

টি ট্রি বা মেলালুকা গাছ
ছবি: উইকিপিডিয়া

এ তেলের আরেক নাম মেলালুকা অয়েল। কারণ, এটি মেলালুকা অল্টারনিফোলিয়া (Melaleuca alternifolia) গাছের পাতা থেকে উৎপাদিত হয়। এ উদ্ভিদটির উৎস অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের উত্তর–পূর্ব উপকূলীয় এলাকায়। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এ গাছের তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সেখানকার লোককাহিনিতে প্রচলিত আছে, স্বর্গের এক দেবতা তাদের এ তেল উপহার দিয়েছেন। ইতিহাসখ্যাত অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জেমস কুক এ গাছের নাম দেন টি ট্রি। কারণ, তিনি অ্যাবঅরিজিনালদের এ গাছের পাতা চায়ের মতো গরম পানিতে ভিজিয়ে পান করতে দেখেছিলেন।

টি ট্রি অয়েল একটি এসেনশিয়াল অয়েল। এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর। এসব গুণকে কাজে লাগিয়ে এ দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা রকমের অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ এবং সৌন্দর্যপণ্য। এ তেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় গত শতাব্দীর ২০ দশকে, যখন অস্ট্রেলিয়ান রসায়নবিদ বৈজ্ঞানিকভাবে এর নানা কার্যকারিতা প্রমাণে সক্ষম হন। আর সত্তর-আশির দশকে ব্যাপক হারে টি ট্রির চাষাবাদ শুরু হয়। আমাদের দেশেও বেশ সুলভ মূল্যে টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল এবং এ দিয়ে তৈরি স্কিন কেয়ার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

টি ট্রি বা মেলালুকা গাছে ফুল ধরেছে
ছবি: উইকিপিডিয়া

টি ট্রি অয়েলের আশ্চর্য গুণাবলির জন্যই কিন্তু স্বর্গের দেবতার উপহারের মিথটি চালু হয়েছে। তাই যদি বলা হয়, ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে চোখের নিমেষেই তাহলে খুব একটা ভুল বলা হবে না।

শুষ্ক ত্বক ও একজিমা

শুষ্ক ত্বকের রুক্ষতা আর নিষ্প্রাণ ভাব দূর করতে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে একজিমার মতো চর্মরোগের প্রবণতা দেখা দেয় বেশি। সে ক্ষেত্রে এ তেল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। একটি মেডিসিন রিপোর্টে বলা হয়, একজিমা সারাতে টি ট্রি তেল জিংক অক্সাইড এবং ক্লোবেটাসোন বিউটারেটের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা ত্বকের জন্য উপকারী এমন ক্যারিয়ার অয়েলের (জলপাই, নারকেল, আমন্ড) সঙ্গে মিশিয়ে এটি মুখে বা আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, প্রতি ১০ থেকে ১২ ফোঁটা ক্যারিয়ার অয়েলের বিপরীতে মাত্র ২ থেকে ৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মেশাতে হবে।

টি ট্রি অয়েল
ছবি:িউইকিডিমিয়া কমন্স

তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ

অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করতে পারে টি ট্রি অয়েল। পাশাপাশি ব্রণের বংশ নির্বংশ করতে এর কোনো তুলনা হয় না। এ জন্য ব্রণনাশক বিভিন্ন পণ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে এর ব্যবহার বেশ দেখা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে করা একটি ছোট গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যারা সানস্ক্রিনের সঙ্গে টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করেছে তাদের ত্বকের তৈলাক্তটা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তৈলাক্ততা আর ব্রণ কমানোর জন্য এ তেল টোনার, ময়েশ্চারাইজার, ক্যারিয়ার তেল এমনকি ফেসওয়াশের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। খুব বেশি নয়। মাত্র দুই-তিন ফোঁটাই যথেষ্ট।

রোদের পোড়াভাব এবং দাগ–ছোপ কমাতে

টি ট্রি অয়েল এ দুটি সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে উপকারী। এ জন্য দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল বা টমেটোর রসের সঙ্গে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে মুখে মাখুন। আর দাগ–ছোপ যদি বেশ পুরোনো এবং শক্ত হয়ে থাকে তাহলে এ দুটি মিশ্রণের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন।

টি ট্রি অয়েল
ছব: উইকিডাটা

উকুনের সমস্যায়

চুলের উকুনের মতো মারাত্মক সমস্যার দাওয়াই হিসেবে এ তেল ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুই দিন দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে চার-পাঁচ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করুন। চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার আগে তোয়ালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাথায় কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখুন। সপ্তাহে দুই দিন এ পদ্ধতি অবলম্বন করে উকুনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

খুশকি দূর করতে

স্কাল্পে খুশকি হলে শ্যাম্পু করার আগে এর সঙ্গে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। আর চাইলেই বানিয়ে নিতে পারেন খুশকিনাশক হেয়ার মিস্ট। এটি বানাতে লাগবে ৫০০ মিলি পানির সাথে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস আর চার ফোঁটা টি ট্রি অয়েল। স্কাল্পে যেখানে খুশকি হয়েছে সেখানে এ মিশ্রণটি স্প্রে করে লাগিয়ে রাখুন ৪৫ মিনিট। এভাবে খুব দ্রুত খুশকি দূর হবে।