মৌসুমি ফল ও সবজিতে ত্বকের যত্ন

প্রকৃতি হতে পারে আপনার রূপচর্চার বড় অস্ত্র
ছবি: কটনব্রো, পেকজেলস ডট কম

শীত শেষ হয়েছে বেশ অনেক দিন হলো। বসন্ত চলছে। তবে ফাল্গুন শেষ হয়ে চৈত্র মাস এল বলে! বুঝতেই পারছেন, আবহাওয়া একেবারে বদলে গেছে। এ বদলে যাওয়া আবহাওয়ার প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরে এবং বিশেষত আমাদের ত্বকে। খেয়াল করলেই দেখবেন, এখন ত্বক কেমন যেন একটু অন্য রকম হয়ে যায়, কোমলতা থাকে না। একটুতেই নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। ফলে চেহারার লাবণ্য যায় হারিয়ে। ত্বকের এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। আর এ বিশেষ যত্নের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করার কোনোই প্রয়োজন নেই।

বাজারে উঠেছে প্রচুর মৌসুমি ফল
ছবি: প্রথম আলো

এখন বাজারে উঠেছে প্রচুর মৌসুমি ফল। রয়েছে বিভিন্ন রকমের সবজি। এ মৌসুমি ফল ও সবজিই হতে পারে আপনার ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রধান অস্ত্র। খাবার জন্য আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনো ফল কিনি প্রায় প্রতিদিন। সে ফলগুলোরই কিছু অংশ যদি বুদ্ধি করে ত্বকচর্চার কাজে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আপনার ত্বক থাকবে ঝলমলে উজ্জ্বল।

অবশ্য শুধু মৌসুমি ফল ত্বকে ব্যবহার করলেই চলবে না। সেই সঙ্গে জীবনযাপনেও থাকতে হবে ভারসাম্য। রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, এ সময়ে বেশি পরিমাণে পানি পান ও ফল খাওয়া ভালো। পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুবার মুখে ফেসপ্যাক লাগানো অত্যন্ত জরুরি। ভেষজ উপাদান ব্যবহারে ত্বকের যত্ন হয় প্রাকৃতিক উপায়ে। ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তাই ত্বকের সজীবতা ও সৌন্দর্য বাড়াতে হারবাল ফেসিয়ালের গুরুত্ব বেশি।

চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ফল, সবজি ও মসলাজাতীয় উদ্ভিদ ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়।

শসা

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসা খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে
ছবি: প্রথম আলো

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসা খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। শসার রস, সয়াবিন, মধু, আঙুরের পেস্ট লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং তৈলাক্ত ভাব কমে। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ১ চা-চামচ ওটমিল ও পরিমাণমতো শসা পেস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। মুখে ও ঘাড়ে মিশ্রণটি ভালোমতো মেখে ২০ মিনিট রাখুন। চাইলে সঙ্গে মধুও যোগ করতে পারেন। মধু ত্বকে লাবণ্য ধরে রাখবে। ত্বক স্বাভাবিক থাকলে সমস্যাও অনেক কম হয়। মুখের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য শসার চাকা, পাতিলেবুর রস ভালো কাজ করে বলে জানান রাহিমা সুলতানা।

হাত–পায়ের ত্বকে: শসার রস, আলুর রস, মধু হাতে-পায়ে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।

তরমুজ

শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, ত্বকের যত্নেও কার্যকর তরমুজ
ছবি: প্রথম আলো

নমনীয় ত্বকের জন্য ১ টেবিল চামচ তরমুজের রস ও ১ টেবিল চামচ দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই প্যাক আপনার মুখে লাগিয়ে ১০–১৫ মিনিট রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকে ১ টেবিল চামচ তরমুজের রস ও ১ টেবিল চামচ মধু নিন। দুটি উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট ত্বকে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য তরমুজের রস না নিয়ে বরং তরমুজ চটকে সেটা মধু দিয়ে মিশিয়ে আপনার ত্বকে লাগান। ত্বকে লাগানোর ২০ মিনিট পর আপনার মুখ স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

হাত–পায়ের ত্বকে: কয়েক টুকরা তরমুজ ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

কাঁচা হলুদ

ত্বকের যত্নে হলুদ অনন্য
ছবি: প্রথম আলো

শুষ্ক ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ করতে কাঁচা হলুদ, অলিভ অয়েল, লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ, গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। কাঁচা হলুদ, চন্দনগুঁড়া, কমলার রসের মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগালে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা কমে। স্বাভাবিক ত্বকে একটু হলুদগুঁড়া আর মধু মিশিয়ে ১৫ মিনিট রাখার পরামর্শ দেন রাহিমা সুলতানা।

হাত–পায়ের ত্বকে: হাত-পায়ের দাগ দূর করতে হলুদের বিকল্প নেই। কাঁচা হলুদগুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট করে লাগিয়ে নিন।

আঙুরের রস

সব ধরনের ত্বকের জন্য আঙুরের রস উপকারী
ছবি: প্রথম আলো

সব ধরনের ত্বকের জন্য আঙুরের রস উপকারী। কয়েকটি আঙুর হাত দিয়ে আলতো করে পুরো মুখে মিনিটখানেক ঘষে নিন। কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। একেবারেই প্রাকৃতিক ফেসওয়াশের কাজ করবে এটা সব ধরনের ত্বকে। এ ছাড়া আঙুর ম্যাশ করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। রোদের পোড়া ভাব কাটিয়ে এতে আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল হবে।

রাহিমা সুলতানা আরও বলেন, সপ্তাহে এক দিন বাসায় ওপরের ফেসপ্যাকগুলো স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। তবে অতিরিক্ত রূপচর্চা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।