রোদ যখন ভালো লাগা...

রোদ চশমা আর সানস্ক্রিন ক্রিম শীতের রোদে সুস্থ রাখবে ত্বককে। মডেল: নন্দিনী, ছবি: নকশা
রোদ চশমা আর সানস্ক্রিন ক্রিম শীতের রোদে সুস্থ রাখবে ত্বককে। মডেল: নন্দিনী, ছবি: নকশা

‘রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে’—কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিগুলোতে নাবিকদের সম্পর্কে পড়তাম। রোদ পোড়া ভাবটা কি তবে রোমাঞ্চকর জীবনের লক্ষণ? সাজানো-গোছানো শহুরে জীবন ম্যাড়মেড়ে হতে পারে, তবে এ জীবনেও রোদের ছোঁয়ায় সেই ‘তামাটে’ বর্ণের দেখা মেলে। ঝিম রোদ ছুঁয়ে ছুটে চলা মুক্ত জীবন। কিংবা শীত শীত আমেজে রোদে অবগাহন। আরামদায়ক উষ্ণতার শীতের রোদ। জীবনের এমন এক উপভোগ্য প্রাকৃতিক উপাদান থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখার ভাবনাটাও বোকামি। চিকিৎসাবিজ্ঞানও বলে, ভিটামিন ডির জন্য সূর্যের আলো অপরিহার্য। খোলা ছাদ আর বারান্দায় গিয়ে রোদের স্পর্শ পাওয়া হোক কিংবা কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত আসা-যাওয়ার পথে পাওয়া রোদের ছোঁয়া—ত্বকের জন্য ‘অকোমল’ হয়ে উঠতেই পারে। বছরের যেকোনো সময়ের মতোই সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব ত্বকে পড়তে পারে এই সময়েও। 

কী এমন ক্ষতি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল জানালেন, যদি ত্বক সূর্যরশ্মিতে অনভ্যস্ত হয়, তাহলে হঠাৎ রোদে থাকলে ত্বকে পোড়াভাব আসতে পারে। শহুরে জীবনধারায় অভ্যস্তদের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় কিছুদিনের জন্য ঘুরতে গেলে। তবে সূর্যের তাপে আগে থেকেই অভ্যস্ত ত্বকে এ রকম হতে দেখা যায় না, কৃষিজীবীদের ক্ষেত্রে যেমন। বারবার সূর্যরশ্মিতে যাওয়ার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, বলিরেখা দেখা দেয়, ত্বক স্বাভাবিক রং হারায় এবং একটু পুরু হয়ে যায়। তবে এই পুরু ত্বক কিন্তু সবল নয়, বরং তা ভেতরে-ভেতরে দুর্বল। এমনটা হলে সামান্য আঘাত পেলেই বা একটু শক্তভাবে ধরলেই ত্বকে কালশিটে পড়তে পারে, বয়স্কদের ত্বকে অনেক সময় যেমনটা দেখা যায়। দীর্ঘ মেয়াদে ও বেশি মাত্রায় সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

নিরাপদ থাকতে

ত্বকে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা বয়সভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপ কিংবা শীতের হিম হিম দিন, সূর্যরশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচতে সচেষ্ট থাকুন। জেনে নিন অধ্যাপক হরষিত কুমার পালের পরামর্শ—

• সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময়টা সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতে পারলে ভালো।

• রোদে গেলে কালো রঙের পুরু কাপড়ের ছাতা ব্যবহার করুন।

• বাইরে রোদে গেলে সব সময় ফুলহাতা পোশাক পরুন। মাথায় টুপি রাখতে পারেন, তবে টুপির ধারা বা প্রান্তটি চওড়া হতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার সময় ক্রিকেটারদের অনেক সময় এ রকম চওড়া প্রান্তের ঘোরানো টুপি বা হ্যাট পরতে দেখা যায়।

• রোদে চোখের সুরক্ষায় সানগ্লাস ব্যবহার করুন। আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ফিল্টারসমৃদ্ধ সানগ্লাস বেছে নেওয়া ভালো।

• বাইরে বেরোনোর ২০-৩০ মিনিট আগে সান প্রোটেকশন ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে নিন। শুধু মুখেই নয়, শরীরের যতটা অংশ রোদের সংস্পর্শে আসে, ততটা অংশেই এই ক্রিম বা লোশন লাগাতে হবে। এগুলো একবার ব্যবহার করলে মোটামুটি দুই ঘণ্টা কার্যকর থাকে। তাই এ সময়ের পরেও রোদের সংস্পর্শে থাকলে পুনরায় মুখ ধুয়ে নিয়ে সান প্রোটেকশন ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে নিতে হবে।

• ছয় মাস পেরিয়ে গেলে শিশুদেরও বাইরে যাওয়ার আগে একই নিয়মে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন লাগিয়ে দেওয়া ভালো। নিয়মিত ব্যবহারে তা দীর্ঘমেয়াদি খারাপ প্রভাবগুলোর ঝুঁকিও কমাবে।

• এ দেশের আবহাওয়ায় সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশনের সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ন্যূনতম ৩০ হওয়া প্রয়োজন। তবে ত্বকে অন্য কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি এসপিএফ-সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন প্রয়োজন।