শিশুর জন্য তেল

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

সুকুমার রায়ের কবিতায় ‘রেলের গাড়ী তেলের ভাঁড়’ দেখে আহ্লাদীদের হাসি পায়। শিশুর যত্নে আবহমানকাল থেকে চলে আসা তেলের ব্যবহার নিয়ে এ যুগে অবশ্য হাসির সুযোগ নেই। ত্বক ও চুলে প্রচলিত তেল ব্যবহার না করে একটু ‘বিশেষ’ ধরনের তেল ব্যবহার করাটা মন্দ নয় বলেই জানা গেল। ভেষজ তেল শিশুর জন্য উপকারী। এমন তেলের ব্যবহার শিশুর চুল ও ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার জানালেন, শিশুদের ত্বকে ও চুলে তেল মালিশ করা যেতে পারে। তবে ঝাঁঝালো তেল (যেমন, শর্ষের তেল) এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে নবজাতকের জন্য। কোনো তেল ব্যবহারে র‌্যাশ বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটি পরিহার করা উচিত। সমস্যায় পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তেল মালিশ করলে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে, এমন ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই। তবে শিশুদের নাকে তেল দেওয়া ঠিক না, এতে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

১৫ দিন বয়স পার হওয়ার পর শিশুর জন্য তেল ব্যবহার করতে পারেন বলে জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন খান।

নারকেল তেল শিশুর ত্বকের জন্য ভালো। তবে কেনা নারকেল তেল নয়। হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী জানালেন বাড়িতে নারকেল তেল তৈরি ও ব্যবহারের উপায়। নারকেলের দুধ বের করে জ্বাল দিয়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলেই তেল হয়ে যাবে। ঠান্ডা হওয়ার পর ছেঁকে নিয়ে রেখে দিন কাচের বোতলে। বাইরেই অন্তত ৬ মাস ভালো থাকবে। কড়া জ্বালে তৈরি করা হলে আরও বেশি দিন ভালো থাকতে পারে। একসঙ্গে ৬টা নারকেল দিয়ে তেল তৈরি করে রাখলে বারবার কষ্ট করতে হবে না।

হলুদের রস ফুটিয়ে ডিপফ্রিজেও রেখে দেওয়া যায়। এভাবে অন্তত ৬ মাস ভালো থাকে। প্রয়োজনমতো বের করে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর ১ কাপ নারকেল তেল ও ৬ টেবিল চামচ হলুদের রস ফোটাতে হবে। হলদে রং হলে নামিয়ে নিন। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি তেল ৭-১০ দিন বাইরেই সংরক্ষণ করতে পারবেন যেকোনো বোতলে। ৬ মাস বয়স থেকেই প্রতিদিন এই তেল শরীরে মালিশ করতে হবে। ত্বক উজ্জ্বল থাকবে।

শরীরে র‌্যাশ থাকলে ২ কাপ পুদিনাপাতা ও ২ কাপ তুলসীপাতা নিয়ে রস করে নিন। ১ কাপ নারকেল তেলের সঙ্গে রস ফোটাতে হবে। সবুজ রং হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এটিও ৭-১০ দিন বাইরে রাখা যায়।

ত্বক খুব শুষ্ক প্রকৃতির হলে ১ কাপ নারকেল তেল, ১ কাপ জলপাই তেল ও ১ কাপ কাঠবাদাম তেলের সঙ্গে ৯টি হরীতকী (ধুয়ে-মুছে নেওয়া) জ্বাল দিয়ে নিন। হরীতকী গলে গেলে নামিয়ে বোতলে রেখে দিন। এ ধরনের শুষ্কতা প্রতিকার ও প্রতিরোধে নিয়মিত মালিশ করতে হবে। বাইরেই ৬ মাসের বেশি সময় ভালো থাকে।

ত্বকে আরও তেলের পরশ

কাঠবাদামের তেল ১ কাপ, গোলাপের পাপড়ি ১ কাপ ও ৬টি এলাচি (থেতো করে নেওয়া) একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে বোতলে রাখুন। ৩ মাস পর্যন্ত বাইরেই ভালো থাকে। এই তেল ত্বককে ভালো রাখে।

জেনে নিন

এসব পদ্ধতিতে তৈরি তেল শুধু শরীরেই মালিশ করুন, মাথায় নয়।

যেকোনো তেল শরীরে মাখার উপযুক্ত সময় হলো গোসলের পর কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে।

চুলের জন্য

চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সপ্তাহে ২-৩ দিন তিলের তেল মালিশ করিয়ে দিন মাথার ত্বকে। এক-দেড় ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করিয়ে দিন।

১ কাপ কাঁচা আমলকী থেতো করে নিন (আঁটি ফেলে দিতে হবে)। দেড় কাপ পরিমাণ এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেলের সঙ্গে জ্বাল দিন। নিচের দিকটা ধরে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। বোতলে সংরক্ষণ করা যাবে ৩ মাস পর্যন্ত। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং চুল মজবুত করে তুলতে সপ্তাহে ২-৩ দিন মাথার ত্বকে মালিশ করুন। এক-দেড় ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করিয়ে দিন। প্রয়োজনে প্রতিদিন একই নিয়মে ব্যবহার করা যাবে।