হালের ট্রেন্ড জেড স্টোন রোলার

আজকাল সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয় একটি রূপচর্চা অনুষঙ্গ হলো জেড স্টোন বা জেড স্টোন রোলার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে জেড স্টোন রোলার সাম্প্রতিক সময়ে সর্বজনবিদিত হলেও প্রাচীন এশীয় এবং চৈনিক সৌন্দর্যচর্চায় এর ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই।

প্রতীকী ছবিছবি: পেকজেলসডটকম

জেড স্টোন রোলার কী?

জেড বা কোয়ার্টজ পাথর দিয়ে তৈরি হয় জেড স্টোন ও জেড স্টোন রোলার। এই পাথরের রং ফ্যাকাশে সবুজ থেকে ফিরোজা রঙের হতে পারে। এই পাথর মূলত আমাদের ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বকের চাপ কমায় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে প্রশান্ত করে। এতে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।  

জেড স্টোন ও জেড স্টোন রোলার
ছবি: পেকজেলসডটকম

জেড স্টোন রোলার কীভাবে কাজ করে?

প্রাচীন চৈনিক বিশ্বাস অনুযায়ী জেড স্টোন রোলার কোনো সাধারণ পাথর নয়। এর রয়েছে নিরাময়ের ক্ষমতা। অর্থাৎ এটি আমাদের ত্বকের ক্লান্তি দূর করে ত্বককে রাখে ঠান্ডা ও প্রশান্ত। বৈজ্ঞানিকভাবে জেড স্টোন নিয়ে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো গবেষণা না হলেও বহু ব্যবহারকারী এর নিরাময়ের ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন। জেড স্টোন এমনিতে একটি ঠান্ডা পাথর। আমাদের ত্বকে ঠান্ডা বরফ ঘষলে যেমন ত্বক প্রশান্ত হয়, ক্লান্তি দূর হয়, জেড স্টোন ঠিক এই কাজটিই করে। নানা কারণে সারা দিনের পরিশ্রম, দূষণসহ নানা কারণে আমাদের ত্বক ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ত্বকের মধ্যকার রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় ফলে ত্বক ঔজ্জ্বল্য হারায়। জেড স্টোন রোলার বিভিন্নভাবে আমাদের ত্বককে স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও চাপ কমায়

দুশ্চিন্তা, ঘুম ঠিকমতো না হওয়া, ক্লান্তি, দূষণ, রোদ ইত্যাদির কারণে আমাদের ত্বকের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং ত্বকের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। জেড স্টোন রোলার দিয়ে নিয়মানুযায়ী ম্যাসাজ করলে রক্তসঞ্চালন ঠিকঠাক মতো হয় ফলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বের হয়ে যায় এবং ত্বকের ওপর চাপ কমে। এতে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাগে।

মুখের ফোলা ভাব কমায়
ছবি: পেকজেলসডটকম

মুখের ফোলাভাব বা পাফিনেস কমায়

ত্বকের নিচে থাকা রক্তনালিগুলো বাধাগ্রস্ত হলে রক্তসঞ্চালন ঠিকমতো হতে পারে না। ফলে আমাদের মুখমণ্ডল ও চোখ বিশেষ করে চোখের নিচের অংশ ফুলে থাকে। জেড স্টোন রোলার এই বাধাগ্রস্ত নালিগুলোকে স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এতে ফোলাভাব কমে এবং ত্বকে সতেজতা ফিরে আসে।

তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে পারে না। জেড স্টোন রোলারের নিয়মিত ম্যাসাজ শুধুই যে বলিরেখা প্রতিরোধ করে তা নয়, এর পাশাপাশি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রেখে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে দীর্ঘদিন।

ত্বককে রাখে প্রাণময়
ছবি: পেকজেলসডটকম

স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের কার্যকারিতা বাড়ায়

অনেকেই ত্বকে সিরাম, ফেসিয়াল অয়েল, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। জেড স্টোন রোলারের সাহায্যে ম্যাসাজ করলে এই সব স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট খুব ভালোভাবে ত্বকের সব জায়গায় ভালোভাবে মিশে যায় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

কীভাবে ব্যবহার করবেন

জেড স্টোন রোলার কতখানি কাজ করবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করছে আপনারা কীভাবে ব্যবহার করছেন তার ওপর। এই পাথর এমনিতেও বেশ ঠান্ডা, তবে আরও ভালো কুলিং এফেক্ট পেতে অনেকেই ফ্রিজে রেখে এটি ব্যবহার করেন। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার ৫-৭ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় এমনটাই মনে করেন ব্যবহারকারীরা। তবে এটি ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে যা না মানলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন, রোলার কখনোই ওপর থেকে নিচের দিকে নয় বরং নিচ থেকে ওপরের দিকে টানবেন, তা না হলে উল্টো চামড়া ঝুলে যেতে পারে।

ম্যাসাজের আগে অবশ্যই তেল, ময়েশ্চারাইজার বা সিরাম মাখিয়ে নিতে হবে
ছবি: পেকজেলসডটকম

শুকনা ত্বকে এই রোলার ব্যবহার করা যাবে না। ম্যাসাজের পূর্বে অবশ্যই তেল, ময়েশ্চারাইজার বা সিরাম মাখিয়ে নিতে হবে। প্রতিবার ব্যবহারের পর অবশ্যই একে ভালোমতো উষ্ণ পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখতে হবে, যাতে এর দ্বারা কোনো জীবাণু না ছড়ায়। সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বাজারজুড়ে বিশেষ করে অনলাইনে নকল ও নিম্নমানের জেড স্টোন রোলারের ছড়াছড়ি। তাই দাম একটু বেশি হলেও দেখেশুনে আসল পণ্যটি কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, জেড স্টোন রোলার একটি সৌন্দর্যচর্চা সামগ্রী মাত্র, চিকিৎসা উপকরণ নয়। তাই যদি কোনো কারণে ত্বক অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায় বা দীর্ঘদিন ফোলাভাব বিদ্যমান থাকে, তাহলে জেড স্টোন রোলারের ওপর ভরসা না করে ডাক্তার দেখানো উচিত হবে।