গ্রিন টি আপনার জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর
গ্রিন টিকে অনেকেই ‘সুপারড্রিংক’ বলেন। এতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের বিপাক ত্বরান্বিত করে এবং ওজন কমাতেও সহায়ক। ডিটক্স পানীয় হিসেবেও গ্রিন টির সুনাম আছে। কিন্তু এত সব উপকার থাকার পরও এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, গ্রিন টিতে থাকে ক্যাফেইন, ট্যানিন ও ক্যাটেচিন, যা কিছু মানুষের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
দুপুর বা বিকেলে এক কাপ গ্রিন টি অনেকের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত খেলে মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা এবং ঘুমের গন্ডগোল তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার সময় সতর্কতা জরুরি।
গ্রিন টিতে কী আছে, কীভাবে প্রভাব ফেলে
ক্যাফেইন
শরীরকে সতেজ রাখে, মনোযোগ বাড়ায়। তবে বেশি হলে অস্থিরতা, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যা হয়।
ট্যানিন
পাকস্থলীতে হালকা জ্বালা তৈরি করে এবং আয়রনের শোষণ কমাতে পারে।
ক্যাটেচিন
শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে লিভারের ওপর চাপ পড়তে পারে এবং আয়রনের শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
সাধারণত দিনে দু–তিন কাপ গ্রিন টি নিরাপদ। এর বেশি হলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
অতিরিক্ত গ্রিন টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন
অতিরিক্ত ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে।
উদ্বেগ ও অস্থিরতা
হঠাৎ মনোযোগ হারানো বা অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
অনিদ্রা
গভীর রাতে খেলে ঘুম ভালো হয় না।
পেটের সমস্যা
ট্যানিনের কারণে জ্বালা, গ্যাস বা বমি ভাব তৈরি হতে পারে।
দ্রুত বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
যাঁরা হৃদ্রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য বিপজ্জনক।
বুক জ্বলা ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স
অ্যাসিডিটি বাড়ায়, বিশেষ করে খালি পেটে।
মাথা ঘোরা
ক্যাফেইন রক্তচাপে পরিবর্তন আনে, পানিশূন্যতা বাড়ায়।
যাঁদের জন্য গ্রিন টি ক্ষতিকর
১. পেটের সমস্যা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স
পাকস্থলীতে অস্বস্তি বা আলসার থাকলে গ্রিন টি এড়িয়ে চলা উচিত।
২. আয়রনের অভাব বা রক্তস্বল্পতা
উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আয়রন শোষণে গ্রিন টি বাধা দিতে পারে। তাই আয়রনের অভাব থাকলে সতর্ক থাকা উচিত।
৩. অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মা
দিনে দুই কাপের বেশি গ্রিন টি খাওয়া নিরাপদ নয়। ক্যাফেইন শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. ক্যাফেইনে সংবেদনশীল ব্যক্তি
সামান্য ক্যাফেইনেও অস্থিরতা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, হাত-পা কাঁপা বা বিরক্তি হতে পারে।
৫. শিশু
শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র সংবেদনশীল, তাই গ্রিন টি তাদের জন্য ঠিক নয়।
৬. বিভিন্ন শারীরিক অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি
অ্যাংজাইটি, ব্লিডিং ডিজঅর্ডার, হৃৎস্পন্দনে সমস্যা, ডায়াবেটিস, আইবিএস বা গ্লুকোমা থাকলে গ্রিন টি খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা দরকার।
এ ছাড়া গ্রিন টি কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যেমন অ্যাম্ফেটামিন বা নিকোটিন (ধূমপান থেকে প্রাপ্ত নিকোটিন নয়)।
যেভাবে খেলে নিরাপদ
দিনে দু–তিন কাপের বেশি না খাওয়াই ভালো।
খালি পেটে না খাওয়া ভালো।
আয়রন–সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো।
গ্রিন টির পানির তাপমাত্রা খুব বেশি না হলে বা ঠান্ডা করে খেলে হজমে সমস্যা কম হয়।
শেষ কথা
গ্রিন টি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, কিন্তু নিজের শারীরিক অবস্থা ও সীমার মধ্যে থাকলে। যাঁরা সংবেদনশীল, অন্তঃসত্ত্বা, শিশু বা নির্দিষ্ট অসুখে আক্রান্ত, তাঁদের সতর্ক থাকা জরুরি। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে গ্রিন টি যুক্ত করতে হলে জেনে খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
সূত্র: এমএসএন