বিছানার চাদর কত দিন পরপর ধোয়া উচিত
শিরোনামের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক, বিছানার চাদর ধোয়ার সাধারণ চিত্রটি কেমন? ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে এ বিষয়ে আড়াই হাজার মানুষকে নিয়ে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। তাতে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রতি চার মাসে একবার বিছানার চাদর পরিষ্কার করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই অর্ধেকের অধিকাংশই পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই নারীদের অবস্থা কিছুটা ভালো। ৬২ শতাংশ নারী প্রতি মাসে অন্তত একবার চাদর পরিষ্কার করেন। তবে জরিপের সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্যটা হচ্ছে, ১২ শতাংশ মানুষ শেষ কবে বিছানার চাদর ধুয়েছেন তা মনেই করতে পারেন না।
চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাট্রেস ও নিদ্রাপণ্যের ব্র্যান্ড ‘আমেরিস্লিপ’ পরিচালিত একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে ‘বেস্টলাইফ’ পোর্টাল। ফলাফল অনুযায়ী, প্রতি চারজন আমেরিকানের একজন অপরিচ্ছন্ন বিছানায় ঘুমান। প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর পরিষ্কার করেন ৩৭ শতাংশ আমেরিকান। মাসে মাত্র একবার পরিষ্কার করেন ১১ শতাংশ মানুষ। ৮ শতাংশ মানুষের অকপট স্বীকারোক্তি—তাঁরা বছরে মাত্র তিনবার বা তারও কম চাদর ধুয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, সমীক্ষায় এক হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে অর্ধেক ছিলেন পুরুষ এবং অর্ধেক নারী। এখানেও তুলনামূলকভাবে নারীদের ঘন ঘন চাদর ধোয়ার প্রবণতা উঠে এসেছে। বিছানা পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে প্রজন্মগত পার্থক্যও স্পষ্ট। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগের প্রজন্মের চেয়ে বর্তমান প্রজন্ম তথা জেন–জির বিছানা পরিষ্কার রাখার প্রবণতা কম। মাত্র ১৯ শতাংশ জেন–জি সপ্তাহে একবার তাদের বিছানার চাদর পরিষ্কার করে।
আধুনিক বিশ্বের উন্নত দুটি দেশের নাগরিকদের এই অবস্থা। ভাগ্যিস, আমাদের দেশে এ রকম কোনো সমীক্ষা হয় না!
কেন নিয়মিত বিরতিতে বিছানার চাদর ধোয়া উচিত
জানেন কি, আমাদের মোট আয়ুর ঠিক কতটা সময় বিছানায় কাটে? যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষণা অনুযায়ী, আমরা আমাদের জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় বিছানায় কাটিয়ে থাকি—ঘুমে, ঘুমের চেষ্টায়, বিশ্রাম কিংবা নেহাত শুয়ে-বসে। আর কে না জানেন, মনুষ্যজীবনের সর্বোচ্চ শান্তির আশ্রয় বিছানা। ফলে জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় কাটানো নির্ভার আশ্রয়ের স্থানটি যদি রোগজীবাণুর ‘অভয়ারণ্য’ বানিয়ে রাখেন, তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা করা বোধ হয় অনুচিতই হবে। নিয়মিত বিছানার চাদর পরিষ্কার না করলে কী ঘটতে পারে, একনজরে দেখে নেওয়া যাক—
ডাস্ট মাইটস বা ধুলাকীট
ধুলাকীট সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানেন? হ্যাঁ, অতি ক্ষুদ্র এই পোকা খালি চোখে দেখা যায় না। ঘুমের সময় আমাদের দেহ থেকে অসংখ্য মৃত ত্বককোষ ঝরে পড়ে। ঘাম ও ধুলাবালুর সঙ্গে মিশে বিছানার চাদরেই সেগুলো লেগে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মৃত ত্বককোষই ধুলাকীটদের প্রধান খাদ্য। তার মানে, যত দেরি করে আপনি বিছানার চাদর ধোবেন, চাদরে সেই ত্বককোষের পরিমাণও তত বাড়বে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ধুলাকীটদের খাদ্যভান্ডার। এসব কীট অ্যালার্জি, হাঁচি, নাক বন্ধ বা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ বাহক।
জীবাণুর সংক্রমণ
দীর্ঘদিন ধোয়া না হলে চাদরে বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে। এসব জীবাণু শরীরের সংস্পর্শে এলে ঘটতে পারে সংক্রমণ।
ত্বকের অ্যালার্জি
ঘাম, ধুলা ও জীবাণুতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকা চাদর ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রণ ও ফুসকুড়ি
ময়লা চাদরে ত্বকের তেল ও ব্যাকটেরিয়া জমে মুখ বা শরীরে ব্রণ ও ফুসকুড়ি হতে পারে।
দুর্গন্ধ ও ছত্রাক
আর্দ্রতা ও ময়লার কারণে চাদরে ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা দুর্গন্ধ ও ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ঘুমে বিঘ্ন
নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাদর ঘুমের মান কমায়। আরামদায়ক ঘুম নষ্টের পাশাপাশি সৃষ্টি করতে পারে দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতা।
কত দিন পরপর চাদর ধোয়া উচিত
সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর পরিষ্কার করা উচিত। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই এ ব্যাপারে একমত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা–প্রযুক্তিবিষয়ক স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ডার্টি ল্যাব’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. পিট হের মতে, সপ্তাহে একবার না হলেও ‘অন্তত দুই সপ্তাহে একবার’ অবশ্যই বিছানার চাদর ধোয়া উচিত। যুক্তরাজ্যের লেখক, মনোবিদ, স্নায়ুবিজ্ঞানী ও নিদ্রাবিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডসে ব্রাউনিংয়ের পরামর্শও মোটামুটি একই রকম।
উল্লেখ্য, পিট হে এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখার ব্যাপারে জোর পরামর্শ দিয়েছেন। তা হলো, আমাদের দেহ ও ত্বকের ধরন। অনেকের শরীর অনেক বেশি ঘামে। আবার কারও ত্বক একটু বেশি সংবেদনশীল কিংবা অ্যালার্জিপ্রবণ। যাঁদের এরূপ সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের বেশি সময় না ধোয়া বিছানার চাদর ব্যবহার উচিত নয়।
সূত্র: বিবিসি