রাজধানীর বাংলামোটরের বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কে অবস্থিত খন্দকার টাইলসের ব্যবস্থাপক খন্দকার মিনহাজ ইসলাম জানান, বাথরুমে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো কমোড, বেসিন, কল, বাথটাব ও আয়না। ক্রেতারা এসব উপকরণ পছন্দ করার সময় সেগুলোর আকার ও নকশার দিকে নজর দেন বেশি। অনেকে রং নিয়েও থাকেন বিভ্রান্ত। 

কমোড

কমোড বাথরুমের প্রধান অনুষঙ্গ। তাই দোকানে কমোডের বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি। আকার, নকশা ও উপকরণভেদে কমবেশি হয় কমোডের দাম। ‘বাথরুমের আকারের সঙ্গে মিল রেখে কমোডের আকার নির্বাচন করাই ভালো,’ বললেন মায়ের দোয়া টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারির স্বত্বাধিকারী শিপু ব্যাপারী। শহুরে বাড়িতে ওয়েস্টার্ন ধাঁচের কমোডের চাহিদা বেশি। এ ধরনের কমোডগুলো মেঝের সঙ্গে সেট করা যায়। বাজারে সাদা আর ধূসর রঙের কমোডই বেশি। তবে কালো, লাল, খয়েরিসহ ভিন্ন কয়েকটি রঙেও কমোড পাওয়া যায়। দেশের পাশাপাশি ভারত, নরওয়ে, ইতালি, তুরস্কসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ থেকে মার্বেল ও গ্রানাইটের কমোড আমদানি করা হয়, যা বাথরুমের চেহারাকে দিতে পারে অভিজাত লুক।

বেসিন

স্নানঘরের আরেকটি জরুরি উপকরণ বেসিন। স্নানঘরের অন্য উপকরণের চেয়ে বেসিনের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই বেসিন রাখা উচিত দরজার কাছাকাছি। জায়গা বাঁচাতে অনেকে বেসিনের নিচের অংশে ক্যাবিনেট তৈরি করান। ডাইনিং টেবিলের পাশের বেসিন হলে এই ক্যাবিনেটে থালাবাটি রাখা যায় আর স্নানঘরের বেসিন হলে নিচের ক্যাবিনেটে রাখা যায় তোয়ালে, ক্লিনার, সাবান, টিস্যু ও টয়লেট্রিজের জিনিসপত্র।

বাজারে সিরামিক ও মার্বেলের বেসিনের বিক্রিই বেশি। আর বেসিনের রং ও গড়ন বেছে নিতে ঘরটির বাকি আবহ, যেমন কেমন টাইলস, ঘরটি লম্বা না চার কোনা ইত্যাদি বুঝে নেওয়া জরুরি। বেসিনে অভিজাত ভাব আনতে আলাদা করে আজকাল সামনের দিকে ফলস দরজা লাগাতেও দেখা যায়।

কল

বেসিনের কলগুলো খুব বেশি গতির না হওয়াই ভালো। না হলে কল ছাড়ার পরপরই ভিজে কাপড় নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। বেসিনের কল অনেক বেশি লম্বা হওয়াও ভালো নয়। সামনের দিকে বাঁকিয়ে নিচে নেমে যাওয়া কলগুলোই এখন চলতি ধারায় আছে। বড় বেসিনের সঙ্গে ছোট পানির কল দেখতে খারাপ লাগবে। একইভাবে ছোট বেসিনের সঙ্গে বড় কলও বেমানান।

বাজারে লম্বা ধরনের পানির কলগুলোই বিক্রি হয় বেশি। আরেক ধরনের পানির কল পাওয়া যায়, যেটিতে ঠান্ডা ও গরম পানির আলাদা নল থাকে। ঝরনা ছেড়ে গোসল করতে স্নানঘরে নানা রকম ঝিরিঝিরি পানির কল ব্যবহার করতে দেখা যায়। এসবের কোনোটা চার কোনা, কোনোটা গোল, ডিম্বাকৃতিও আছে।

বাথটাব

গ্রামের বাড়ির পুকুর তো আর ঘরে মিলবে না, তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে স্নানঘরে রাখতে পারেন বাথটাব। তবে বাথটাব ব্যবহারের জন্য স্নানঘরটা প্রশস্ত হওয়া দরকার। 

বাথটাবটি কীভাবে রাখবেন, সেটা আগে থেকেই ঠিক করা নেওয়া উচিত। আকৃতি ও নকশাভেদে বাথটাবের ভিন্নতা রয়েছে। দাঁড়িয়ে গোসল করার জন্য আছে স্টুডিও বাথটাব। শাওয়ার এরিয়ায় সাবান-শ্যাম্পু-তেল রাখার জন্য একটা তাক থাকা প্রয়োজন। সুন্দর একটা টাওয়েল রড লাগান। এই রড দরজার গায়েও লাগাতে পারেন।

আয়না

বড় মাপের একটি আয়না রাখলে ছোট বাথরুমও বড় দেখাবে। আয়নার লাইট এমন স্থানে লাগানো উচিত, যাতে চোখ, নাক ও গালের নিচে ছায়া না পড়ে। আয়নার পাশে রাখতে পারেন শেভিং কিট বা প্রসাধনসামগ্রী। আয়নার ফ্রেম হিসেবে লোহা ব্যবহার না করাই ভালো, এতে পানি লেগে জং ধরতে পারে।

দরদাম ও কোথায় পাবেন

দেশি কমোডের দাম ১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আর আমদানি করা কমোডের দাম ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বাথটাবের দাম পড়বে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে, জানালেন হাতিরপুলের কুষ্টিয়া স্যানিটারির বিক্রয়কর্মী জালাল উদ্দিন। বিশেষায়িত কিছু বাথটাবের দাম লাখ টাকার বেশি। কলের দাম ৩৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেসিনের দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আয়না কেনা যাবে ১ হাজার থেকে ২০ হাজারে।

রাজধানীতে এসব স্যানিটারিসামগ্রী কিনতে চাইলে যেতে পারেন গ্রিন রোড, পান্থপথ, হাতিরপুল, কলাবাগান, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তান, মিরপুর, মৌচাক, মগবাজারসহ নানা হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারির দোকানে।