চাকরি কেন বদলাতে হবে
দু–তিন বছর পরপর চাকরি বদলালে নিজের মূল্যও বুঝতে পারবেন। প্রতিবার চাকরি বদলানোর পর নতুন ধরনের দক্ষতা তৈরি হয়। এতে মানসিকভাবে শক্তিশালী বোধ করবেন, যেটা আগের চাকরিতে একেবারেই হয়তো হারিয়ে ফেলেছিলেন।
লিংকডইন বলছে, জেনারেশন জি–র কর্মচারীরা চাকরি বদলাচ্ছেন ঘন ঘন। ২০১৯ সালের তুলনায় ১৩৪ শতাংশ বেশি। অনেকেই বলবেন, জেনারেশন জি বড়ই অস্থির। কিন্তু দু–তিন বছর পরপর চাকরি বদলানোকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, দক্ষতার বৃদ্ধির পাশাপাশি এতে বেতনও বাড়তে থাকে। প্রতিবার চাকরি বদলানোর কারণে নতুন একটি দক্ষতা শেখার পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে ভালো ভালো সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তবে এখানে কথা আছে; চাকরি বদলানোর আগে বুঝে নিতে হবে পরবর্তী ধাপের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। আপনার কাজের মূল্যায়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন কতটুকু। বেতন বৃদ্ধির জন্য এই বিষয়গুলো সহায়তা করবে অনেকখানি। কারণ, বস হিসেবে যিনি বসে আছেন, তিনি আপনার চেয়ে বুদ্ধিমান। যেসব কর্মী শুধু টাকার জন্য চাকরি বদলান, তাঁদের বড় প্রতিষ্ঠান চায় না।
যাঁরা চাকরি করেন আবেগের বশে, সহজে তাঁরা বদলাতে চান না। পুরোনো কাজের জায়গায় একধরনের আরামও খুঁজে পান। কোনো না কোনো অজুহাত খুঁজতে থাকেন চাকরি ধরে রাখার জন্য। অনেকেই মনে করতে থাকেন, পরের বছর তাঁর কাজের মূল্যায়ন হবে বা বেতন ভালোভাবে বৃদ্ধি হবে। ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার কারণেও অনেকে স্থায়ী চাকরিতে থেকে যান। চাকরি বদলানোর ভালো দিক আছে অনেক। সেগুলোই জেনে নেওয়া যাক। একটা পর্যায়ে এসে ভাবুন, আপনি কী ধরনের দক্ষতা চেয়েছিলেন এবং কী ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। চিন্তায় নেতিবাচক ফলাফল বেশি ফেলে—এমন চাকরি বদলে ফেলুন।
১. যখন এক জায়গায় অনেক দিন ধরে কাজ করা হয়, আশপাশের মানুষগুলো আপনার কাজকে নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন। একসময় এটি কাজে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। চাকরি বদলালে নতুন জায়গার নতুন দায়িত্ব উৎসাহ দেয় আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এ মনোবলই হয়তো পুরোনো জায়গায় হারিয়ে ফেলেন অনেকে।
২. প্রতিবার চাকরি বদলানোর পর নতুন ধরনের দক্ষতা তৈরি হয়। এতে মানসিকভাবে শক্তিশালী বোধ করবেন, যেটা আগের চাকরিতে একেবারেই হয়তো হারিয়ে ফেলেছিলেন।
৩. যাঁরা প্রতিনিয়ত চাকরি বদলান, কর্মক্ষেত্রের বিষাক্ত ও সুস্থ পরিবেশ সহজেই তাঁরা ধরে ফেলতে পারেন। পরবর্তী সময়ে বিষাক্ত পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারবেন।
৪. ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তনের কারণে কর্মক্ষেত্রের ছোট-বড় অনেক ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, যেটা পরবর্তী সময়ে চাকরি খোঁজায় সহায়তা করে।
৫. একই চাকরিতে অনেক বছর থাকায় অন্য প্রতিষ্ঠানের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে নেটওয়ার্কও দুর্বল হয়ে পড়ে।
৬. চাকরি বদলানোর যাত্রায় নিজের ব্র্যান্ডিং ভালোভাবে করার কৌশল শিখে যাবেন। সহজেই বুঝতে পারবেন চাকরির বাজারে কী চাইছেন, কারণ সেই পরিবেশেই সবচেয়ে বেশি ঘুরেফিরে বেড়ান আপনি।
৭. একই জায়গায় অনেক দিন থাকলে কর্মক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কাজের চেয়ে তখন অকাজের দিকে মন চলে যায়।
৮. দু–তিন বছর পরপর চাকরি বদলালে নিজের মূল্যও বুঝতে পারবেন।
৯. একই জায়গায় থাকতে থাকতে চাকরির ইন্টারভিউ কীভাবে দিতে হয়, সেটাও অনেকে ভুলে যান।
১০. চাকরি বদলানোর যাত্রায় সহজেই বুঝতে পারবেন, সবাই আপনাকে পছন্দ করেন না। সেটার দরকারও নেই। আপনি তাঁদেরই খুঁজে বের করতে পারবেন, যাঁদের প্রতিষ্ঠানে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োজন।
মানুষমাত্রই অভ্যাসের দাস। এক জায়গায় চাকরি করার অভ্যাস থেকে বের হয়েই দেখুন না; আলোর দেখা পাবেনই।
সূত্র: ফোর্বস