ক্যাম্পাসের পাশেই মায়ের রান্না করা খিচুড়ি নিয়ে বসেন ব্র্যাকের এই ২ শিক্ষার্থী

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ সেমিস্টারের দুই শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ ও মেহরীয়ান মহসীন
ছবি: সংগৃহীত

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের ‘পকেটগেট’ দিয়ে বেরোলেই চোখে পড়ে ফুচকা, চটপটির দোকান। মধ্যাহ্নভোজেও এসব দোকানই অনেকের ভরসা। তবে দুপুরের খাবারটা ঠিকঠাক জমে না বলে অনেকেরই খানিকটা আক্ষেপ ছিল। ক্যানটিন বা আশপাশের রেস্তোরাঁয় তো আর প্রতিদিন খাওয়া যায় না। এসব দেখেই মেহরীয়ান মহসীন ও ইশতিয়াক আহমেদের মাথায় আইডিয়াটা আসে। ‘চল, দুপুরের খাবারের দায়িত্বটা আমরাই নিই।’

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ সেমিস্টারের দুই শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সময় লাগে না। পড়ার বিষয় বিবিএ বলেই হয়তো ব্যবসার প্রতি একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল। কিন্তু শুরুটা কীভাবে হলো? মেহরীয়ান মহসীন বলেন, ‘সবার আগ্রহই আমাদের সাহস দিয়েছে। ক্যাম্পাসের পাশেই অনেক নামীদামি রেস্তোরাঁ আছে; কিন্তু সবাই তো দৈনিক সেখানে খেতে পারে না, চায়–ও না। বাড্ডায় আমাদের নতুন ক্যাম্পাস হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থাও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই আমরা দুজন মিলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিই। ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রথম দিন। একটা সাধারণ টেবিল, তার ওপর বাক্সভর্তি খাবার। ছোট করেই আয়োজন। এক দিন পরই আমাদের খাবার নিয়ে এক আপুর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। সেদিন থেকে সপ্তাহজুড়েই প্রচুর সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে বন্ধু ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে। সবাই এসে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাচ্ছিল। তাদের আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা আসলেই আমার উদ্যোগের জন্য অনেক খুশি।’

আরও পড়ুন

দুজন মিলেই বাজার করেন। রান্না হয় বাসায়। সেই রান্না ক্যাম্পাসের পাশে বিক্রি করেন ইশতিয়াকরা।

কী কী থাকে মেনুতে? ইশতিয়াক বলেন, ‘আপাতত ডিম-খিচুড়ি ও চিকেন-খিচুড়ি। ডিম-খিচুড়ি ৭০, চিকেন-খিচুড়ি ৯০ টাকা, ভর্তা ফ্রি। আমার বাসায় রান্না হয় ডিম ও মুরগির আইটেম। মেহরীয়ানের মা রান্না করেন খিচুড়ি ও ভর্তা। যেহেতু বাসায় রান্না হয়, তাই একদম স্বাস্থ্যকর খাবারই সবাইকে খাওয়াতে পারি। বাইরের তুলনায় দামও সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত ক্রেতা পেয়েছি, যাঁরা প্রতিদিনই খেতে আসেন। মেনুতে খুব শিগগিরই সকালের নাশতাও যোগ হবে।’

ডিম-খিচুড়ি ৭০, চিকেন-খিচুড়ি ৯০ টাকা, ভর্তা ফ্রি
ছবি: সংগৃহীত

নিজ ক্যাম্পাসের পাশেই এভাবে খাবার বিক্রি করার উদাহরণ খুব বেশি নেই। তার ওপর নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজটা আরও চ্যালেঞ্জিং। মেহরীয়ান কীভাবে সাহস করলেন? তিনি বলেন, ‘আমি তো চাই অন্যরাও সাহস পাক। শত শত উৎসাহের মধ্যে কিছু বাজে কথা কানে আসবেই। সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগোনোই চ্যালেঞ্জ। শুরুতে মা রাজি না থাকলেও এখন মা-বাবা দুজনই অনেক সহযোগিতা করেন। এই তো সেদিন, খিচুড়ি তিনবার বাসা থেকে রিফিল করে আনতে হয়েছিল। মা রান্নায় ব্যস্ত থাকায় বাবা ভর্তা করে দিয়েছিলেন। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টারের সময় খুবই আঁটসাঁট। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, কিছু না কিছু লেগেই থাকে। তাই ব্যবসা করার সময় বের করাই ঝামেলা।’ একদম শূন্য থেকে শুরু করায় ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা ছিল। কাজের অভিজ্ঞতায় ধীরে ধীরে সেটা ঠিক হচ্ছে। টেবিলে খাবার রেখে পরিবেশন করাটা মনমতো হচ্ছিল না। জুতসই একটা ফুড কার্টের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন দুই শিক্ষার্থী।

বাজার করা থেকে শুরু করে খাবার তৈরি করে ক্যাম্পাসে আনা, ক্লাস শেষ করেই দৌড়ে খাবারের স্টলে ছোটা, বিকেলে সব গুছিয়ে পরের দিনের প্রস্তুতি নেওয়া…ঝামেলা অনেক। তবু খুশি দুই নতুন উদ্যোক্তা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ, ‘মান ঠিক রেখে খাবার পরিবেশন করার দায়িত্বে সব সময় সৎ থাকতে চাই। এ ছাড়া একটা রেস্তোরাঁ দেওয়া মেহরীয়ান ও আমার অনেক দিনের প্যাশন ছিল। অনেক আগে থেকেই আমরা পরিকল্পনা করতাম, খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপ করতাম। তাই সবার এই সাড়া বজায় থাকলে ভবিষ্যতে এটাকে বড় করে রেস্তোরাঁ দেওয়ার চেষ্টা করব।’