আমরা অপেক্ষা করতাম, শনিবার অন্তত একটু ভালো খাবার পাব
দরিদ্র পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ জন ও ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগিতায় ৮৬ জনসহ মোট ১২৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। ৭৬ জনের এরই মধ্যে স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের অনেকেই দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। ২০২৫ সালেও বৃত্তি পেয়েছেন ১০ জন। পড়ুন তাঁদের একজন—নাটোরের কুমারী সৃষ্টি রানী সরকার–এর কথা।
ছোটবেলা থেকে অভাব দেখে বড় হয়েছি। বাবা কাঠের কারখানায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা মজুরির কাজ করতেন। শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকত, সেদিন করতেন মাটি কাটার কাজ। আমরা অপেক্ষা করতাম, শনিবার অন্তত একটু ভালো খাবার পাব।
এমনও হয়েছে, একটুকরা মাছের জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষায় থেকেছি। নতুন জামার ঘ্রাণ কোনো দিন পাইনি। আত্মীয়স্বজনের পুরোনো জামা পরে বড় হয়েছি। এর মধ্যে বাবা স্ট্রোক করলেন।
বাবার চিকিৎসা, দুই বোনের পড়ালেখার খরচ সামলাতে দিশেহারা অবস্থা। মা যেহেতু নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। সেই আয় আর হাঁস-মুরগি লালনপালন করে চলে কোনোরকম।
এরপরও বিপদের শেষ নেই। একবার গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার পা ভাঙল, বিছানায় পড়ে থাকলাম তিন মাস।
মা বলতেন, ‘ভিক্ষা করে হলেও তোকে পড়াব। প্রয়োজনে মানুষের বাড়িতে কাজ করব।’ কারণ, মা বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার কোনো মরণ নেই, জীবনে কোনো না কোনো সময় কাজে লাগেই।
কিন্তু আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর ‘দুঃসাহস’ মায়েরও ছিল না। এর মধ্যে এইউডব্লিউর খোঁজ পেলাম। বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফেললাম। টিকেও গেলাম।
এখন আমার একটাই লক্ষ্য—বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চাই। বাবাকে কোনো দিন কোনো শার্ট কিনতে দেখিনি, মাকে কোনো দিন কোনো ভালো শাড়ি পরতে দেখিনি। জীবনে এমন কোনো চাকরি করতে চাই, যেন মা-বাবার জন্য দুই হাত খুলে খরচ করতে পারি।