রাতে ভালো ঘুমের পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায‍্য করবে এই ৭ খাবার

নিয়মিত ঘুম আর সঠিক খাবার—এই দুটো আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু অনেক সময় রাতের খাবার খাওয়ার পরও ঘুমানোর সময়ে একটু ক্ষুধা পায়। তখন যদি আমরা অস্বাস্থ্যকর কিছু খেয়ে ফেলি, যেমন চিপস, চকলেট বা ভারী খাবার, তাহলে তো ওজন বাড়বেই, পাশাপাশি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটবে। তবে এমন কিছু পুষ্টিকর ও হালকা স্ন্যাকস আছে, যেসব রাতে ঘুমানোর আগে খেলে ঘুম ভালো হয়, শরীর-মনে প্রশান্তি আসে এবং ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

রাতে ঘুমানোর আগে কলা ও কাঠবাদামের মাখন ও পপকর্ন খেতে পারেন।
ছবি: গ্রাফিকস

১. কলা ও কাঠবাদামের বাটার
রাতে ঘুমানোর আগে কলা ও কাঠবাদামের বাটার খেতে পারেন। কাঠবাদামের বাটারে আছে ম্যাগনেশিয়াম এবং কলায় পাবেন ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। এ দুটি উপাদানই প্রাকৃতিকভাবে পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে বলে ভালো ঘুম হয়। ম্যাগনেশিয়াম কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে।

কর্টিসল হরমোন বেড়ে গেলে রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর পটাশিয়াম হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ঘুম আরও ভালো হয়। কাঠবাদামের বাটারের পরিবর্তে চিনাবাদামের বাটার কিংবা কাজুবাদামের বাটার বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন। তবে বাটারে যেন অতিরিক্ত লবণ বা চিনির ব্যবহার না থাকে।

২. পপকর্ন
যদি আপনি ঘুমানোর আগে কম ক্যালরিযুক্ত স্ন্যাকস খেতে চান, তাহলে পপকর্ন খেতে পারেন। তবে সেটা যেন বাটার, অতিরিক্ত লবণ বা অন্য কোনো টপিং ছাড়া হয়। পপকর্ন একধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিডকে রক্ত থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

এই ট্রিপটোফ্যান থেকে সেরোটোনিন নামের একটি হরমোন তৈরি হয়, যা আমাদের ঘুমচক্র (সার্কাডিয়ান রিদম) ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সেরোটোনিন ভালো ঘুমের জন্য খুব দরকারি।

আরও পড়ুন
রাতে এসব খাবার খেলে সকালে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়
ছবি: গ্রাফিকস

৩. ভাজা ছোলা
রাতের খাবারের পর যদি আপনার মচমচে কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হয়, তাহলে চিপস, বিস্কুটের পরিবর্তে ভাজা ছোলা বেছে নিতে পারেন। ভাজা ছোলায় থাকে প্রচুর প্রোটিন, যা সহজে হজম হয় এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখে।

ফলে পরদিন সকালে আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগবে না। এই পদ্ধতি নিয়মিত মানলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৪. দই ও ব্লুবেরি
দই ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এই ক্যালসিয়াম শরীরকে ট্রিপটোফ্যান নামের একটি উপাদান থেকে মেলাটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যে কারণে ঘুম গভীর হয়। দইয়ে থাকে প্রচুর প্রোটিন, বিশেষ করে কেসিন নামের একধরনের প্রোটিন। এটা ধীরে হজম হয়, ফলে রাতে খেলে সকালে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে না।

এতে সকালের নাশতায় বেশি পরিমাণে খাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। অন্যদিকে ব্লুবেরিতে আছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীর ও মস্তিষ্ককে প্রশান্ত রাখে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। ব্লুবেরির বদলে স্ট্রবেরি বা টার্ট চেরি খেতে পারেন। স্ট্রবেরিতেও অনেক ভিটামিন, ফাইবার ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের জন্য খুব উপকারী।

যাঁরা ইনসমনিয়ায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এই খাবারগুলো উপকারী
ছবি: গ্রাফিকস

৫. গমের আটার টোস্ট ও হুমাস
গমের আটায় থাকে ম্যাগনেশিয়াম, যা প্রাপ্তবয়স্কদের ভালো ঘুমে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাঁরা ইনসমনিয়ায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এটা উপকারী।

আর হুমাস তৈরি হয় ছোলা দিয়ে, আর ছোলায় থাকে বি ভিটামিন। এই ভিটামিন শরীরকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।

৬. দারুচিনি ও ওটমিল
ওটমিল হলো ওটস দিয়ে তৈরি একটি হালকা খাবার, এতে থাকে প্রাকৃতিক মেলাটোনিন, যা ঘুম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ওটস একধরনের স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক খাদ্যশস্য, অর্থাৎ খুব কম প্রক্রিয়াজাত খাবার।

এতে থাকে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার। তবে ওটসের ক্যালরি একটু বেশি, তাই যদি আপনি ওজন কমাতে চান, তাহলে অল্প পরিমাণে খাবেন। ওটমিল খাওয়ার আগে এর ওপর সামান্য দারুচিনিগুঁড়া ছিটিয়ে নিতে পারেন। দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এতে ক্ষুধা, ওজন ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রাতে একমুঠো বাদাম খেলে ঘুম ভালো হবে

৭. একমুঠো বাদাম
কাঠবাদাম ও আখরোট ক্ষুধা কমায় এবং ঘুম ঘুম ভাব বাড়ায়। কারণ, এতে আছে প্রাকৃতিক মেলাটোনিন, প্রোটিন ও ম্যাগনেশিয়াম। তবে বাদাম খাওয়ার সময় লবণ না খাওয়াই ভালো; কারণ, অতিরিক্ত লবণ ঘুমচক্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

পাশাপাশি ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘুমানোর আগে মাত্র এক আউন্স (প্রায় একমুঠো) পরিমাণের বেশি বাদাম না খাওয়াই ভালো।

সূত্র: মেরাকি লেন ডটকম

আরও পড়ুন