ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বসে লিখি, পড়ে সারা বিশ্বের মানুষ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষে করপোরেট দুনিয়ায় চাকরি থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্স কাজেও সফল হচ্ছেন অনেক তরুণ। পড়ুন এমনই একজন—শামীম আহাম্মেদ এর গল্প। তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন। কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন শামীম?

শামীম আহাম্মেদ
ছবি: সংগৃহীত

ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানে পড়ে কী হবে? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ আছে নাকি? এমন কত প্রশ্নের যে মুখোমুখি হয়েছি। আর এখন? একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির প্রধান হিসেবে কাজ করছি। ফোর্বস স্বীকৃত স্টার্টআপ এসভিআরএফে গ্রোথ হ্যাকার হিসেবে কাজ করেছি। এ ছাড়া বিদেশি স্টার্টআপ মাইবুক জেট্রান, টোলিন্ডো ডেলিভারিতে কাজ করেছি।

আরও পড়ুন

আমার জন্ম ঝিনাইদহে। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে দাখিল (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এর পর থেকেই আমি প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করি ইউএনডিপি আউটসাইড কমিউনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এরপর কী করব না–করব ভেবে উচ্চমাধ্যমিকে কলেজে ভর্তি হই। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যারিয়ার কী হবে, বড় হয়ে কী হব, এসব দুশ্চিন্তা সামনে থাকত সব সময়। গ্রামে বসে কি আর সহজে প্রোগ্রামিং শেখা যায়? নানা কষ্টের মধ্যেই চলছিল কলেজের পড়ালেখা।

উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হলো না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আমার বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে মেধাতালিকায় প্রথম হই। তারপরও মানুষের কাছ থেকে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে। তখনই একরকম জেদ চেপে যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করি। সব রকম তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন আমার এক কাজিন।

যে আমি আজীবন মানবিক নিয়ে পড়েছি, সেই আমিই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম। আমাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাসে বিভাগীয় প্রধান শফিউল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের সবকিছু শেখাবে না। তোমার সামনে দুনিয়া পড়ে আছে, তোমাকেই তোমার পথ খুঁজে নিতে হবে।’ সেই পথেই পা বাড়িয়ে দক্ষতা অর্জন করতে থাকি। স্নাতক শেষ হয় ২০১৮ সালে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট থাকলেও আমি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ২০১৫ সাল থেকেই নিয়মিত কাজ করেছি। ২০১২ সালে আমি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আয়োজিত ন্যাশনাল বেসিক স্কিল টেস্টে ঝিনাইদহ অঞ্চলে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলাম। স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় এডেক্স থেকে ক্লাইমেট অ্যান্ড এনার্জি চ্যালেঞ্জের ওপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষায়িত কোর্স করি। ২০১৮ সালের পর স্নাতকোত্তরে ভর্তি হলেও করোনার কারণে এখনো সেশনজটে আটকে আছি। সবকিছু ঠিক থাকলে স্নাতকোত্তর এ বছর শেষ হবে। জট যতই থাকুক, আমি থেমে থাকার পক্ষে নই। ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছি, এখনো আমি নিজেকে এগিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত শিখছি। পাশাপাশি আমি অনলাইন প্রশ্নোত্তরের সাইট কোরাতে নিয়মিত লেখালেখি করি। ইংরেজি ভাষায় আমার লেখা এখন পর্যন্ত ১৮ লাখের বেশিবার পড়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠক আমার লেখা পড়েন। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার মানুষ হিসেবে আমার জন্য ব্যাপারটা দারুণ।

শুধু নিজেই শিখছি, তা নয়। অন্যদেরও শেখানোর চেষ্টা করছি। বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা প্রশাসন ও জাইকার অর্থায়নে প্রশিক্ষক হিসেবে সাড়ে তিন শর বেশি তরুণকে প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে তাঁরা যেন ঝড়ে না পড়েন, কর্মবিমুখ হয়ে না পড়েন, সে জন্যে তৈরি করার চেষ্টা করছি। পড়াশোনা নিয়ে বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের প্রশ্নের মুখে পড়েছি সব সময়। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষের দলে নই। আমি সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে কেউ কি আমাকে থামাতে পারবে?