ঢাকায় ২৩ বছরে ফ্ল্যাটের দাম কত গুণ বেড়েছে জানেন?
২০০০ সালে মিরপুরে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। গত ২৩ বছরে এই এলাকার ফ্ল্যাটের দাম কমপক্ষে ৪ দশমিক ৬ গুণ বেড়েছে। এখন মিরপুরে প্রতি বর্গফুট ৭ হাজার টাকার নিচে ফ্ল্যাট পাওয়া কঠিন। এই এলাকায় প্রতি বর্গফুট ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে ফ্ল্যাট বিক্রি করছে বেশ কিছু আবাসন প্রতিষ্ঠান।
মিরপুরের মতো রাজধানীর সব এলাকার ফ্ল্যাটের দামই গত ২৩ বছরে কয়েক গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। অবশ্য মিরপুরের চেয়ে ফ্ল্যাটের দাম বেশি বেড়েছে বারিধারা, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী ও লালমাটিয়া এলাকার।
ফ্ল্যাটের উচ্চ মূল্যের জন্য মানুষের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং জমির আকাশছোঁয়া দামকে সামনে আনেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, যেসব এলাকায় নাগরিক সুযোগ–সুবিধা ভালো, সেসব এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। যেমন মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মিরপুরে ফ্ল্যাটের চাহিদা বেড়েছে। তাতে ফ্ল্যাটের দামও বাড়ছে।
ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, লালমাটিয়া, মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কলাবাগান, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মণিপুরিপাড়া, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচায়।
আবাসন প্রতিষ্ঠান শেল্টেকের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে ঢাকায় ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৯২। ১০ বছর পর গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৯ টাকা। ২০১০ সালে গড় দাম দাঁড়ায় সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তারপর চাহিদার তুলনায় ফ্ল্যাটের জোগান বেশি হওয়ায় দাম কমে যায়। ফলে ২০১৫ সালে ঢাকায় ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল ৯ হাজার ৯১ টাকা।
২০০০ সালে গুলশানের ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল সবচেয়ে বেশি, ২ হাজার ৪৫০ টাকা। বর্তমানে অভিজাত এই এলাকার প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকায়। তার মানে গত ২৩ বছরে গুলশানে ফ্ল্যাটের দাম কমপক্ষে ৭ দশমিক ৩৪ গুণ বেড়েছে। সড়ক ও আবাসন প্রতিষ্ঠানভেদে ফ্ল্যাটের দাম কমবেশি হয়ে থাকে। দক্ষিণ গুলশানের তুলনায় উত্তর গুলশানের ফ্ল্যাটের দাম বেশি বলে জানালেন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
গুলশানের পর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়ার ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। আর লালমাটিয়ায় দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। তার মানে গত ২৩ বছরে ধানমন্ডিতে সাড়ে ৭ গুণ এবং লালমাটিয়ায় সোয়া ৬
গুণ বেড়েছে।
বারিধারায় বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। ২০০০ সালেও অভিজাত এই এলাকাটিতে এই দাম ছিল ২ হাজার ১৫০ টাকা। তার মানে বারিধারায় গত ২৩ বছরে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে কমপক্ষে ১০ গুণ।
আরেক অভিজাত এলাকা বনানীতে ২০০০ সালে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ছিল গড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা। এখন এই এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটে ১৫ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে। অন্যদিকে ২০০০ সালে কলাবাগানে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা।
এ ছাড়া শান্তিনগরে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। মোহাম্মদপুরে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়, শ্যামলীতে ৭ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় এবং উত্তরায় ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৩ বছর আগে এসব এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ছিল ২ হাজার টাকা বা
এর কম।
বৈশ্বিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব জানায়, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৭৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে।
সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের দিক থেকে গুলশানের পরের অবস্থানে রয়েছে ধানমন্ডি, সেখানে তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪টি ফ্ল্যাট। এরপর যথাক্রমে মোহাম্মদপুরে ১৪ হাজার ৮০২টি, মিরপুরে ১২ হাজার ১১১টি, বনানীতে ৮ হাজার ৭৪টি এবং উত্তরায় ৬ হাজার ৭২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।
লেখাটি বর্ণিল বসত (জানুয়ারি ২০২৪) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত