আম্বারীন রেজার খাবার সরবরাহের নতুন সমীকরণ

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ‘ছুটির দিনে’। এবারও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ক্রীড়া, সংগীত, চলচ্চিত্র, ভ্রমণ, ব্যবসা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আট তরুণের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে—গাই তারুণ্যের জয়গান। ব্যবসা বিভাগে পড়ুন আম্বারীন রেজার গল্প

ফুডপান্ডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আম্বারীন রেজা
ছবি: আম্বারীন রেজার সৌজন্যে

অস্ট্রেলিয়ায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি সম্পন্ন করে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ং ও এনআরএমএর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন আম্বারীন রেজা। ডলার থ্রিফটি অটোমোটিভ গ্রুপে বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করার সময় হঠাৎ তাঁর বাবা মারা যান। বড় সন্তান হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে তখন দেশে ফিরে আসেন আম্বারীন। যুক্ত হন রকেট ইন্টারনেট নামের একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যেই ২০১৩ সালে দেশে যাত্রা শুরু করে ফুডপান্ডা।

এই উদ্যোগেরই বাংলাদেশ অংশের ব্যবসায়িক অংশীদার হন আম্বারীন রেজা। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি হিরোর উদ্যোগ ফুডপান্ডা। মাত্র চারজনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির তিনি এখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মাত্র ৯ বছরেই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রযুক্তি, দক্ষতা, সেবার মানসিকতা, সংযুক্ততা আর উৎকর্ষ দিয়ে খাবার সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনার নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে ফুডপান্ডা।

অনেক ছোট বা মাঝারি রেস্তোরাঁ, যারা তাদের দোকানের অবস্থান আর সাজসজ্জার কারণে হয়তো মূল্যায়ন পাচ্ছিল না, তাদের গ্রাহকের কাছে পৌঁছার সুযোগ করে দিয়েছে ফুডপান্ডা। বর্তমানে সারা দেশে ২০ হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ ও দোকান থেকে মাসে লাখো ভোক্তার দুয়ারে খাবার ও গৃহস্থালি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে ২৫ হাজার ডেলিভারি পার্টনার। স্বল্প পুঁজিতে ‘ক্লাউড কিচেন’-এর মাধ্যমে রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি নতুন ধরনের উদ্যোক্তা বা ‘হোম শেফ’, যাঁদের বেশির ভাগই নারী। গত ৯ বছরে ৬০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং রেস্তোরাঁ অংশীদারের ব্যবসাকে ডিজিটালি রূপান্তর করেছেন। তাদের ব্যবসাকে অফলাইন থেকে অনলাইনে এনে ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত করেছে। একটি শক্তিশালী অনলাইনভিত্তিক ডেলিভারি ইকোসিস্টেমের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ডিজিটাল পরিসরে ৯ লাখের বেশি মানুষের জন্য আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা সহজ করতে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ডার্ক স্টোর প্যান্ডামার্ট চালু করে। এ সেবা এখন ঢাকা ছাড়া দেশের বড় বড় শহরেও চালু রয়েছে।

সেবা, ই-কমার্সের বিস্তার, ডিজিটাল সেবার রূপান্তর আর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ২০২২ সালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পুরস্কার পায় আম্বারীন রেজার ফুডপান্ডা। দেশের স্টার্টআপের প্রসার ও বিকাশে অবদান রাখায় ‘সিইও অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ‘বাংলাদেশ সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ডস ২০২২’ গ্রহণ করেন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টিই আম্বারীন রেজাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করে
ছবি: আম্বারীন রেজার সৌজন্যে

আম্বারীন বলেন, তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করে। ৯ বছরে ফুডপান্ডায় যুক্ত হয়েছেন এক লাখের বেশি ডেলিভারি পার্টনার। তাঁদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। তাঁদের জন্য এটি একটি মুক্ত পেশা। নিজের মতো সময় আর সুযোগ বের করে দুই চাকায় ভর করে জীবন বদলানোর সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য ফুড ডেলিভারি করছেন। ঢাকায় এসে চাকরি খোঁজার সময়ও টিকে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে ফুডপান্ডা। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, এখন অনেক নারীও ডেলিভারি পার্টনার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন।

ই-কমার্স ব্যবসায় বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অনেক উন্নতি করছে। তবু আম্বারীন মনে করেন, সম্ভাবনার চেয়ে তা অনেক কম। তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নানামুখী উদ্যোগে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে দিতে কাজ করে যেতে চান তিনি। স্বপ্ন দেখেন প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশের, যেখানে ফুডপান্ডা প্রতিদিন দুই কোটি মানুষের সেবা করতে পারবে।

লেখক: চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার, প্রথম আলো