ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটি হৃদয়ের যত্ন নিন

আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউজ হার্ট, নোউ হার্ট’। সংশ্লিষ্টরা যার বঙ্গানুবাদ করেছেন : ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটি হৃদয়ের যত্ন নিন।

‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ উপলক্ষে অনলাইন গোলটেবিল আলোচনাছবি: প্রথম আলো

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনাটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজে। এই আয়োজনের সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল কার্ডোবিস ও টেমস।

হৃদ্‌রোগের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো বুকব্যথা বা অস্বস্তি। তবে এটি সব সময় একমাত্র উপসর্গ নয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর ওপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করা, মাথা হালকা লাগা, শরীরের ওপরের অংশ যেমন পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি। এমন লক্ষণ এবং এই রোগের নানা দিক নিয়ে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস এম মোস্তফা জামান। গোলটেবিল অনুষ্ঠানটি তিনিই পরিচালনা করেন।

হৃদ্‌রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই হৃদ্‌রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রতিরোধ করতে হবে ডায়াবেটিস। প্রি-ডায়াবেটিসের সচেতনতা থেকে হৃদ্‌রোগ প্রতিহত করা সম্ভব—এমনটাই বলেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক এম এ রশিদ।

নারীরা স্বাস্থ্য সচেতনতায় সব সময় পিছিয়ে—এটা আবারও মনে করিয়ে দেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের নারীদের আসলে দশভুজা হয়ে এত কাজ করতে হয়, স্ট্রেস নিতে হয় যে, সবার সেবা করে তারা নিজেদের দিকে তাকানোর ফুসরত পান না। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উচিত স্ত্রী, মা, বোন ও মেয়ে সবার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। আর নারীরা বুক ধড়ফড়ানি বা কোনো রকম সমস্যা অনুভব করলে অব্যশ্যই পরিবারের সদস্যদের সেটা জানানো উচিত।’

‘হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা খুব ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়, এটা মানুষের হাতের নাগালেই আছে। দরকার সচেতনতার।’ এমনটাই বলেন জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দীন।

এই আলোচনায় বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক ‘হার্ট ফেইলরে’র রোগীদের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘হার্ট যেহেতু আছে, সেটা ফেইলর হবেই। তাই বলে এটা জেনে–বুঝে আমরা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করব? উত্তর অবশ্যই: না। আমাদের সচেতন হতে হবে। হার্টের রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো শারীরিক ব্যায়াম, শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া।’ এ ছাড়া মানুষের শরীরে পরজীবী কৃমির অবস্থানেও হতে পারে এই রোগ—এমন তথ্যও দেন তিনি।

‘হৃদ্‌রোগের প্রধান লক্ষণ হলো বুক ধড়ফড় করা, হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়া।’ ল্যাবএইড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক আ প ম সোহরাবুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে বুক ধড়ফড় এবং যদি মনে হয় হৃৎস্পনদন কমে গেছে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে চলে যেতে হবে।’

হৃদ্‌রোগী হার্টে রিং পরতে হবে নাকি ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে—এর নানা দিক নিয়ে কথা বলেন বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হার্টে ব্লক অনেকের থাকতে পারে। এটা থেকেই হার্ট অ্যাটাক হয়। যখন ব্লক ধরা পড়বে তখন থেকেই ওষুধ খেয়ে এবং জীবনযাত্রার প্রণালি সুশৃঙ্খল করলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।’

‘বাংলাদেশের মানুষের ধারণা, হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। বিষয়টা মোটেও তা নয়।’ বলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতাহার আলী। তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে এই রোগের উন্নত চিকিৎসার প্র্যাকটিস হচ্ছে, এবং সফলভাবে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে—এটা আমাদের বিশ্বাস।’

‘হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার জন্য আমরা দেশের বাইরে ছুটে যাই অনেকেই। এটা একটা সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হতে পারে, এমন ভাবনা থেকেই অনেকে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু এ দেশেই হৃদ্‌রোগের উন্নত চিকিৎসা আছে।’ জোর দিয়ে বলেন বিএসএমএমইউর অধ্যাপক সজল ব্যানার্জি। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, শুধু হার্ট এক্সচেঞ্জের জন্য কেউ চাইলে দেশের বাইরে যেতে পারে।

হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস। এই আলোচনায় সব চিকিৎসকের কথায় ঘুরে–ফিরে তাই উঠে আসে।

সুনির্দিষ্টভাবে জীবনযাত্রা প্রণালি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দিন দিন হৃদ্‌রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বংশগত কারণ ছাড়াও অনিয়মিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, কম শ্রম, ভুল ডায়েট, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি নানা কারণে হৃদ্‌রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বংশগত কারণকে কোনো পরিবর্তন করা না গেলেও উল্লিখিত প্রতিটি কারণকে পরিবর্তন বা সংশোধন করে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম করা, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা, কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হলো হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের কিছু জীবনধারার ব্যবস্থা।’

এসকেএফ ফার্মার নির্বাহী পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভালোবাসা দিয়ে নিজ হৃদয়ের যত্ন নিতে নিয়মিত ওষুধ সেবনে এসকেএফ ফার্মা আছে দেশের মানুষের পাশে। রোগীদের মধ্যে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওষুধে আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন আরও ভালো ওষুধ পায়, সে জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠান।’