অস্ট্রেলিয়ায় বর্ষসেরা সংগীত আয়োজক বাংলাদেশি সিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় গানের জন্য প্রতিবছর দেওয়া হয় ‘দ্য আর্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’। পুরস্কারের ‘ইলেকট্রোঅ্যাকোস্টিক’ বিভাগে এবার বর্ষসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংগীত আয়োজক সিয়া আহমেদ। তাঁর গল্প শোনাচ্ছেন কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় থাকেন সিয়া আহমেদ। আমি সিডনিতে। দুজন দুই শহরের মানুষ, সাক্ষাৎ হওয়াটা কঠিন। ৬ অক্টোবর প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের দূরত্ব ঘুচাল মুঠোফোন।
অবধারিতভাবেই প্রথমে উঠল পুরস্কার প্রসঙ্গ। সিয়া আহমেদ বললেন, ‘বলতে পারেন, ১৫ বছরের পরিশ্রম আর ধৈর্যের স্বীকৃতি এই পুরস্কার।’
সিয়া আহমেদের বয়স ৩২। তাঁর মা শিরিন আহমেদ ভালো গান গাইতেন। মায়ের গুণটা ছোটবেলায় পেয়ে যান মেয়ে। সিয়া বলছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রচুর গান শুনি। মনে আছে, মা সব সময় গুনগুন করে গান গাইত। বাবা বলিউডি সিনেমার গান শুনতে পছন্দ করতেন। অবচেতনেই সংগীত আমার জীবনের বড় একটা অংশ হয়ে গেছে। তবে কখনো সংগীতের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়া হয়নি।’ সংগীতের প্রতি ভালোবাসাটা বড় হতে হতে বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে প্রকাশ পায় সিয়া আহমেদের প্রথম একক অ্যালবাম। নাম রুম সাউন্ড।
সিয়া আহমেদ এখন পুরোদস্তুর সংগীত আয়োজক। অস্ট্রেলিয়ার সংগীতাঙ্গনে গীতিকার, সংগীত পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। বাদ্যযন্ত্র, সুর আর প্রযুক্তির নিপুণ সংযোগে গানের নতুন রূপ দিচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন সংগীতপ্রতিষ্ঠানের জন্যও কাজ করেন। সংগীত সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান আর্ট অর্কেস্ট্রা, ক্যানবেরা কনটেমপোরারি আর্ট স্পেস, পেরামাসালা এবং ক্যাহুটসের জন্য সংগীত পরিচালনা করেন সিয়া। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী রাজ্য সরকারের প্রণোদনাভুক্ত শিল্পীও তিনি। তবে সিয়া বলছিলেন, ‘আমি নিজেকে আগে একজন সংগীতভক্ত মনে করি। তারপর সুরশিল্পী।’
রূপান্তরের গল্প
সিয়া আহমেদের জন্ম সিডনির প্যারামেটায়। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি নরসিংদীর বেলাব উপজেলায়। সিয়ার বাবা রইসউদ্দিন আহমেদ আশির দশকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস শুরু করেন। তবে সিয়ার বয়স যখন চার, তখন ক্যানবেরায় চলে যান।
জন্মের পর সিয়া আহমেদের নাম ছিল শোয়েব আহমেদ। বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে নিজের ভেতর পরিবর্তন অনুভব করেন তিনি। একসময় লিঙ্গ পরিচয় বদলে নিজেকে নারী হিসেবে পরিচিত করে তোলেন। সিয়া আহমেদকে এ জন্য বন্ধুর পথ পেরোতে হয়েছে। যেমনটি বলছিলেন, ‘রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ আর বাংলাদেশি, এই পরিচয় দুটো অস্ট্রেলিয়ার সংগীত জগতে প্রবেশের পথে বড় বাধা ছিল। সেসব বাধা পেরিয়ে নিজের কাজকে সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। এখন নিজের শিকড়কে প্রতিনিধিত্ব করছি। এসব আসলে আমার অর্জন বলে মানি।’