অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের এক নম্বর গুণ আইকিউ নয়, জানাচ্ছেন নিউরোসায়েন্টিস্ট
ছোটবেলা থেকে একটা পরামর্শ সবাই শুনি—‘সময়টা কাজে লাগাও, অহেতুক বসে থেকে সময় নষ্ট করো না’, কিংবা ‘আলসেমি ছাড়ো’। খেয়াল করুন, এসব পরামর্শে সব সময় জোর দেওয়া হয় নিজের সময়টাকে কাজে লাগাতে। কিন্তু এসব পরামর্শ ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত? কারণ, বেশির ভাগ সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রেই মস্তিষ্ক যতটা না কাজে লাগানো উচিত, তারচেয়ে বেশি প্রয়োজন মস্তিষ্ককে সময় দেওয়া।
একটু বিশ্রাম আর মনকে একটু নিজের মতো চলতে দিলে জীবনটা হয়ে ওঠে আরও বেশি সুন্দর ও সফল।
ভেবে দেখেছেন, যেটা সৃজনশীল কাজ, মানে লেখালেখি, পিয়ানো বাজানো, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজ কিন্তু একাকী বসেই করা যায় ভালো। কাজটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে চাইলে প্রয়োজন হয় একাগ্রতা আর একাকিত্ব।
এই যে একাকী মুহূর্তগুলো মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে ব্যস্ত থাকে, এর ফলে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ে, সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এটা শুধু এক-দুজনের কথা নয়, বিশ্বের অনেক সফল ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের সেরা আইডিয়াগুলো পেয়েছেন একাকী থেকে। মাইক্রোসফটের শুরুর দিকে বিল গেটস বছরে দুবার নির্জন কেবিনে চলে যেতেন সপ্তাহখানেকের জন্য।
সঙ্গী থাকত শুধু একগাদা বই। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘থিঙ্ক উইক’ বা ‘ভাবনার সপ্তাহ’। পুরো সপ্তাহ নির্জনে গিয়ে নিজের মতো করে ভাবতেন তিনি। একবার এই ‘থিঙ্ক উইক’ থেকে বিল গেটস খুঁজে পেয়েছিলেন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের আইডিয়া।
শুধু নতুন আইডিয়া নয়, কাজে আটকে গেলে সেখান থেকে মুক্তি পেতেও একাকিত্ব দারুণ কাজের।
বিশ্বখ্যাত ইতালীয় চিত্রশিল্পী ও বহুবিদ্যাজ্ঞ লেওনার্দো দা ভিঞ্চির কথাই ধরা যাক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি তাকিয়ে থাকতেন তাঁর বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর দিকে। এরপর একটি তুলির আঁচড় দিতেন ছবিতে। এই বিরতি তাঁর কাজকে করেছে অনন্য।
মস্তিষ্ককে একাকী রাখতে করণীয়
মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য ঠিক কতটা একাকী থাকা দরকার, তার কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। সাধারণত যত সময় আপনি নিজেকে দেবেন, একা থাকলে ভালো লাগবে, সেটাই আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভালো। তবে শুধু একাকী থাকলেই হবে না, সেটিকে কাজে লাগাতেও জানতে হবে। সময়টাকে কার্যকর করতে কিছু পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন।
নিরিবিলি জায়গায় চলে যান
নিজের মস্তিষ্ককে একাকী করার ভালো উপায় হলো কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া বা নিরিবিলি কোথাও ছুটি কাটানো। শুরুতে বোরিং মনে হলেও মস্তিষ্কের জন্য এটি খুব ভালো। এমনকি খোলামেলা চিন্তাভাবনা করার জন্য একা ঘুরতে যাওয়া খুবই উপকারী। প্রতিদিনের রুটিন থেকে বেরিয়ে একটা নতুন পরিবেশে মস্তিষ্ক নিজেকে নতুন করে চিনতে শুরু করে। চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে নিজের সৃজনশীল সত্তার বিকাশও ঘটে।
শুরু হোক অল্প সময় দিয়ে
সবার পক্ষে চাইলেই এক সপ্তাহ বা মাসের জন্য বেরিয়ে পড়া সম্ভব নয়। তাই যেখানেই থাকুন না কেন, চেষ্টা করুন অন্তত ১০ মিনিট একা থাকার। নিরিবিলি একটি জায়গায় রিল্যাক্সিং মিউজিক ছেড়ে বসে থাকুন। সে সময় আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না, আপনার কাছে কেউ কিছু চাইবেও না। এই অভ্যাস ধীরে ধীরে বাড়াতে পারেন। যান্ত্রিক দুনিয়া থেকে এই বিরতি নিলে আপনার মস্তিষ্ক শান্ত হবে। দুনিয়া বদলে দেওয়া আইডিয়ার জন্মও হতে পারে এই একাকী সময়ে।
মিশুন বাছাই করা মানুষদের সঙ্গে
আমরা কাদের সঙ্গে চলছি, কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি, মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহারের জন্য এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলো বেশ বড় হয়ে ওঠে। যে কারণে সঠিক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বেশ জরুরি। নেতিবাচক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটালে আপনার মন ও মস্তিষ্কও নেতিবাচক হয়ে উঠবে। তখন মস্তিষ্ক থেকে ভালো চিন্তাভাবনা আসবে না। তাই বন্ধু হিসেবে ভালো সম্পর্ককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
নিজেকে নিয়ে ভাবুন
একা বসে বসে শুধু কাজের কথা ভাববেন না; বরং নিজের আগের কাজের কথা ভাবুন। যেভাবে আপনার জীবন চলছে, তা কতটা কাজে আসছে, সে ব্যাপারে চিন্তা করুন। এতে যেমন আপনার ধ্যানধারণা ও মানসিকতার সঙ্গে আবার পরিচিত হতে পারবেন, তেমনই আপনার আবেগ–অনুভূতিগুলোর ব্যাপারে ধারণা হবে স্পষ্ট।
একা করা যায়, এমন কাজ করুন
এমন কিছু কাজ করুন, যা একা একাও করা সম্ভব। যেমন হাঁটা, ডায়েরি লেখা বা যোগব্যায়াম করা। এসব কাজ শুধু একাকিত্বের উপকারিতাই দেয় না; বরং অস্থির মস্তিষ্ককে শান্ত ও ধীরস্থির হতে সাহায্য করে।
সূত্র: সিএনবিসি