গরমের ঈদে খাবারে যেসব সতর্কতা মানবেন

ঈদের সময় খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে। মডেল: অভিনয়শিল্পী দম্পতি টয়া ও শাওন
ছবি: সুমন ইউসুফ

ঈদের দিন টেবিলে থাকবে নানা রকম মুখরোচক খাবার। পোলাও, বিরিয়ানি, কোপ্তা, ভুনা-ভাজা, মিষ্টান্ন আরও কত কী! কিন্তু আবহাওয়া যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তাতে এই গরমে খাবার খেতে হবে একটু বুঝেশুনে। কারণ, গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ফলে পেটে দেখা দেয় নানা রকম সমস্যা। যে কারণে এই সময়ে পেটফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ও বাইরের খোলা শরবত ও পানি পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি তরল খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বেশি করে খেতে হবে। এ সময় যেসব খাবার আপনাকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে, চলুন তেমন কিছু খাবারের কথা জেনে নিই।

মৌসুমি ফলের শরবত: ঈদে অনেকে গুরুপাক খাবার খেয়ে তারপর কেনা জুস, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকে। এটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পরিবর্তে ঘরে তৈরি নানা মৌসুমি ফলের শরবত খেতে পারেন। গরমের এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও ভাইরাসজনিত সমস্যা দেখা দেয়, যা অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারে মৌসুমি ফল বা ফলের শরবত। অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা, পানিশূন্যতা দূরীকরণেও সাহায্য করবে ফলের শরবত। তরমুজ, বেল, আখ, পেয়ারা, লেবু ইত্যাদির শরবত খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের বেশি মিষ্টি ফলের শরবত না খাওয়াই ভালো।

নানা রকম সালাদ: ঈদে শাকসবজি পর্যাপ্ত খাওয়া হয় না। ফলে ফাইবারের ঘাটতি দেখা দেয়। এটা পূরণ করতে পারে সালাদ। এটি তৈরি করাও সহজ। প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সালাদ রাখলে ফাইবারের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি এই গরমে পানিশূন্যতা দূর হবে। তাই শাহি বা মোগল খাবারের সঙ্গে টেবিলে রাখুন সালাদ। শসা, টমেটো, পেঁপে বা গাজরের সালাদ রাখতে পারেন। তাতে দই, রায়তা, পুদিনা, সেদ্ধ মাংস যোগ করে আনতে পারেন বাড়তি স্বাদ।

মাছের সালাদ: ঈদে সব মাংসের পদ না রেখে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বেছে নিতে পারেন মাছ। মাছ শীতল প্রকৃতির প্রাণী, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে যা সাহায্য করে। এই গরমে কড়া করে না ভেজে, স্টিম বা ভাপিয়ে মাছের সালাদ তৈরি করা যায়। বেক করেও বিশেষ পদ হিসেবে টেবিলে পরিবেশন করতে পারেন মাছ।

রায়তা: ঈদে বিভিন্ন গুরুপাক খাবার খাওয়া হয় বেশি, যা সহজে হজম হয় না। তাই মূল খাবারের পাশে যদি রায়তা রাখতে পারেন, তাহলে হজমজনিত কোনো সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া নাশতা হিসেবে ঈদের দিন ছোলার রায়তা, ফ্রুট সালাদ রাখতে পারলে খুব উপকারে আসবে। এ জন্য ছোলাসেদ্ধ, শসা, গাজর, টক দই দিয়ে মিশিয়ে সহজে তৈরি করা যায় রায়তা।

নানা রকম মৌসুমি ফল খেতে পারেন
ছবি: সুমন ইউসুফ

কলার প্যানকেক: কলার প্যানকেকে মিলবে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা সহজেই ক্লান্তি দূর করে শরীর সতেজ করে তুলবে। ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নেও হালকা খাবার হিসেবে এই নাশতা দেবে ভিন্ন স্বাদ। কলার প্যানকেক তৈরি করতে কলার পাশাপাশি দুধ, ডিম, ময়দা ও সামান্য তেল লাগে, যা শরীরের জন্য ভালো।

ফলের কাস্টার্ড: অতিথি আপ্যায়নে ফলের কাস্টার্ড হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি অল্প সময়ে সহজেই প্রস্তুত করা যায়। ফলের কাস্টার্ড বানাতে যেহেতু বিভিন্ন ফল ব্যবহার করতে হবে, তাই যাঁরা অনেক খাবার খেতে পারেন না, তাঁরাও ঠিকঠাক পুষ্টি পাবেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য খাবারটি রাখতে পারেন। এতে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ করা যায়।

দই দিয়ে নানা পদ: গরমে এক বাটি দই হতে পারে চটজলদি সমাধান। দই শরীরকে শীতল রাখতে এবং গরমে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। যাঁদের হজমজনিত সমস্যা, তাঁরা খেতে পারেন দই। দইয়ে বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এ ছাড়া দইয়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আছে। যা শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি দূর করে শরীরকে ডিহাইড্রেট করবে। এ জন্য খেতে পারেন দইমুড়ি, দইভাত, দইচিড়া, কলা, ঘোল, লাচ্ছি, মাঠা, দইবড়া, দই–নারকেলের চাটনি ইত্যাদি। দই দিয়ে মাছ, মাংস রান্না করলেও উপকার মিলবে।

সবজির পায়েস: অনেক বাড়িতে ঈদে পায়েস রান্না হবে। উপাদানে একটু পরিবর্তন করলে কার্বোহাইড্রেটেট কমে সহজেই এটি হয়ে উঠতে পারে পুষ্টিকর খাবার। চালের বদলে এবার রান্না করতে পারেন সবজির পায়েস। যেমন লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া ইত্যাদির পায়েস। এসব সবজি দিয়ে বানানো পায়েস আমাদের শরীরে হজমজনিত সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।

বোর্শ স্যুপ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মিল্কশেক: এক গ্লাস মিল্কশেক খেলে শরীর যেমন ডিহাইড্রেট থাকবে, তেমনি আবার গরমের দিনে যাঁরা মাথাব্যথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন, তাঁরা সেটা থেকে রক্ষা পাবেন। তবে যাঁদের ডায়রিয়াজনিত সমস্যা বেশি, তাঁরা মিল্কশেক খাবেন না।

স্যুপ: পরিবারে যারা শিশু বা বৃদ্ধ, যারা শাকসবজি চিবিয়ে খেতে পারে না, তাদের বিভিন্ন শাকসবজির স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। এ জন্য পালংশাক, গাজর, লেটুস, শসা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা স্যুপে ব্যবহার করে খাবার বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারেন।

ডাব: অতিরিক্ত গরমে শরীর ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আর এই ইলেকট্রোলাইটের অভাব পূরণে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরাইডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এসব পাবেন ডাবের পানিতে। এই পানি বা শাঁস দিয়ে কোনো নাশতা বা তরকারি রান্না করলেও উপকার মিলবে। ডাবের পুডিং খেলেও গরমে উপকার মিলবে।