মোচ যেভাবে বদলে দিল তাঁর নাম
পারিবারিক নাম মোহাম্মদ সরকার হলেও সবার কাছে তিনি মোছারু সরকার। জাতীয় পরিচয়পত্রেও তাঁর এই নাম। দোকানের নামটাও দিয়েছেন পরিবর্তিত নামেই—মোছারু রেডিও ও মাইক সার্ভিসিং। কিন্তু তাঁর এই অদ্ভুত নাম হলো কী করে? আর কারাই বা দিল এই নাম? জানালেন, যুবক বয়সে তাঁর স্বাস্থ্য ভালো ছিল। বড় গোঁফ রেখেছিলেন। তখন থেকে সবাই তাকে ‘মোছারু’ নামে ডাকত। সেটাই এখন স্থায়ী হয়ে গেছে।
মোহাম্মদ সরকারের বয়স তখন ১৫ কি ১৬ বছর। প্রতিবেশীর বাড়িতে গেছেন গান শুনতে। রেডিওটি হাতে নিতেই বাড়ির একজন হা হা করে ছুটে এল, নষ্ট হয়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে বলে যন্ত্রটা রেখে দিতে বলল। তার ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সরকার। মনে মনে ঠিক করেন আর এই বাড়িতে গান শুনতে আসবেন না। কিন্তু তাঁর তো গান ছাড়া চলে না, এখন কী করবেন?
কয়েক দিন পর রংপুরের গঙ্গাচড়ার বাড়ি থেকে মনের কষ্টে চলে যান বগুড়ার সান্তাহারে রেডিও মেকার রশিদ মাস্টারের কাছে। পূর্বপরিচিত লোকটার কাছে রেডিও সার্ভিসিংয়ের তালিম নিতে শুরু করেন। অনেক রেডিও আসে, গান আর খবরও শোনা হয়, কাজটাও শেখা হয়। এভাবে ছয় মাস কাজ শিখে বাড়িতে ফিরে আসেন মোহাম্মদ সরকার।
মোহাম্মদ সরকারের বয়স এখন পঞ্চাশোর্ধ্ব। রেডিওর কাজ করতে গিয়ে আর লেখাপড়া হয়নি। গঙ্গাচড়া বাজারে তাঁর রেডিও ও মাইক সার্ভিসিংয়ের দোকান আছে। বিশ্বসংবাদের তিনি মনোযোগী শ্রোতা। দোকানে একসময় প্রতি সন্ধ্যা ও রাতে রেডিওতে বিবিসি বাংলাসহ রেডিও চায়না, রেডিও জাপান, রেডিও তেহরান ও আকাশবাণী কলকাতার বাংলা খবর শুনতেন। মোহাম্মদ সরকার ওরফে মোছারু বলেন, আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক তিনটি প্রজাতন্ত্র রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের দৈনন্দিন বিশ্বসংবাদ তাঁর মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছিল। বিশ্বরাজনীতির উল্লেখযোগ্য ঘটনা তাঁর স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বলে। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের নানা ঘটনাও তাঁর জানা।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে রেডিও নিয়ে কাজ করলেও মোহাম্মদ সরকারের নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। অন্যদের মেরামত করতে দেওয়া রেডিওতেই খবর শুনতেন। এখন আর কেউ রেডিও সার্ভিসিং করতে আসেন না। গত বছরে তাঁর মামা আবদুল মালেক একটি রেডিও মেরামত করতে দিয়েছিলেন, সেটা আর নেননি। সেই রেডিওতেই এখন খবর শোনেন।
একসময় আয়–রোজগার থাকলেও মোহাম্মদ সরকারের রেডিও ও মাইক সার্ভিসের দোকান এখন তেমন চলে না। বললেন, ‘দিনে এক শ টাকাও আয় হয় না।’
দোকান থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার ধারে টিনের চালায় পরিবার নিয়ে থাকেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার। তবে সেই অভাবের কথা খুব একটা বলতে চাইলেন না। বিশ্বসংবাদেই তাঁর আগ্রহ।