যেভাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায় আগ্রহী হলেন তাসনোভা

তাসনোভা জেরিন
ছবি: সংগৃহীত

নানা-নানু বীর মুক্তিযোদ্ধা। তা ছাড়া শৈশবের অনেকটা সময়ই তাঁর নানুবাড়িতে কেটেছে। তাই তাসনোভা জেরিনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হওয়াটা এক রকম স্বাভাবিকই ছিল। যখন স্কুলে পড়তেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়ে তাঁকে ঘুম পাড়াতেন নানু। পরে এ-সংক্রান্ত নাটক, চলচ্চিত্র দেখে ও উপন্যাস পড়ে আগ্রহ বাড়ে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগে ভর্তি হয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাত্ত্বিক ও বিশ্লেষণমূলক গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। 

আরও পড়ুন

২০১৭ সাল থেকে গবেষণার সঙ্গে আছেন তাসনোভা। কাজ করেন মাঠপর্যায়ে। ফলে প্রান্তিক মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের জীবনসংগ্রামের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার সুযোগ তাঁর হয়েছে। বলছিলেন, ‘গবেষণার ক্ষেত্রে আমি আঞ্চলিক ইতিহাসকে প্রাধান্য দিই। কারণ, সমৃদ্ধ আঞ্চলিক ইতিহাস ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।’ 

তাসনোভার কাজের পরিধি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা বিষয়ে কাজ করেছেন। গণহত্যা জাদুঘরের প্রকল্পে অংশ নিয়ে জেনেছেন নোয়াখালী জেলার গণহত্যার ইতিহাস। স্নাতকে ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধ তৈরি করেন, যার পরিবর্ধিত রূপ ২০২৩ সালের বইমেলায় একাত্তরে কুমিল্লা: বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া নামে প্রকাশিত হয়েছে। এটি তাসনোভার প্রথম গবেষণামূলক বই। এরপর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে করেন ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ: কুমিল্লা জেলা’ শিরোনামের আরেকটি গবেষণাকর্ম। 

আমাদের দেশে মাঠপর্যায়ের গবেষণা এমনিতেই বেশ কঠিন। আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই। হয়রানি, কটু কথা, নানা কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে তাসনোভাকে। এ সমস্যা এড়াতে শুরুর দিকে নানা-নানু, কখনোবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করতে যেতেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে তিনি একাই তথ্যের খোঁজে বের হন। আবার মানবতাবিরোধী অপরাধ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, ধর্মান্তরের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই যেহেতু সময়সাপেক্ষ, তাই অপরিচিত মানুষ, পরিবেশ এবং দূরবর্তী গ্রাম থেকে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই শেষে সময়মতো বাড়ি ফিরে আসাটাও তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। গত বছর তথ্য সংগ্রহের জন্য ভ্যানে করে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছিলেন। হাত-পা ছিলে বেশ ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য ভালো, গুরুতর কিছু ঘটেনি। তথ্য সংগ্রহের কাজ বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। 

ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চান না এই গবেষক। শুধু নিজের কাজের মাধ্যমে ইতিহাস সংরক্ষণ করতে চান। একাত্তরে কুমিল্লা: বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া সেই প্রয়াসেরই অংশ। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ের কথা, যেমন অসহযোগ আন্দোলনে কুমিল্লা, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায় গঠিত সংগ্রাম কমিটির বিবরণ, দুই উপজেলার যুদ্ধ ও গণহত্যার বিবরণ, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে শহীদ পরিবারের জীবনসংগ্রাম, একাত্তরে নারী এবং নারী নির্যাতন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।