নাজিফা আর রাফসান আজও জানে না ওদের প্রেমটা কীভাবে শুরু হয়েছিল

ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। এখানে পড়ুন বাছাই একটি লেখা।

আঁকা: এস এম রাকিবুর রহমান

মেসেজের শব্দে ফোনটা বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি নাজিফা রিপ্লাই দিয়েছে: ‘তোদের দোয়ায় ভালো আছি আমরা। রাফসানের সঙ্গে খারাপ থাকা সম্ভব না!’

নাজিফার উত্তর পড়ে মনে পড়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সেদিনের কথা। স্যার আসতে বেশ দেরি করছিলেন। সবাই আড্ডায় মত্ত। আমার মাথায় দুষ্টুমি চাপল। ফামিনের সঙ্গে এসব বিষয়ে আমার আবার ভালো জমে। তাই ফামিনকে ডেকে বললাম, ‘আয় একটু মজা নিই।’

—কী বল?

ফামিনকে একটু আড়ালে নিয়ে আস্তে আস্তে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম। পরিকল্পনা বলতে আমি নাজিফাকে ডেকে নিয়ে বলব, ‘রাফসান আমাকে বলছে, তোর অনেক কিছুই নাকি তার ভালো লাগে। সে তোকে পছন্দও করে, কিন্তু বলতে পারে না। তোর সঙ্গে একটু কথা বলতে চায়, কিন্তু পারছে না।’

একই কথা একটু ঘুরিয়ে রাফসানকে বলবে ফামিন। শুধু যোগ করবে, অবসরে যেন সে নাজিফাকে মেসেজ পাঠায়।

এ কথা শুনেই ফামিন বলল, ‘তুই কি পাগল, মাথা ঠিক আছে?’ তার হাসি থামছেই না। ‘রাফসানের মতো ভদ্র ছেলে কি এটা মেনে নেবে?’

আমি বললাম, ‘দুইটাই একরকমের আছে। সমস্যা নেই।’

যে কথা সেই কাজ। ফামিন রাফসানের কাছে আর আমি নাজিফার কাছে চলে গেলাম।

আমার কথা শুনে নাজিফা বলল, ‘ও কি সত্যিই বলছে...না না আমার পক্ষে সম্ভব না।’ নাজিফা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

আমি বললাম, ‘এত আশা করে বলল ছেলেটা, তুই কিন্তু মেসেজের রিপ্লাই দিস। আর যা বলার তুই নিজেই তাকে বলিস। আবার আমার কথা কিন্তু বলিস না রাফসানকে, প্লিজ।’

খেয়াল করে দেখলাম, ওয়াশরুমের দিকটায় রাফসানকে একইভাবে বোঝাচ্ছে ফামিন।

সেই ঘটনার পর অনেক দিন কেটে গেল। এ নিয়ে আমাদের আর কোনো কথাও হলো না। তবে নাজিফা-রাফসানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করি। পড়ালেখা, গ্রুপ স্টাডি, ল্যাবের কাজে পাশাপাশি থাকে তারা, আলাদা সময় কাটায়।

একসময় গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো। বন্ধুদের কেউ কেউ চাকরিতে ঢুকে গেল। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেল কয়েকজন। আমি নিজেও বাইরে চলে এলাম। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যেতে থাকল। দিনে দিনে অনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসল। এমনই একদিন হোয়াটসঅ্যাপে ফামিনের কল, ‘এই জানিস, নাজিফা আর রাফসানের বিয়ে হয়ে গেছে।’

শুনে আমি খুব একটা অবাক হলাম না; বরং ভালো লাগা কাজ করল, যাক দুজন মানুষকে এক করার নেপথ্যে আমারও ভূমিকা আছে!

এ কথা বলতেই নাফিজাকে টেক্সট করেছিলাম, ‘দিনকাল কেমন যাচ্ছে রে? কেমন আছিস তোরা?’