এই ঈদে শিশুর পোশাক

চৈত্রের শেষ সপ্তাহে এবার ঈদ। ঠা ঠা রোদ্দুরের কথা মাথায় রেখেই তাই বাছাই করতে হবে ঈদের পোশাক। এসব বিবেচনায় নিয়েই ফ্যাশন হাউসগুলো এনেছে আরামদায়ক পোশাক।

শিশুদের আরামের জন্য অবধারিতভাবেই প্রাধান্য পাচ্ছে সুতি পোশাক
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ছোটদের ঈদ মানেই নতুন পোশাক। তাদের আবদার মিটিয়ে তবেই না বড়দের শান্তি। একেবারে ছোট যারা, অর্থাৎ যাদের কিনা উৎসব-আয়োজন কিছুই বোঝার বয়স হয়নি, তারাও কিন্তু বাদ পড়ে না। নিজেদের পছন্দেই তাদের সাজিয়ে তোলেন বড়রা। শিশুদের আরামের জন্য অবধারিতভাবেই প্রাধান্য পাচ্ছে সুতি পোশাক। ভিসকস, লিনেন ও নানা ধরনের রেশমি কাপড়ের পোশাকও পাবেন। পোশাকে যেমন উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার হয়েছে, তেমনি থাকছে হালকা রঙের মধ্যে চমৎকার নকশা করা সব পোশাক। ধরনেও থাকছে বৈচিত্র্য। বাহারি কাটের পোশাক পাবেন। পোশাকের মোটিফও বাছাই করা হয়েছে শিশুর পছন্দমাফিক। আছে বাহারি ফুলের নকশা। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ছাড়াও কারচুপি, এমব্রয়ডারি বা হরেক রকম সুতার কাজও পাবেন।

ছোটদের ঈদ মানেই নতুন পোশাক। তাদের আবদার মিটিয়ে তবেই না বড়দের শান্তি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সকালের মিষ্টি রোদের সময়টায় শিশুকে একটু ভারী নকশার পোশাক পরানো যেতেই পারে। কিন্তু বেলা গড়িয়ে আসতেই হয়তো গরমে হাঁসফাঁস। সেই সময়ের জন্য হালকা পোশাকই ভালো। ঈদে বন্ধু বা ভাইবোনদের সঙ্গে হুটোপুটিও তো কম হবে না। বরং ঈদের ছুটিতে একসঙ্গে হইচই আর দৌড়ঝাঁপটা আরও জমে উঠবে। বিকেলে, সন্ধ্যায় বা রাতে বড়দের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়াও হবে। কোন সময়ে শিশুকে কোন পোশাক পরালে সে স্বস্তিতে থাকবে, সেটা বিবেচনায় রাখুন কেনাকাটার সময়। তার পছন্দ কিংবা তার আনন্দের কথাও ভুলবেন না। নিজের পোশাক নিজেও পছন্দ করতে পারে শিশু। নিজের পছন্দের রঙেই সে রাঙাতে পারে নিজেকে।

কোন সময়ে শিশুকে কোন পোশাক পরালে সে স্বস্তিতে থাকবে, সেটা বিবেচনায় রাখুন কেনাকাটার সময়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

হরেক রকম পোশাক

ফ্যাশন হাউস লা রিভের কিডস ওয়্যার বিভাগের ব্যবস্থাপক যোহানা অরণি জানালেন, তাঁদের পোশাকে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনধারা আর দেশীয় ঐতিহ্যে উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। থাকছে ফিউশনধর্মী পোশাকও। নবজাতক বা একেবারে ছোট্ট শিশুর জন্য আছে আলাদা আয়োজন। নিমা আর ফতুয়া তো রয়েছেই। ছোট্ট শিশুর মাপে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, স্কার্ট-টপ, সালোয়ার–কামিজ, ঘাগরা–চোলি—সবই এনেছেন তাঁরা। হালকা ফুলেল নকশা আর কার্টুন চরিত্রের থিম রয়েছে এসব পোশাকে। পিচ পিংক, বেবি পিংক, বেবি ব্লু, আইস ব্লু, গ্রাস গ্রিনের মতো হালকা রঙে আসবে প্রশান্তি। এই পোশাকগুলো গড়া হয়েছে নানা রকম মিহি সুতি কাপড় বা ওভেন কাপড় দিয়ে।

ছেলেশিশুর জন্যও রয়েছে বাহারি আয়োজন
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

দু-তিন বছর বয়স থেকে শুরু করে আরেকটু বড়দের জন্য লা রিভের আয়োজনটা আবার অন্য রকম। এই বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, স্কার্ট-টপ ও টিউনিক; সালোয়ার–কামিজ আর ঘাগরা–চোলিও মিলবে। কিছু পোশাকে রয়েছে ক্রেপ সিল্কের ব্যবহার। আলাদাভাবে পালাজ্জো, কিউলটস আর লেগিংসও নেওয়া যাবে। লা রিভে এই বয়সী ছেলেদের জন্য আছে পাঞ্জাবি, ফুলহাতা শার্ট, হাফহাতা শার্ট, টি-শার্ট আর পোলো শার্ট। পোশাকে মজাদার কোনো বার্তা লেখা থাকলে ঈদের আনন্দে যোগ হতে পারে নতুন মাত্রা। সুতি আর ভিসকস কাপড় আরামদায়কও বটে। বিভিন্ন ধরনের ডেনিম ওয়াশের ট্রাউজারও রয়েছে; শর্টস, বারমুডা প্যান্টও আছে। ক্যানভাস আর টুইল কাপড়ও ব্যবহার হয়েছে প্যান্টে। প্যান্টের নকশাতে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। সব বয়সীদের টি-শার্টের জন্য সিঙ্গেল জার্সি আর পোলো শার্টের জন্য পিকে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।

এই বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, স্কার্ট-টপ ও টিউনিক; সালোয়ার–কামিজ আর ঘাগরা–চোলিও মিলবে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সুতিতেই আরাম, সুতিতেই ফ্যাশন

ফ্যাশন হাউস ‘শৈশব’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব চৌধুরী বলছিলেন, শৈশবের ঈদ আয়োজনের অধিকাংশ পোশাকই সুতি কাপড় দিয়ে করা। তবে অধিক কাউন্টের সুতার এসব কাপড় দেখায় অনেকটা কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি কাপড়ের মতোই। টিস্যু কাপড়, মেশ কাপড়ের পোশাকগুলো দেখতেও দারুণ। একেবারে ছোট শিশুর জন্যও ফ্রক, পার্টি ফ্রক, স্কার্ট-টপ, টিউনিক, কুর্তি, সালোয়ার–কামিজ, ঘাগরা–চোলি, লেহেঙ্গা—সবই আছে। ছেলেশিশুর জন্যও রয়েছে বাহারি আয়োজন। শৈশবের পোশাকে প্রাচীন ঐতিহ্যের দেখাও মিলবে। মেয়েদের অনেক পোশাক আর ছেলেদের পাঞ্জাবিতে ইরানি আর তুর্কি মোটিফে নকশা হয়েছে। তাজিকিস্তান, কাজাখস্তানের কিছু মোটিফও ব্যবহার করা হয়েছে। অল্প কিছু পোশাক, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘পার্টি ওয়্যার’, কেবল একটু জাঁকজমক কাপড়ে করা হয়েছে। এই যেমন, মেয়েদের গাউন আর ছেলেদের শেরওয়ানি। এসবের বাইরেও রয়েছে কাবলি ও জাম্পস্যুট। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, জারদৌসি, এমব্রয়ডারি আর সুতার কাজে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাঁদের পোশাকে।

স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, জারদৌসি, এমব্রয়ডারি আর সুতার কাজে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মেয়ে শিশুদের পোশাকে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মোটিফে, কাপড়ে বৈচিত্র্য

ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান জানান, ফুলেল মোটিফের পাশাপাশি তাঁরা জ্যামিতিক, জামদানি, মোগল, কাশ্মীরি, বেলারুশীয়, ম্যান্ডালাসহ নানা মোটিফের অনুপ্রেরণায় কাজ করেছেন। ভয়েল, জ্যাকার্ড কটন, নিব কটন, সুইস কটন, লিনেন, টু-টোন, জর্জেট, ভিসকস, ক্যাশমিলন, ডুপিয়ন সিল্ক, দুবাই সিল্ক, পেপার সিল্ক, মমো সিল্ক দিয়ে তৈরি হয়েছে তাঁদের নানা পোশাক। থাকছে নানা রকম প্রিন্টেড নকশা। কিছু পোশাকে হাতের কাজ, কারচুপি আর টাই-ডাই করা হয়েছে। নেট কাপড়, লেইস, বিডস এবং কিছু ধাতব উপকরণ দিয়েও নকশা করা হয়েছে। মেয়েদের জন্য সালোয়ার–কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট, পার্টি ফ্রক, কুর্তি, টপ, টপ-কটি সেট, লেহেঙ্গা সেট, পালাজ্জো রয়েছে। অন্যবারের মতোই মেয়েশিশুদের জন্য কিছু সালোয়ার–কামিজ ও কুর্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সেটি মা ও বোনদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়। ছেলেশিশুদের জন্যও বাবা ও ভাইদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক করা হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট ও পোলো শার্ট।

ছোট্ট শিশুর মাপে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, স্কার্ট-টপ, সালোয়ার–কামিজ, ঘাগরা–চোলি—সবই আছে বাজারে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কাট ও প্যাটার্নে ভিন্নতা

লা রিভের মেয়েদের পোশাকে এ লাইন, সার্কুলার ফ্লেয়ার, বায়াস কাটের মতো বৈচিত্র্যের দেখা মিলবে। থাকছে নানা রকম কুঁচির ব্যবহার। হাতার প্যাটার্নও দারুণ। টিউলিপ হাতা, পাফ বা গোলাকার হাতায় পোশাকগুলো দেখায়ও অন্য রকম। ছেলেদের পোশাকের বুননের নকশায়ও আনা হয়েছে ভিন্নতা। জ্যাকার্ড ও টেক্সচার্ড কাপড় দিয়ে তৈরি হয়েছে পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের পোশাকে দেখা যাবে কারচুপি, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্ট। ছেলেদের শার্টে আবার টুইল টেপ এবং বোতামের ব্যবহারে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। ছেলেদের প্যান্টগুলোতেও রয়েছে মজাদার নকশা। এই যেমন কাট অ্যান্ড সিউ। প্যান্টের মূল কাপড়ের ওপর আলাদা একটা কাপড় জুড়ে দেওয়া এই নকশা আপনার শিশুর নজর কাড়তে পারে। প্যাচ অ্যাটাচমেন্ট, সেলাইয়ের বৈচিত্র্য কিংবা পকেটের ভিন্ন রূপে প্যান্টগুলো হয়ে উঠেছে সুন্দর এবং শিশুর পছন্দসই। কার্টুন চরিত্রও ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে।

মেয়েদের পোশাকে দেখা যাবে কারচুপি, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্ট
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাহারি রঙে

লা রিভের আয়োজনে হলুদ, কমলা, লাল, টিয়া-সবুজ, রয়্যাল ব্লু, ম্যাজেন্টার মতো উজ্জ্বল রঙের বিভিন্ন শেড ব্যবহার করা হয়েছে। একাধিক রঙের ক্ষেত্রে কখনো আনা হয়েছে বৈপরীত্য; কখনোবা হারমনি টোন, অর্থাৎ একই রঙের ভিন্ন কোনো শেড। অন্যদিকে হালকা রং নিয়ে কাজ করে ফ্যাশন হাউস শৈশব। আকাশি, হালকা হলুদ, হালকা গোলাপি, পার্পল—সব পোশাকেই হয়েছে এমন হালকা কোনো রঙের ব্যবহার। ২০টির বেশি হালকা রং নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। বাদ যায়নি শুভ্র সাদাও।

শিশুদের আরামের জন্য অবধারিতভাবেই প্রাধান্য পাচ্ছে সুতি পোশাক
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

লেখাটি বর্ণিল ঈদ ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত