দ্রুত যাওয়া নয়, দূরে যাওয়া শিখছি

ভিনদেশি তরুণদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ হয়েছে এই সম্মেলনে
ছবি: সংগৃহীত

নতুন শহর ঘুরে দেখার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে। নতুন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, তৈরি হয় নতুন নতুন গল্প। জীবনের নতুন এক গল্পের সন্ধানে ছুটে গিয়েছিলাম মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে। ২৩ জুন থেকে ১ জুলাই রাজধানী বিশকেকে অনুষ্ঠিত স্টুডেন্ট অ্যাকশন অ্যান্ড ইয়ুথ লিডারশিপ সম্মেলনের নবম আয়োজনে আমরা বাংলাদেশ থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক অংশ নিই। শিক্ষার্থীরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়মুনা আলম, আহসান লাব্বি, ফাইয়াজ জাহিন, হালিমা হাসিন ও আমি সৃজন বণিক। আর শিক্ষক হিসেবে ছিলেন ব্র্যাকের প্রভাষক তুর্য নিকোলাস মন্ডল। ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সারা বিশ্বের ২৮টি দেশের ৫৫ জন শিক্ষার্থী সম্মেলনে অংশ নেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এ সম্মেলন।

আরও পড়ুন

জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, অস্ট্রিয়া, কেনিয়া, ভিয়েতনামসহ নানা দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৯ দিন দারুণ সময় কাটিয়েছি। ‘সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিকাশের মাধ্যমে তারুণ্যের সংযুক্তি’—এ বিষয়ে সম্মেলনে বেশ কিছু কর্মশালা, দলীয় কাজ, সেমিনার ও অধিবেশনে আমরা অংশ নিই। নিজেদের গল্প নিয়ে হাজির হন নানা দেশের তরুণেরা। নানা সৃজনশীল প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন তাঁরা। শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণে তারুণ্যের ভূমিকা নিয়ে আমার প্রকল্প ‘আলোকধেণু’ নিয়ে আলোচনা করি আমি।

এ সম্মেলনে রোমানিয়া থেকে আন্দ্রিয়া ইয়ানোসিও অংশ নিয়েছেন। সিভিকা নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা সামাজিক সংকট ও সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। আন্দ্রিয়া বলছিলেন, ‘আমি বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। এ সম্মেলনে আসার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনেছি। জনসংখ্যায় সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ ঘনত্বের দেশটি যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে, তা সত্যিই আগ্রহ জাগানিয়া।’

আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছি। বেলারুশের তরুণী য়াবা ক্যান্দ্রাস্তিয়েভা দারুণ একটি প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। য়াবা বলছিলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা যেন বই পড়তে পারে, সেটি আমার কাজের বিষয়। স্পর্শ করে পড়ার মতো বই আমরা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছি।’ য়াবার মতো ঘানার তরুণ ড্যানিয়েল আমোশির সঙ্গেও আমার দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে। তাঁকে বাংলা ভাষায় অভিনন্দন জানানোর চেষ্টা করেছিলাম। দুই–একটা বাংলা শব্দ শেখাতে পেরেছি। ড্যানিয়েল তাঁর দেশের কোকো শিল্পে শিশুশ্রম বন্ধের কৌশল হিসেবে প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তা নিয়ে কাজ করছেন। আমার সঙ্গে ড্যানিয়েলের যোগাযোগ থাকবে। বাংলাদেশের শিশুশ্রম সমস্যার সমাধানে ড্যানিয়েলের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করব বলে ভাবছি।

আমার বাংলাদেশি বন্ধু হালিমা হাসিন বিহারি জনগোষ্ঠীর মধ্যে লিঙ্গসমতা ও স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা তরুণেরা এমন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এক হয়ে নানা কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছি। সত্যিই তাই। আফ্রিকান উপকথা বলে, আমি যদি একা দৌড়ে সামনে যেতে চাই, তাহলে আমাকে জোরে দৌড়াতে হবে। আর যদি দূরে যেতে চাই, তাহলে সবাইকে নিয়ে দৌড়াতে হবে। আমরা এ সম্মেলনে সবাইকে নিয়ে দৌড়ানোর কৌশল শিখেছি। আমরা গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট ল্যাব তৈরি করছি। যেখানে অনেক দেশের অনেক ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।’

সম্মেলনে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় মরক্কোর তরুণী আমিনা মৌর্কি, লেবাননের জোডি মৌহরলির সঙ্গে। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা তাঁদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার এ অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই সামনের দিনগুলোতে অনুপ্রেরণা দেবে।