পরিবেশবান্ধব উপায়ে কীভাবে সন্তান পালন করবেন

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন খেলনা দিন শিশুকে
ছবি : নকশা

মা–বাবারই দায়িত্ব সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করে তোলা। পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সন্তান যেন বড় হতে পারে, একেবারে শুরু থেকেই সেটি দেখভাল করতে হবে। সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ যেকোনো সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এখন পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নতুবা একসময় পৃথিবীটাই থাকবে, মানুষ থাকবে না। তাই পরিবেশবান্ধব সন্তানপালনের (ইকোফ্রেন্ডলি প্যারেন্টিং) কোনো বিকল্প নেই। এমনভাবে সন্তানকে বড় করে তুলুন, যাতে সেই প্রক্রিয়ায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস খরচ হয় কম, কমে আসে কার্বন ফুটপ্রিন্ট।

আপনার সন্তানকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যান
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভারতের পরিবেশবান্ধব খেলনার জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান টয় ট্রাংক। শিশুদের জন্য তারা এমন সব খেলনা বানায়, যেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়, রিসাইকেল করা যায় আর দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যায়। সেই সঙ্গে শিশুকে পরিবেশ আর তার উপাদানকেও ভালোবাসতে শেখায়। এই প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রিয়াঙ্কা মাংগাওকার বলেন, শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আর সহানুভূতিশীল করে গড়ে তুলতে হবে। একটা মানুষ যে পরিবেশেরই অংশ, সেটা তাকে বুঝতে হবে। তাই পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে যথাসম্ভব খাপ খাইয়ে চলতে হবে। শিশুকে বুঝতে হবে, স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য প্রকৃতি, মাটি, পানি, বাতাস বিশুদ্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই।

কাপড়ে তৈরি বই পরিবেশবান্ধব উপাদান
ছবি : নকশা

পরিবেশবান্ধব সন্তানপালনের অংশ হিসেবে আপনি যা যা করতে পারেন—

  • আপনার বাসা থেকেই যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করুন। বিশেষ করে আপনার শিশুকে প্লাস্টিকের কোনো পাত্রে খেতে দেবেন না।

  • রিসাইকেল করা উপাদান বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি খেলনা দিয়ে খেলতে দিন। পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে খেলতে দিন।

  • খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস—কোনো কিছুর সামান্যতম অপচয় করবেন না। শিশুও যাতে অপচয় না করে, সেটা শেখান। পানির কল ধীরে ছাড়ুন। প্রয়োজন শেষ হলেই ফ্যান, লাইট বন্ধ করে দেবেন। আর এসবের গুরুত্ব নিয়ে ঘরে কথা বলবেন।

  • আপনার শিশুকে নিয়ে হাঁটতে বের হোন। ছোটবেলা থেকেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাইকেল চালাতে শেখান। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমন যানবাহন যতটা সম্ভব পরিহার করুন।

শিশুর ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়ে পুতুল বা অন্যান্য খেলনা বানিয়ে দিতে পারেন
ছবি : নকশা
  • আপনার বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় কিছু রাখবেন না। বাবুকে নিয়ে বাজারে যান। তাকে প্রয়োজনীয় জিনিস বেছে নিতে বলুন। খেলনা, জামাকাপড় বা উপহার—কোনো কিছুই অতিরিক্ত কিনে দেবেন না। ছোটবেলা থেকেই অল্প পোশাক, জুতা, ব্যবহার্য জিনিস, স্বল্প পণ্যে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলুন। ভোগবাদের ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলুন। দামি জিনিস নয়, বরং মানসম্মত, পরিবেশবান্ধব, টেকসই পণ্য তুলে দিন আপনার শিশুর হাতে।

  • একটা জিনিসকে অন্য জিনিসে রূপান্তর করে ব্যবহার করতে শেখান। যেমন আপনার শিশুর জামাকাপড় দিয়ে পুতুল বা অন্যান্য খেলনার জামাকাপড় বানিয়ে দিন। ভাত বেচে গেলে ছাদে পাখিকে খেতে দিন। ডিম, খাবারের খোসা, চা দিয়ে জৈব সার বানিয়ে গাছে দিন।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমন যানবাহন যতটা সম্ভব পরিহার করে শিশুকে হাঁটতে শেখান
ছবি : নকশা
  • শিশুকে ধন্যবাদ জানাতে শেখান। খাবারের জন্য গাছকে ধন্যবাদ জানানো মন্দ কী! আর প্রাণিজ খাবার বিশেষ করে রেড মিট কম খাওয়ার অভ্যাস করুন।

  • বাসায় পোষা প্রাণী পালতে পারেন। মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর বন্ধুত্বের গল্প আছে, এমন সব বই তুলে দিন শিশুর হাতে। এমন সব কার্টুন দেখান, যেখান থেকে সে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখে এবং প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাণীর প্রতি সহানুভূতির সৃষ্টি হয়।

তথ্যসূত্র: ফেমিনা