শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং কীভাবে দেবেন

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশু বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। হাঁটতে শেখা, কথা বলার মতো টয়লেট ট্রেনিংও শিশুদের বিকাশের একটি ধাপ। শিশুর এই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকের মনে প্রশ্ন জাগে, শিশু কবে নিজে থেকে প্রস্রাব–পায়খানার কথা বোঝাতে পারবে বা বলতে পারবে? অথবা নিজেই টয়লেটে যেতে শিখবে? সাধারণত ১৮ মাসের মধ্যে শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দিলে শিশু দ্রুত তা শিখে ফেলে। টয়লেট ট্রেনিং রাতারাতি হয়ে যায় না। প্রায়ই ৩-৬ মাস লাগে। কারও কারও বেলায় আরও বেশি সময় লাগতে পারে। ২২–৩০ মাসের মধ্যে শিশু পুরোপুরি টয়েলট ট্রেনিং রপ্ত করে ফেলে। শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দেওয়ার জন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এটা বেশ ধৈর্যের ব্যাপার। জেনে নিন কৌশলগুলো—

সাধারণত ১৮ মাসের মধ্যে শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দিলে শিশু দ্রুত তা শিখে ফেলেছবি: সংগৃহীত
  • শিশু যখন শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত, তখনই টয়লেট ট্রেনিং শুরু করতে হবে। শিশু বেশ কিছু সংকেত দেয় যে সে টয়লেট ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত। যেমন প্রস্রাব বা পায়খানার চাপ অনুভব করলে মায়ের হাত ধরে টয়লেটের দিকে টানাটানি করে। ছোট ছোট নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে। ডায়াপার পরা থাকলে অনেকক্ষণ শুষ্ক থাকে। শিশু টয়লেট ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত না থাকলে তাকে জোরাজুরি করা উচিত নয়। তাকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সময় দেওয়া জরুরি।

  • শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং সম্পর্কে জানাতে হবে। এর উপকারিতা বলতে হবে। বিষয়গুলো জানানো যেতে পারে গল্পের ছলে। এ ক্ষেত্রে গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারেন অথবা দেখাতে পারেন ভিডিও। মোটকথা, টয়লেট ট্রেনিং শেখানোর আগে ব্যাপারটা শিশুর কাছে সহজ করে নিতে হবে।

  • টয়লেট ট্রেইনিংয়ের জন্য প্রথমেই একটা রুটিন করে নিন। এটি পরবর্তী সময়ে শিশুর সুন্দর অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। রুটিন করে শিশুকে খাওয়ানোর পর অথবা বিছানায় যাওয়ার আগে পটিতে বসান। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পটিতে বসানোর অভ্যাস করুন, এমনকি পটিতে বসার প্রয়োজন না থাকলেও।

  • সঠিকভাবে টয়লেট ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য শিশুকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। তবে ব্যর্থ হলে তাকে বকাঝকা করা উচিত নয়।

  • শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দেওয়ার জন্য চার্ট অনুসরণ করা যেতে পারে। এতে শিশু তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলে পুরস্কৃত করে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে।

  • শিশুর পোশাক এমন হওয়া উচিত, যাতে টয়লেট ট্রেইনিং করানো অভিভাবক এবং শিশু দুইজনের জন্যই সুবিধা হয়। প্যান্ট যদি চেইনওয়ালা হয়, তাহলে সে একা খুলতে বা লাগাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। কয়েক দিন অভিভাবক তাকে টয়লেট ট্রেনিংয়ের সময় প্যান্ট পরতে ও খুলতে সাহায্য করলে ধীরে ধীরে সে নিজে নিজেই করতে আগ্রহী হবে।

  • টয়লেট ট্রেনিং খুব ধৈর্যের পরীক্ষা। অভিভাবক অনেক সময়ই হতাশ হয়ে পড়েন। এই প্রক্রিয়ায় শিশু হঠাৎ টয়লেট করে ফেলতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক। এ কারণে সঙ্গে অতিরিক্ত কাপড়, পরিষ্কার করার সামগ্রী কাছে রাখতে হবে। আর এ রকম হলে শান্ত থাকুন, শিশুকে বকাঝকা করবেন না।

  • শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তাদের শেখানোর জন্য তার পছন্দের পুতুলটিও ব্যবহার করতে পারেন। এতে সে দেখে শিখবে এবং তার আগ্রহ তৈরি হবে।

  • শিশু একা একা পরিচ্ছন্ন হতে পারবে না, তাই তাকে পরিষ্কার করানোর সময় প্রতিটি ধাপ তাকে মুখে বুঝিয়ে বলতে হবে। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারবে যে পটি করার পর পরিচ্ছন্ন হতে হয়।

  • টয়লেট পট এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে শিশু সহজেই নাগাল পায়। শিশু যেন প্রয়োজনে ইঙ্গিতে দেখাতে পারে বা নিজেই গিয়ে বসতে পারে, এমন স্থানে রাখতে হবে।

  • অনেক শিশুর টয়লেট ট্রেনিংয়ে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। শিশুর আচরণে অথবা বিকাশে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করলে অবশ্যই শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।