‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা থাকলেই পড়া যায়’—এই ধারণা দূর হোক

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের রব উঠেছে সর্বত্র। কী ধরনের পরিবর্তন চান আপনি—আমরা জানতে চেয়েছিলাম কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠুক সম্প্রীতির উদাহরণ

অন্বেষণ চাকমা
ছবি: সংগৃহীত

অন্বেষণ চাকমা, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

তিন পার্বত্য জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান) থেকে আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছেন, এমন আদিবাসী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে হয়। আমাদের অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে একটি হলো আর্থিক সমস্যা। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ আবাসিক সুবিধা না থাকায় অনেকের হিমশিম খেতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হিন্দুদের জন্য কেন্দ্রীয় মন্দির, মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদ থাকলেও বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের কোনো প্যাগোডা বা গির্জা নেই। আজকের এ পর্যায়ে এসে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এসব বিষয়ে বিবেচনা করে। যেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ছাড়াই ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে থাকবে। সবাই যাঁর যাঁর ধর্ম নিশ্চিন্তে পালন করার সুযোগ পাবে। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা যেখানে পড়াশোনা করে, সেখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি যেন সারা দেশের মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হতে হবে সবার জন্য আন্তরিক। প্রত্যেক কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা থাকবে। আমরা দেখে আসছি প্রশাসনিক কিংবা এ ধরনের নানা কাজে শিক্ষার্থীদের অনেকটা সময় চলে যায়। এই লালফিতার দৌরাত্ম্য দূর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আলোচনার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে ব্যাংকিং খাতের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করা জরুরি, যেন আমরা ঘরে বসে সহজেই সব সম্পন্ন করতে পারি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও থাকুক পিএইচডির সুযোগ

পুষ্পিতা সাহা
ছবি: সংগৃহীত

পুষ্পিতা সাহা, ইংরেজি বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ

নানা অন্যায়-অবিচারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে যে রকম প্রতিবাদের ঝড় উঠে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন খুব একটা দেখা যায় না। আমিও চাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ ছাত্ররাজনীতি মুক্ত হোক, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদের ন্যায্য দাবিগুলো জানানোর সুযোগ পাক। এবারের আন্দোলন এটা প্রমাণ করেছে—প্রয়োজনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এক হতে পারে। এই পরিবর্তনটি খুবই ভালো।

তবে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যোগ করতে চাই। ওপরের সারির কয়েকটি বাদে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ন্যূনতম মেধা যাচাই ছাড়াই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। অবশ্যই শিক্ষা সবার মৌলিক চাহিদা। কিন্তু ন্যূনতম মেধা যাচাই না করার ফলে অনেক শিক্ষার্থী শুধু হুজুগে পড়ে এবং টাকার বিনিময়ে একটা বিভাগে ভর্তি হয়ে যায়। পরে সে নিজেই বিপাকে পড়ে। ন্যূনতম যাচাইয়ের একটা পদ্ধতি থাকলে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা থাকলেই পড়া যায়’—এই ধারণা দূর হবে। তাই এই বিষয় আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

আরেকটি বড় বৈষম্য নিয়ে কথা না বললেই নয়। এখনো দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পান না। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় বেশ ভালো ভূমিকা রাখছেন। আমরা চাই, অন্তত প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে এই সুযোগ দেওয়া হোক। অন্যরাও তাতে করে মানোন্নয়নে উৎসাহী হবে। অনেকে হয়তো মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদারকি বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে আমি মনে করি।