কেন শিখব তৃতীয় ভাষা

মাতৃভাষা বাংলার চর্চা প্রয়োজন সবার আগে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজির চর্চাও আমরা করি ছোটবেলা থেকে। এর বাইরে তৃতীয় একটি ভাষা শিক্ষা কেন জরুরি? এখনকার সময়ে নতুন একটি ভাষার দক্ষতা কীভাবে আপনাকে এগিয়ে রাখবে? লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের চীনা ভাষা প্রোগ্রামের শিক্ষক আফসানা ফেরদৌস

নতুন একটা ভাষা খুলে দেয় নতুন এক জানালা
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

একসময় অভিবাসনের জন্যই মূলত নতুন ভাষা শেখা হতো। এখন উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে গবেষণা, চাকরি কিংবা বাড়তি দক্ষতা অর্জন, নানা উদ্দেশ্যেই কিশোর-তরুণেরা নতুন ভাষা শিখছেন। অনেক অভিভাবক শিশুদের নতুন ভাষা শিখতে উৎসাহ দিচ্ছেন। নতুন একটা ভাষা মানেই তো নতুন একটা জানালা খুলে যাওয়া, নতুন এক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, পৃথিবীটাকে দেখার ভিন্ন একটা ‘চোখ’ অর্জন। অতএব, তৃতীয় ভাষা শেখার গুরুত্বটা আড়ম্বর করে বলার প্রয়োজন হয় না।

যাঁরা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি, চীন, জাপান কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চান, তাঁদের জন্য নতুন আরেকটি ভাষা শিক্ষা ভীষণ কাজে লাগে। অনেক সময় মাস্টার্স বা পিএইচডি করার ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান।

আরও পড়ুন

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন নতুন ভাষা শেখার সুযোগ অনেক বেড়েছে। ইউটিউবেই বিদেশি ভাষা শেখার অনেক চ্যানেল আছে। আছে নানা ধরনের অ্যাপ। যেসব অ্যাপে নতুন নতুন শব্দ শেখার পাশাপাশি নতুন একটা ভাষার চর্চাও করা যায়। যেমন ডুয়োলিঙ্গো, বাবেল, বুসু, ম্যাঙ্গো ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদি।

দেশেও বিদেশি ভাষা শেখার অনেক রকম সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শিক্ষার বিভাগ বা ইনস্টিটিউট আছে। ভাষার ওপরে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি উচ্চমাধ্যমিক সনদ থাকলেও ভাষা শেখার সুযোগ আছে। আগে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোই ছিল ভাষা শিক্ষার একমাত্র জায়গা। এখন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই আপনি ভাষা নিয়ে পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পাবেন। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ১৪টি ভাষা শেখার সুযোগ আছে। জুনিয়র সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে ডিপ্লোমা সনদও পেতে পারেন।

নতুন ভাষা শিক্ষার একটা বড় ইতিবাচক দিক হলো কর্মক্ষেত্র ও নেটওয়ার্কিংয়ের এক নতুন দুনিয়া আবিষ্কারের সুযোগ। একটা নতুন ভাষা যখন কেউ শেখে, তখন সেই ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমি চীনা ভাষা শিখেছি বলে চীনা ভাষাভাষীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ঘটছে। এই সুযোগ সবার জন্যই উন্মুক্ত। একই সঙ্গে নতুন সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় হয়, নতুন নতুন বই পড়া বা সিনেমা দেখার দুনিয়া উন্মুক্ত হয়।

আবার অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেই অনুবাদক হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা জানি, দেশে এখন বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা বড় বড় প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে, সেখানে প্রচুরসংখ্যক তরুণ অনুবাদক হিসেবে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু অনুবাদক হিসেবেই নয়, এখন কর্মবাজার বড় হচ্ছে; সেখানেও অনেক সুযোগ আছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় বিদেশি ভাষা শেখা থাকলে নানা ধরনের কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন। ফরাসি ভাষা জানা থাকলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন সংস্থায় কাজের সুযোগ থাকে। আরবি ভাষা জানা থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থায় কাজ করতে পারেন।

নতুন ভাষা শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, গ্যেটে ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে নানা পর্যায়ে ভাষা শেখার সুযোগ আছে। স্নাতক পড়ার পাশাপাশি নতুন একটা ভাষা শিখে ফেললে পরে ভিনদেশে মাস্টার্সের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাবেন। নতুন ভাষা শেখার আরেকটি দিক হচ্ছে, এখন বিভিন্ন দেশের সরকারি নানা বৃত্তি চালু আছে। এসব বৃত্তির মাধ্যমে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করতে পারবেন।

নিজ আগ্রহে পরিকল্পনা করে নতুন ভাষা শেখা শুরু করুন। ফেসবুকে ভাষা–সংশ্লিষ্ট অনেক গ্রুপ আছে, যেখানে আপনি নতুন ভাষা চর্চা করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ করে ভাষা শিখতে পারেন। এখন ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাস ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভাষা নিয়ে নানা আয়োজন দেখা যায়। রচনা প্রতিযোগিতা ও সিনেমা দেখার মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও নতুন ভাষা চর্চাকে আরও বিকশিত করতে পারেন।