
ছিমছাম, কিন্তু অভিজাত, যা সবাইকে প্রায় সব পোশাকের সঙ্গেই মানায়, একবাক্যে এভাবেই মুক্তার গয়নার বৈশিষ্ট্য বলে দেওয়া যায়। খুব সাধারণ ও হালকা সাজে আভিজাত্য আনতে চাইলে মুক্তার গয়নার কোনো জুড়ি নেই।

কথা হলো মায়াসীরের ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খানের সঙ্গে। তিনি জানান, এই উপমহাদেশে অনেক বছর ধরেই মেয়েরা মুক্তার গয়না পরে আসছেন। আগে এর সঙ্গে সোনাই বেশি ব্যবহৃত হতো। আশির দশকের শেষে দিকে ও নব্বইয়ের শুরুতে মুক্তার সঙ্গে রুপার ব্যবহার শুরু হলো। এরপর দিনে দিনে মুক্তার সঙ্গে আরও নানা রকম উপাদান দিয়ে গয়না তৈরির চল এসেছে। এখানে নানাভাবে এটি উপস্থাপিত হচ্ছে। তবে এখনো রয়ে গেছে এক লহরের মুক্তার মালা ও কানে ছোট টপ পরার চল। ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতে, মুক্তার ছোট মালা ও টপ মানিয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, কামিজ এমনকি আনুষ্ঠানিক সাজে পশ্চিমা ঘরানার পোশাক ব্লেজার কিংবা কোটের সঙ্গেও।
আড়ং-এর ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা জানালেন, এখন ফ্যাশন জুয়েলারিতে নানাভাবে মুক্তা ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঠ, রুপা, রুদ্রাক্ষ, পিতল ইত্যাদি উপাদানের সঙ্গে মিলিয়ে বানানো হচ্ছে নানা রকমের ফিউশনধর্মী গয়না। আর ঐতিহ্যবাহী গয়নার নকশায় এর সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে সোনা, পান্না, রুবি ইত্যাদি। এ ছাড়া এখন কৃত্রিম উপায়ে রং দিয়ে মুক্তাদানা নানা রঙে রাঙানো হচ্ছে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কয়েক রঙের মুক্তার গয়নাও আজকাল পরতে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের। মাধুরী সঞ্চিতা মনে করেন, মুক্তার গয়নায় আভিজাত্যের পাশাপাশি কোমলতাও প্রকাশ পায়।
ঢাকার গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটে পাবেন বেশ কিছু মুক্তার দোকান। এখানকার পার্ল প্যালেসের কর্মী ইফতেখার মাহফুজ জানান, মুক্তার আসল রং চাপা সাদা, কিছু মুক্তা আছে, যার মধ্য থেকে হালকা গোলাপি অথবা বেগুনি একটা আভা আসে। তবে এখন প্রযুক্তির বদৌলতে একে কালো, সোনালি, লাল, সবুজ, ধূসর—ইচ্ছেমতো রঙ্গে রাঙানো যাচ্ছে। তবে যত যা-ই হোক, প্রাকৃতিক রঙে মুক্তার যে রূপ, তার আবেদন অমলিন। সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই এটি মানানসই।
বাজার ঘুরে জানা গেল মুক্তার আংটি, কয়েক লহরের মালা, প্যাঁচানো মালা ও কানের ছোট টপ এখন বেশ চলছে। এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে মুক্তার পেনডেন্ট ও টাইনি বা খুব ছোট দানার মুক্তার মালা। চাষ করার সময় কৃত্রিম উপায়ে মুক্তা দানাগুলোকে এখন লম্বা, চ্যাপ্টা নানা রকম আকৃতি দেওয়া হচ্ছে। আকারের ভিন্নতার কারণেও নতুনত্ব আসছে এতে। মাহিন খানের পরামর্শ অনুযায়ী, লম্বা গলার মেয়েদের ছোট মালা ও ছোট গলায় লম্বা মালা পরলে ভালো দেখাবে। কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন গয়না মানাবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করবে পরিবেশ ও ব্যক্তিত্বের ওপর।
আসল মুক্তা চিনতে
বিশেষজ্ঞরা জানালেন আসল মুক্তার গায়ে কখনো আঁচড় পড়বে না। আগুনের সংস্পর্শে আনলেও এটির রঙে কোনো পরিবর্তন আসবে না। নকল মুক্তার গায়ে দানা দানা দাগ দেখা যেতে পারে। আসল মুক্তা বেশি দীপ্তিমান ও গোল হয়। পরার পর মুছে পরিষ্কার পাতলা কোনো সুতির কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখলে আসল মুক্তার গয়না নষ্ট হবে না।
মুক্তার গয়নার দাম নির্ভর করে এর মান ও দানার আকারের ওপর। চাইলে আলগা মুক্তা কিনে নিজেও গয়না বানাতে পারবেন। এ ছাড়া অনেক দোকানে নকশা দেখিয়ে দিলে তারা কারিগর দিয়ে তা তৈরি করে দিতে পারবেন।