আরামের ক্যাজুয়াল শার্ট
ফ্যাশনে ক্যাজুয়াল শার্টের ট্রেন্ড কখনোই পুরোনো হওয়ার নয়। বরং ফিরে ফিরে আসে প্রিন্ট, চেক আর স্ট্রাইপ। দেখা যায়, কাট আর প্যাটার্নের তারতম্য, ফিটের রকমফের। এবারের ঈদেও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বরং ক্যাজুয়াল শার্টের বৈচিত্র্যময় আয়োজন তরুণদের তো বটেই, যেকোনো বয়সী পুরুষকে এবারের ঈদে উৎসাহিত করে ক্যাজুয়ালি ক্লাসি হতে।
গ্রীষ্মের খরতাপ জায়গা খুঁজে নিয়েছে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে। দমকা হাওয়ায় বৃষ্টি শুরু হলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও, তপ্ত রোদ ফিরে আসে পুনরায়। এ সময়ে আবহাওয়ার এমন টালমাটাল অবস্থা হয়তো স্থায়ী হবে আরও কিছুদিন।
দিনের শুরুতে একটু স্বস্তির বাতাস গায়ে লাগলেও, দুপুর রোদের প্রখরতা দীর্ঘায়িত হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত। তাই পোশাকেও প্রয়োজন আরাম। আর করোনার সময়ে সবাই ঘরেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন, তাই সবাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন স্বস্তিদায়ক ও আরামের পোশাকে।
বিশ্বজুড়ে এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডেও জায়গা দখল করে নিয়েছে কমফোর্টেবল কালেকশন। তরুণদের অনেকেই হয়তো টি–শার্টের স্টাইল থেকে বেরিয়ে, উৎসবের এই সময়ে ভিন্নভাবে তৈরি করতে চান নিজের স্টাইল স্টেটেমন্ট। কিন্তু সেখানেও প্রাধান্য পাচ্ছে আরাম। এত সব বিবেচনায় এই সময়ে ফ্যাশনেবল তরুণদের প্রথম পছন্দ হতে পারে শার্ট। বিশেষ করে ক্যাজুয়াল শার্ট।
কারণ, এতে স্টাইলটাও ধরে রাখা যায়, সঙ্গে লুকটাও ফুটে উঠে সুন্দরভাবে। আবার উৎসবদিনে ফরমাল লুকও ঠিক মানায় না। উপরন্তু এখন লম্বা সময় ধরে ফরমাল লুকে থাকাটাও বেশ কষ্টসাধ্য। স্থান ও সময়বিশেষে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে প্রয়োজন ক্যাজুয়াল লুক, অথচ কিছু জায়গায় টি-শার্টও পরা যায় না। এসব ক্ষেত্রে ক্যাজুয়াল শার্টই সবচেয়ে উপযোগী।
সময়ের চাহিদায় ফ্যাশন ট্রেন্ডে ফিরে এসেছে আলোহা অ্যাটেয়ার শার্ট বা হাওয়াইন শার্ট। এই শার্টের প্রচলন শুরু হয় ১৯৩০ থেকে ১৯৫০-এর দিকে। এবার আরবান ক্যাজুয়াল ওয়্যারে ফিরেছে এই পোশাক। রেট্রো ও হাওয়াইন ফ্লেভারের মিশ্র স্টাইল যোগ হয়েছে ফ্যাশন স্টেটেমেন্টে। আবার এসব শার্ট সব বয়সীর জন্যই মানানসইও।
গরম আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি হয়েছে এই কালেকশন। সমসাময়িক প্রিন্ট এবং বিভিন্ন রঙের মিশেলে শার্টগুলো বেশ দৃষ্টিন্দন্দন। অনায়াসেই মানিয়ে যাবে ক্যাজুয়াল আর ভ্যাকেশনওয়্যার হিসেবে। বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউসগুলো এই ট্রেন্ডকেই অনুসরণ করে আবহাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ ধরনের শার্টের চমৎকার লাইন রখেছে এবারের ঈদ সংগ্রহে।
তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরাও আজকাল পরছেন ক্যাজুয়াল শার্ট। নিজেকে ট্রেন্ডি রাখতে এই আউটফিট বেশি জুতসই। আবহাওয়া এবং ফ্যাশনের দিকটি প্রধান্য দিয়ে সুতি বা লিনেন কাপড়ের ক্যাজুয়াল শার্টেই স্বাচ্ছন্দ্যের। ফুল, হাফ বা কোয়ার্টার—সব কটিই হাল সময়ে চলনসই। বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ক্যাজুয়াল শার্টই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সব বয়সী ক্রেতাই কিনছেন ক্যাজুয়াল শার্ট। মেয়েদের পরিধেয় হিসেবে ক্যাজুয়াল শার্টের চাহিদা খুব বেশি দিনের নয়। তবে হাল ফ্যাশনে এর চাহিদা চোখে পড়ার মতো। তরুণীরা এখন তাঁদের স্টাইল স্টেটমেন্টে ক্যাজুয়াল শার্টকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে একরঙা শার্টের চেয়ে বিভিন্ন রং–বৈচিত্র্যের প্রিন্টেড শার্টের চাহিদাই বেশি। রয়েছে চেক বা স্ট্রাইপ শার্টও। বর্তমান সময়ে আউটফিটটির কলার এবং বাটনে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
বাজারে ছেলেদের যেসব শার্ট পাওয়া যায়, সেগুলোর কাট, প্যাটার্ন ও ডিজাইনে রয়েছে নতুনত্ব। কারণ, ফ্যাশন কেমন হবে, তা অনেকটা নির্ভর করে ঋতু আর ট্রেন্ডের ওপর। এবারের ঈদ হচ্ছে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে। এমন আবহাওয়ার কারণে উৎসবে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে ক্যাজুয়াল শার্ট। ফ্যাশন সব সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। তবে ছেলেদের পোশাকের পরিবর্তনটা হয় ধীরে ধীরে। হঠাৎ করে চোখে পড়ে না। এবারের ঈদে ছেলেদের ফ্যাশনে সেই পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
ক্যাজুয়াল শার্টের কলারের ব্যবহারেও রয়েছে ভিন্নতা। এ ছাড়া এখন বড় কলারের শার্টের জায়গা দখল করেছে ছোট কলার। আর প্রিন্টের চাহিদা এখনো শীর্ষে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও পরছেন ফ্লোরাল প্রিন্টের শার্ট। ছেলেদের ক্ষেত্রে ট্রপিক্যাল প্রিন্টই বেশি মানানসই। এ ছাড়া জ্যামিতিক প্রিন্ট, ট্রাইবাল প্রিন্ট, ফ্রুট প্রিন্টও রয়েছে ট্রেন্ডে।
তবে ছেলেদের শার্টে অল্প অল্প করে ফিরছে চেক ও স্ট্রাইপ। বোল্ড স্ট্রাইপই বেশি পছন্দ এ সময়ের তরুণদের। স্ট্রাইপ শার্ট কেনার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবশ্য থেকেই যায়। যেমন সেলাইয়ের ওপর নজর দিতে হবে। সেলাইয়ের সময় স্ট্রাইপের সঙ্গে স্ট্রাইপ না মিললে সেটা দেখতে বেমানান লাগে। তাই স্ট্রাইপ মেলানো শার্ট কেনা উচিত। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি, মিক্সড কটন, খাদি, লিনেন, ভয়েল, রেনন ইত্যাদি হাফ ও ফুল শার্ট এই গরমের জন্য বেশি উপযোগী। ফিটের পরিবর্তনও কিন্তু লক্ষণীয়।
আজকাল একেবারে গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা বডি ফিটেড শার্টের চল নেই বললেই চলে। এখন স্লিম ফিট ও কমফোর্ট ফিট ক্যাজুয়াল শার্টই বেশি পচ্ছন্দ সবার। আবার কেউ কেউ একটু ঢিলেঢালা ফিটই বেশি পছন্দ করেন। আগে ফুল হাতা শার্ট গুটিয়ে পরলেও এখন হাফ শার্টের হাতাও গুটিয়ে পরছেন অনেকে। শুধু মনে রাখতে হবে, যাঁরা একটু বেশি পাতলা গড়নের, তাঁদের এ ধরনের শার্ট এড়িয়ে চলাই ভালো।
রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের আউটেলটগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের আকর্ষণীয় সব হাফ শার্ট। ইয়েলো, সেইলর, লা রিভ, আড়ং, গ্রামীণ ইউনিক্লো, ইজি, টুয়েলভ, কে ক্রাফট, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউসের আউটলেটে পাওয়া যাবে এ ধরনের ক্যাজুয়াল শার্ট। এ ছাড়া নগরীর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, নুরজাহান মার্কেট, ফার্মগেট, মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় কম দামে পছন্দের আরামদায়ক ক্যাজুয়াল শার্ট পাওয়া যায়।