পোশাকে দেশীয় নকশা প্রকাশ করে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। তুলে ধরে যেন সে দেশের মাটির গন্ধ। আধুনিক কাট, ছাঁট বা নকশার মধ্যেও দেশীয় মোটিফ বা থিম তুলে ধরে স্বতন্ত্রতা। হাজার নকশার ভিড়েও জামদানি বা আলপনার ছাঁচ মনে করিয়ে দেয় এ দেশের কথাই। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সব সময়ই চেষ্টা করছে পোশাকে নতুন কিছু নিয়ে আসার। তবে কিছু নকশা, মোটিভ বা থিম আছে, যা চিরন্তন। নতুনের সঙ্গে মিশে তৈরি করেছে ফিউশনধর্মী লুক। পোশাকের ওপর এনেছে নতুনত্ব। তৈরি করেছে নতুন ভাবনা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব এবং উপলক্ষে ফ্যাশন হাউসগুলো এসব দেশীয় নকশা উপাদান ব্যবহার করে থাকে জমিন অলংকরণের জন্য। ঈদ, পয়লা বৈশাখ, পূজা ইত্যাদিতে দেখা যায় দেশীয় মোটিফের উপস্থিতি। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাতেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস নানা মোটিফ ব্যবহার করেছে এবারের পূজা সংগ্রহে।
‘বাংলাদেশের দেশীয় পুরোনো এবং প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে নিপুণ অন্যতম। ৪৭ বছরের বেশি সময় ধরে আছি আমরা’, হাসতে হাসতে বললেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আশরাফুর রহমান। জানালেন, পোশাকে আগে দেশীয় নকশাগুলো বেশি দেখা যেত। মোটিফ নির্বাচনে এখন অনেক নতুনত্ব এসেছে। তবে বছরের পর বছর ধরে যে নকশাগুলো ছিল, আছে এবং থাকবে সেগুলো হলো শীতের পিঠার নানা ছাঁচ, জামদানির নকশা, নকশি কাঁথার ফোঁড়, বাগানের ফুল, আলপনা। এসবই পোশাকের ওপর জায়গা করে নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই।
জামদানির নকশা বারবার পোশাকে ব্যবহারের কথা জানালেন অঞ্জন’সের কর্ণধার শাহীন আহম্মেদও। এই একটি নকশা ছেলেমেয়ে সবার পোশাকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। আবার নকশাটিকে ভেঙেও ব্যবহার করা যায় নানাভাবে। ছাপা কিংবা সুতার মাধ্যমে তোলা এ নকশার আবেদন সব সময়ই আলাদা। তবে এটির পাশাপাশি জ্যামিতিক নকশাও দেখা গেছে বহু পোশাকের ওপর। জামদানির নকশা ভেঙে জ্যামিতিক কিংবা হীরার নকশার আকারেও সাজানো যায়। একটি নকশা থেকেই জন্ম নেয় অসংখ্য নকশা। অঞ্জন’সের এবারের পূজা সংগ্রহে দেখা গেছে জামদানি নকশার উপস্থিতি।
আফসানা ফেরদৌসীর নকশা করা পোশাকের জমিন অলংকরণে বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব বেশ আলোচিত ছিল বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকে। সম্প্রতি উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও প্রাণীর থিম নিয়ে কাজ করছেন তিনি। আধুনিক পোশাকের কাটের ওপর দেশীয় প্রাণীর আঁকা ছবিগুলো সচেতনতামূলক বক্তব্যও জানিয়েছে। পুরোনো ও সবচেয়ে বেশি চলা নকশাগুলোর মধ্যে কলকা অন্যতম বলে মনে করেন তিনি। মেয়েদের পোশাকেই বেশি দেখা গেছে বছরের পর বছর ধরে।
রিকশাচিত্র বিভিন্ন সময়ে পোশাকে নকশার উপাদান হয়েছে। ১০ বছর ধরে বেশ পোক্তভাবেই পোশাকের জমিনে জেঁকে বসে আছে এই নকশা। পাশ্চাত্যে নকশাটি বেশ প্রশংসিতও। উজ্জ্বল রংগুলো নজর কাড়তে বাধ্য।
বাংলাদেশে লোকজ মোটিভগুলোর মধ্যে মাটির পুতুল, শখের হাঁড়ির কথা না বললেই নয়। এ নকশাগুলোর ব্যবহারের শুরু আছে, শেষ নেই। আমাদের এখানকার ডিজাইনাররা অবচেতন মনেই এটা নিয়ে কাজ করেন। লোকজ রংগুলোও মন কেড়ে নেয়। জানালেন রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস।