এখনকার নায়িকাদের ফ্যাশন তাঁদের স্টাইলিস্ট নির্দেশিত

ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুলা। ফ্যাশন দুনিয়া মাতাচ্ছেন তিন দশক ধরে। ২০০২ সালে সঞ্জয়লীলা বানশালির পরিচালিত ‘দেবদাস’ ছবির কস্টিউম ডিজাইন করে সাড়া ফেলেন তিনি। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্যের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নীতা লুলা ফ্যাশন দুনিয়ায় তাঁর দীর্ঘ পথচলা আর সৃজনের নানা বিষয় শেয়ার করেছেন।

ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুলার কালেকশনছবি: নীতা লুলার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

তিন দশক ধরে ফ্যাশন দুনিয়ায় রাজত্ব করছেন খ্যাতনামা কস্টিউম ডিজাইনার এবং ফ্যাশন স্টাইলিস্ট নীতা লুলা। তিন শর বেশি সিনেমায় কস্টিউম ডিজাইন করেছেন তিনি। তবে ‘দেবদাস’ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন আর মাধুরী দীক্ষিতের কস্টিউম ডিজাইন করে রীতিমতো সাড়া ফেলেন নীতা। এই ছবির কারণে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে পড়ে তাঁর নাম। নীতা ভারতের একমাত্র ডিজাইনার, যিনি চারবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। মহারাষ্ট্রের প্রাচীন শিল্পকলা ‘পৈঠানী’কে উপজীব্য করে নতুন নতুন সৃষ্টিসম্ভার উপহার দিয়ে চলেছেন তিনি।

ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুলা
ছবি: নীতা লুলার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

নানান রঙের সুতার সঙ্গে রুপালি আর সোনালি সুতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে পৈঠানিকে নতুন উপস্থাপন করছেন ধরেছেন নীতা। পৈঠানি শাড়ির সাবেকিয়ানা বজায় রেখে এক ট্রেন্ডি লুক দিয়েছেন তিনি। বিয়ের পোশাকের অভিনব আয়োজন দিয়ে নীতা ফ্যাশন দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন। আজও তিনি তাঁর ব্রাইডাল কালেকশন তৈরির নেশায় মেতে থাকেন। ফ্যাশন দুনিয়ায় যাঁরা পা রাখতে চলেছেন, তাঁদের এ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে নানানভাবে গাইড করছেন খ্যাতনামা এই ডিজাইনার। সম্প্রতি ভার্চ্যুয়াল ফ্যাশন শো হুনার অনলাইন-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি।

প্রথম আলো: ফ্যাশন দুনিয়ায় আপনি তিন দশকের বেশি সময় কাটালেন। কতটা পরিবর্তন দেখলেন?

নীতা লুলা: এখন সবকিছু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। ফ্যাশনকে সবাই এখন খোলা মনে স্বাগত জানিয়েছে। আমার মনে আছে, আমি যখন বাড়ির বড়দের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়ার কথা বলি, ওনারা বলেন যে আমি এ ক্ষেত্রে গিয়ে কী করব? বাড়িতে নিজের জামা বানাতে চাইলে, কোনো দরজির কাছে ট্রেনিং নেওয়ার কথা বলেন ওনারা। ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার কী দরকার। এসব নানান প্রশ্ন তুলেছিলেন বাড়ির বড়রা। তবে বাবা আমাকে খুবই সাহায্য করেছিলেন। বাবা বলেছিলেন যে আমি যদি ফ্যাশন দুনিয়ায় যেতে চাই, তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ যেন নিই। এরপর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছিলেন।

ছবি: নীতা লুলার কালেকশন
ছবি: নীতা লুলার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

তবে তখন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে। এখন মেয়েরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ফ্যাশন ডিজাইনার হবে। মেয়েরা এখন একার হাতে ব্যবসা সামলায়। নানা ব্র্যান্ড আসার পর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অনেক লাভ হয়েছে। এখনকার ডিজাইনাররা অনেক নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। এটা ফ্যাশন জগতের অনেক বড় পরিবর্তন। ডিজিটাল মাধ্যম আসার পর সারা বিশ্বের ফ্যাশন এখন মুঠোবন্দী। প্যারিসে যে ফ্যাশন ঝড় তুলেছে, তার সাক্ষী আমরা মুহূর্তের মধ্যে হতে পারছি। এখন একটা শিশুও নিজের ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতন। খাদিকেও এই সময়ে ট্রেন্ডি করে তোলা হয়েছে। আমার বিশ্বাস যে আগামী দিনে আরও অনেক নতুন কিছুর সাক্ষী হব আমরা।

প্রথম আলো: ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলে ডিজাইনারের সংখ্যা বেশি। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

নীতা: প্রতিভা কখনোই কোনো লিঙ্গের অধীন নয়। কোনো পুরুষের যদি ফ্যাশন সেন্স ভালো হয়, তাঁর সৃজনশীলতা থাকে, তাহলে তিনি একজন ভালো ডিজাইনার হতে পারেন। তাই লিঙ্গ দিয়ে প্রতিভা বিচার করা যায় না।

ছবি: নীতা লুলার পোশাকে বিদ্যা বালান
ছবি: নীতা লুলার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

প্রথম আলো: করোনার কারণে ফ্যাশন দুনিয়ার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। আপনি কীভাবে এর মোকাবিলা করছেন?

নীতা: আমার সঙ্গে যত মানুষ কাজ করেন, প্রতি মাসে তাঁদের প্রত্যেকের সব প্রয়োজন আমি মেটানোর চেষ্টা করি। প্রচুর মাস্ক বানিয়ে শুধু আমার সংস্থার কর্মচারীদের নয়, তাঁদের পরিবার, আশপাশে সবাইকে বিতরণ করেছি। আমি আমার কারিগরদের সামাজিক দূরত্ব, স্যানিটাইজেশন আর মাস্কের ব্যবহার সম্পর্কে নানানভাবে সচেতন করেছি। এই লকডাউনে আমার সামগ্রী ঠিকঠাকমতো বিক্রি না হলেও কর্মচারীদের পুরো বেতন দিয়েছি।

প্রথম আলো: আপনি অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। আগামী দিনে মেয়েদের জন্য কি কিছু করতে চান?

নীতা: যখনই কোনো মেয়ের জন্য আওয়াজ তোলার প্রয়োজন হয়, আমি নিশ্চয় আওয়াজ তুলি। আমি বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে জড়িত, যারা মেয়েদের পাশে গিয়ে সবসময় দাঁড়ায়। তাদের সাহস দেয়। আমি এই সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মেয়েদের নানান চাহিদা পূরণ করি।

ছবি: নীতা লুলার পোশাকে কারিশমা তান্না
ছবি: নীতা লুলার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

প্রথম আলো: এ প্রজন্মের বলিউড নায়িকাদের মধ্যে কার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট আপনি পছন্দ করেন?

নীতা: আগেকার নায়িকা হলে আমি বলতে পারতাম। কিন্তু এখনকার নায়িকাদের সম্পর্কে বলা মুশকিল। এ প্রজন্মের নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব স্টাইলিস্ট থাকেন। তাঁরা কোন অনুষ্ঠানে কী পরবেন, স্টাইলিস্টরাই সে সিদ্ধান্ত নেন। একজন নায়িকার আশপাশে ৩ থেকে ৪ জন স্টাইলিস্ট থাকেন। তাই এখনকার নায়িকাদের ফ্যাশন তাঁদের স্টাইলিস্ট দ্বারা নির্ধারিত।

প্রথম আলো: কোনো বার্তা কি দিতে চান?

নীতা: বিশেষত মহিলাদের বলতে চাই যে এমন কাজ করুন, যা আপনাকে আনন্দ দেবে। আর মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া জরুরি। মনের মতো কাজ আর আত্মনির্ভরশীল হলে আপনি খুশিতে থাকবেন। আর আপনি খুশি থাকলে আশপাশে সবার মধ্যে সেই খুশি ছড়িয়ে দিতে পারবেন।