ডেনিম অনুরাগ কমার নয়

ছবি: পেকজেলসডটকম

ডেনিম বা এর থেকে তৈরি জিনস। চাহিদার বিবেচনায় এর ধারেকাছে নেই অন্য কোনো পোশাক। আবার চলতি ট্রেন্ড থেকে শুরু করে ক্ল্যাসিক, রেট্রো, স্ট্রিট, আরবান, ক্যাজুয়াল, নিউ নরমাল পর্যন্ত প্রায় সব ধারাতেই এই পোশাকের উপস্থিতি সর্বত্র। বলা হয়, গত অর্ধশতাব্দীতে ডেনিমে তৈরি পোশাকের চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি। ফ্যাশন দুনিয়ায় ডেনিম নিয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে: ডেনিম ইজ অলওয়েজ আ গুড আইডিয়া।

ছবি: পেকজেলসডটকম

কারণ, যেকোনো পরিবেশ, ঋতু বা আয়োজন সব জায়গায় ডেনিম মানানসই। তবে সহজভাবে বললে এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ এর বৈচিত্র্য। আর এই বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলতে ডেনিম প্রস্তুতকারকেরা বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন ওয়াশ। ডেনিম বা জিনস ডিজাইনে ওয়াশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ওয়াশিংয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় ট্রেন্ডি ডিজাইন। এই ওয়াশিংয়ের আবার রয়েছে কয়েকটি ধাপ। যেমন এক ধাপে শুধু কাপড় পরিষ্কার করা হয়, অন্য ধাপে ডায়িংয়ের মাধ্যমে ডেনিমের রং নির্ধারণ করা হয়। আবার শুধু ডিজাইন করার জন্যও ওয়াশ ব্যবহার করা হয়। ওয়াশ সাধারণত তিন ধরনের—নেচারাল, অ্যাসিড ও বায়ো পলিশিং। এবং এই ওয়াশের রয়েছে অনেকগুলো প্রক্রিয়া। তবে পুরো বিশ্বে ড্রাই ও উইট—এই দুটি প্রক্রিয়া বেশি জনপ্রিয়।

স্টোন ওয়াশ: ডেনিমে ভিন্টেজ লুক তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং বহুল প্রচলিত একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে স্টোন ওয়াশ। সাধারণত পিউমিক স্টোন দিয়ে স্টোন ওয়াশ করা হয়। বিশেষত ইন্ডিগো ডেনিমে এই ওয়াশ বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ, ইন্ডিগো ডেনিমের গাড় নীল রং দূর করে একটি নীলাভ রং আনতে স্টোন ওয়াশ বেশি জনপ্রিয়। আর জিনসের এই রংই ফ্যাশন জগতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই ওয়াশে গতি বাড়ানোর জন্য সত্তর দশকের শেষের দিকে আবিষ্কৃত হয় পিউমিক স্টোন বা ঝামা পাথর।

ছবি: পেকজেলসডটকম

অ্যাসিড ওয়াশ: ডেনিমের ডিজাইনে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওয়াশ হচ্ছে অ্যাসিড ওয়াশ। মূলত ক্লোরিন ও পানি দিয়ে এই ওয়াশ করা হয়। এর মাধ্যমে মূলত ডেনিম পোশাকের রং পরিবর্তন করা হয়। একসময় ধারণা করা হতো, অ্যাসিড ওয়াশ ছাড়া জিনসের জ্যাকেট হয়তো জনপ্রিয় হবে না। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

এনজাইম ওয়াশ: এনজাইম ওয়াশ হলো একধরনের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এনজাইম ওয়াশ প্রধানত দুই ধরনের। এক. অ্যাসিড অম্ল এনজাইম, দুই. নিউট্রাল এনজাইম। এনজাইম ওয়াশের সময় এনজাইম প্রথমে প্রজেক্টিং ফাইবারে পরবর্তী সময়ে ফেব্রিকের ইয়ার্নে আক্রমণ করে হাইড্রোক্সিল করে। এনজাইম ওয়াশে সোডা অ্যাশ, স্যান্ডো ক্লিন পাউডার, বায়ো ডিটারজেন্ট, সফটনার, সোডিয়াম বাই সালফেটসহ আরও কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এই ওয়াশ জিনসকে আরও নরম ও কোমল করে, রং দীর্ঘস্থায়ী করে, টেকসই ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

রাবার বল ওয়াশ: রাবার বল ওয়াশকে আবার সফটনার ওয়াশও বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ডেনিমে তৈরি ভারী ও খসখসে কাপড়কে নরম ও কোমল করা হয়।

হট ওয়াশ: তৈরি পোশাক ব্যবহারের ফলে অনেক সময় সংকুচিত হয়ে যায়। পোশাকের এই সংকোচন এড়াতে সাধারণত হট ওয়াশ ব্যবহার করা হয়। এবং পোশাক তৈরির আগেই হট ওয়াশ সম্পন্ন করা উচিত। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যদি কোনো পোশাকে গার্মেন্টস ডাই, কোল্ড ডাই, পি পি স্প্রে করতে হয়, তবে পোশাকটি তৈরির হওয়ার আগেই হট ওয়াশ দিতে হবে। তা না হলে ব্যবহারের সময় বা পরে পোশাকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

সিলিকন ওয়াশ: যখন কোনো ডেনিম কাপড় বা জিনসের পোশাকে অধিক কোমলতা প্রয়োজন, তখন সিলিকন ওয়াশিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।