নতুন জুতায় ঈদ

জুতা ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ। কখনো কখনো পোশাককে ছাপিয়ে জুতাও মুখ্য হয়ে ওঠে। উৎসব আর উপলক্ষে নতুন জুতার আকঙ্ক্ষা থাকে সবার। ঈদ হলে তো কথাই নেই। পোশাকের ট্রেন্ডের সঙ্গে যোগ হয় জুতার ট্রেন্ড। উভয়ে মিলে সম্পূর্ণ করে স্টাইল স্টেটমেন্ট।

ছবি: বাটার ফেসবুক পেজ

জুতা ছাড়া স্টাইল স্টেটমেন্ট অসম্পূর্ণ। আর ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা যেন অপরিহার্য। আমাদের দেশের মানুষের প্রচলিত ধারণা হলো, আগে পোশাক, পরে জুতা। অর্থাৎ, সবকিছু কেনার পর কিনতে হবে মানানসই জুতা বা স্যান্ডেল। তবেই না পূর্ণতা পাবে ঈদ ফ্যাশন। পোশাকের সঙ্গে সহজেই মানায়, এমন জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা একসময় বেশি ছিল। আজকাল ছেলেমেয়েদের পছন্দ শাইনি ফুটওয়্যার।

ছবি: বাটার ফেসবুক পেজ

বলা চলে, জুতা এখন আর শুধু ফ্যাশন অনুষঙ্গ নয়, স্টেটমেন্টেরই অংশ। অনেকে আবার জুতাকে কেন্দ্র করেই তৈরি করেন তাঁদের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সেই ধারাবাহিকতায় এখন আর গৎবাঁধা কালো বা চকলেট রঙের জুতার পরিবর্তে হালকা শাইনি বা অ্যান্টিক রং বেশি জনপ্রিয়। বিশেষ করে স্যান্ডেলের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বেশি দেখা যায়। অ্যান্টিক সোনালি, রুপালি, মেরুন, টার্কোয়েজ, সাদা, বেইজ, বেনসন কালারের জুতা-স্যান্ডেলই এ সময়ের ফ্যাশন-সচেতনদের বেশি পছন্দের।

হাল ফ্যাশনে এবারও রয়েছে পাঞ্জাবি বা কাবলির সঙ্গে লোফার বা স্নিকারস পরার চল। যে কারণে দেশীয় লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোও তৈরি করছে বিশেষ ধরনের লোফার। এ ছাড়া জুতার আরও একটি ধরন বেশ জনপ্রিয়। যার নাম সাইকেল শু। স্যান্ডেল ও লোফারের মিশেলে করা এই জুতা বেশ কয়েক বছর ধরেই আছে চলতি ট্রেন্ডে। এই জুতাগুলো খাঁটি চামড়ায় তৈরি বলে বেশ আরামদায়ক।

ছবি: আড়ংয়ের ফেসবুক পেজ

মেয়েদের জুতার ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের অংশ হিসেবে ফ্ল্যাট বা চটি স্যান্ডেল এখনো ট্রেন্ডি। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, জিনস বা স্কার্টের সঙ্গে এ ধরনের জুতা বেশ মানানসই। এগুলোর মধ্যে আবার লক্ষ করা যায় নানা ধরনের অ্যাম্বেলিশমেন্ট। যেমন জরি, চুমকি, কুন্দন, সেলাই ইত্যাদির কারুকাজ। এ ছাড়া চোখে পড়ে বড় পাথরের ব্যবহারে ফুলের নকশা করা স্যান্ডেল। কিছু কিছু জুতার পেছনের অংশে চেইনও রয়েছে। কালার কম্বিনেশনের কারণে জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে এ ধরনের স্যান্ডেলের জুড়ি নেই। আবার ফিতার বুননে কোলাপুরি স্টাইলের স্যান্ডেলও পাওয়া যাবে বাজারে। ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের ধারায় রয়েছে কোলাপুরি স্যান্ডেলও; যা কখনো পুরোনো হয় না। পুরোপুরি চামড়ার তৈরি ব্রোকেড, ফিতা আর পুঁতির ডিজাইনে এই স্যান্ডেল বাজারে পাওয়া যায় হরহামেশাই।

তবে যাঁরা উচ্চতায় খানিকটা কম, তাঁরা চাইলে এগুলি এড়িয়ে চলতে পারেন। তাঁদের জন্য রয়েছে বরাবরের মতোই হিলওয়ালা জুতা। মেয়েদের জুতায় হিল রয়েছে বিভিন্ন মাপের। তবে দেড় ইঞ্চি বা দুই ইঞ্চি হিলই বেশি থাকছে। মেয়েদের স্টাইল স্টেটমেন্টের দিকে লক্ষ রেখে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, সেইলর, লা রিভ, নয়্যার, অঞ্জন’স, কে ক্রাফট পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্যান্ডেল। বিশেষ করে উৎসবগুলোয়। এমনকি নিজস্ব ধারাতেই স্যান্ডেলের ডিজাইন করে প্রতিটি ব্র্যান্ড।

ছবি: লা রিভের ফেসবুক পেজ

ফ্যাশন ট্রেন্ডের দিকে খেয়াল রেখে জুতার ব্র্যান্ডগুলো তৈরি করেছে কাপড়ের জুতা। ছোট–বড় বুনন আর কাঁথার ফোঁড়ের সমন্বেয় তৈরি জুতাগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। এবারের ঈদে বাটা, অ্যাপেক্স, বে এম্পোরিয়ামের মতো জুতার ব্র্যান্ডগুলোর আয়োজন বরাবরের মতো বৈচিত্র্যময়। রংবেরঙের চামড়ার ব্যবহারে বেণি করা বা চামড়ার ফুলে তৈরি ডিজাইনের স্যান্ডেল দেখা যায়। কোনো কোনোটায় আবার জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে করা হয়েছে কারচুপি। কোনোটায় আবার ছোট ঘুঙুরের কাজ। উৎসব মাথায় রেখে জুতার রঙে খানিকটা বৈচিত্র্য রয়েছে। সব বয়সের নারী-পুরুষ ও বাচ্চাদের জুতায় রঙের উজ্জ্বলতা দেখা যাবে। গ্লিটার বেজড কিছু ম্যাটেরিয়াল রয়েছে এসব ব্র্যান্ডের মেয়েদের জুতায়। চামড়ার বাইরেও কাপড়, পুঁতি, বিডস দিয়ে তৈরি নান্দনিক ডিজাইনের জুতাও রয়েছে।

ডিজাইনে ক্ল্যাসিক প্যাটার্নগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি গৎবাঁধা ফ্যাশনের বাইরে এসে ফ্ল্যাট স্যান্ডেলের ডিজাইনে বৈচিত্র্য এনেছে ব্র্যান্ডগুলো। ছেলেদের জন্য ক্যাজুয়াল ও ফরমাল—দুই ধরনের সংগ্রহ থাকছে ব্র্যান্ড শপ আর রকমারি জুতার দোকানগুলোয়। ক্যাজুয়াল সংগ্রহে থাকছে স্যান্ডেল, স্লিপার, কেডস, সিড়বকার্স, কনভার্স ও লোফার। পিওর লেদার ও কৃত্রিম চামড়ায় তৈরি স্যান্ডেলেরও রকমারি সংগ্রহ আছে ঈদবাজারে।

ছবি: এপোক্সর ফেসবুক পেজ

ফরমাল শুর মধ্যে দেখা যাচ্ছে ফ্যাশনেবল মোকাসিনো, লেদার ও এসপাড্রিল কিংবা সেমি বুট শু। সময়টা যেহেতু গরমের, এই সময় অনেকেই মোজা পরতে স্বস্তি বোধ করেন না। তাঁদের জন্য সেমিফরমাল শু এনেছে ব্র্যান্ড শপগুলো। ক্যাজুয়াল জুতা হলেও এগুলো দেখতে অনেকটা ফরমাল, তাই ফরমাল শার্ট-প্যান্ট বা স্যুটের সঙ্গে মানিয়ে যায়। জুতার ওপেনিং বড় থাকে বলে বাতাস সহজেই চলাচল করতে পারে এবং মোজা না পরলেও সমস্যা বা অস্বস্তি হয় না।

স্টাইলিশ ও ট্রেন্ডি ক্যাজুয়াল লুকের জন্য স্নিকারসই সবচেয়ে মানানসই। স্নিকারসগুলো রাবারের সোলের সঙ্গে কাপড়ের আপারে তৈরি। তাই সব আবহাওয়ায় ব্যবহার বেশ আরামদায়ক। সিনথেটিক লেদার ও লেদারেও তৈরি হয় বাহারি ডিজাইনের স্নিকারস। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের পায়েও আজকাল রঙের বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। কালো বা বাদামির পাশাপাশি সাদা, সবুজ, হলুদ, নীল বা কমলা রঙের জুতাও পছন্দ করছেন তরুণরা।

ছবি: বাটার ফেসবুক পেজ

ব্র্যান্ডগুলো ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল আর মার্কেটে জুতার দোকানগুলোতে রয়েছে দেশি-বিদেশি জুতার আকর্ষক সম্ভার।