‘প্লাস সাইজ’ মডেলদের নিয়ে র‍্যাম্প শো

সদ্য শেষ হলো অস্ট্রেলিয়া ফ্যাশন উইক। প্রশ্ন হলো, এবারের এই ফ্যাশন উইক বিশ্বফ্যাশনকে কী বার্তা দিল? নতুন কী সংযোজন হলো? এই প্রশ্নের চমৎকার উত্তর আছে আয়োজকদের কাছে। অস্ট্রেলিয়া ফ্যাশন উইকে এ বছর আলাদা একটি শো হয়েছে কেবল ‘প্লাস সাইজ রানওয়ে’ নামে। ‘বডি পজিটিভিটি’ এত দিন কেবল মৌখিকভাবে আলোচিত হয়েছে। এবার মূল ধারার আন্তর্জাতিক ফ্যাশনেও তার ছাপ পড়ল। আর সেটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছে। তবে দু–একটা কটুকথা যে শুনতে হয়নি, তা নয়।

‘বডি পজিটিভিটি’ এত দিন কেবল মৌখিকভাবে আলোচিত হয়েছে। এবার ফ্যাশনেও তার ছাপ পড়ল।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘মডেল’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে যেমন অবয়ব ভেসে ওঠে, সেটি আর যা–ই হোক স্থূল নয়। সকালে উঠে দুটো শুকনো ‘সুগারলেস’ বিস্কুট আর ব্ল্যাক কফি—একজন মডেলের সকালের নাশতা নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা এ রকমই। বাস্তবতাও খুব একটা ভিন্ন নয়। তবে এই ঘেরাটোপে ‘প্লাস সাইজ’ মানুষের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, যার শরীরে ‘স্মল সাইজে’র পোশাক ফিট করে যায়, তার মতো নয়। শুকনো মানেই সুন্দর—এমন একটা ধারণাও মনের অগোচরে ঠাঁই করে নিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ‘প্লাস সাইজ রানওয়ে’ খুবই জরুরি ছিল বলে মনে করেন মডেলিং এজেন্ট চেলসি বোনার। তবে তাঁর জন্য এ আয়োজনটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।

আয়োজনটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সিডনি থেকে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চেলসি বলেন, ‘একটা ফ্যাশন শোতে “প্লাস সাইজড” মডেল দেখা যায় না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দু–একজনকে দেখা যায়। আমরা মুখে যতই গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর কথা বলি না কেন, বাস্তবতা ভিন্ন। কেবল প্লাস সাইজের মডেলদের নিয়ে একটা আস্ত শো করাটা সহজ ছিল না। যত মানুষের দরজায় যেতে হয়েছে, যতটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে, মানুষকে রাজি করানোর জন্য—এটা ছিল একটা সত্যিকারের যুদ্ধ। তবে দিন শেষে মনের কোণে একটা আত্মতৃপ্তি পেয়েছি। যে আমি সাধারণ ফ্যাশনিস্তা মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি। “পারফেক্ট” একটা মিথ্যা শব্দ।’ এই রানওয়েতে নারী–পুরুষ মিলিয়ে ৬০ জন মডেল অংশ নেন।

কেবল প্লাস সাইজের মডেলদের নিয়ে শো করা সহজ ছিল না
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বিশ্বফ্যাশনে প্লাস সাইজের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল অ্যাশলি গ্রাহাম। ২০০১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে তিনি মডেলিং শুরু করেন। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিও পান। তবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে তাঁকে কম কটুকথা শুনতে হয়নি। নির্দিষ্ট আকার, আকৃতির বাইরে এ রকম মডেল হাতে গোনা। তবে ধীরগতিতে হলেও পরিবর্তন আসছে। ২০১৯ সাল থেকে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভিক্টোরিয়াজ সিক্রেট প্লাস সাইজ মডেলদের নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের মডেলও যোগ দিয়েছে বিশ্বখ্যাত এই মার্কিন ব্র্যান্ডের সঙ্গে।

মা হবার প্রাক্কালে ভোগের প্রচ্ছদে অ্যাশলি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্লাস সাইজ মডেলদের র‍্যাম্পে দেখে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘অবশেষে নিজের মতো কাউকে র‍্যাম্পে দেখে ভালো লাগছে।’ একজন ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই তো সত্যিকারের মডেল। এত দিন যাঁদের দেখে এসেছি, তাঁরা যে কোথা থেকে আসেন, কোথায় থাকেন, কী খান, র‍্যাম্পে হেঁটে আবার কোথায় মিলিয়ে যান কিছুই বুঝতাম না। এই না হলে পরিবর্তন! স্বাগত।’

ফ্যাশন আইকন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী মার্কিন সংগীত তারকা লিজ্জো
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

তবে নিন্দুকেরাও বসে থাকেননি। তাঁরা লিখেছেন, ‘এভাবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপনকে অনুপ্রাণিত করছে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ! এই রানওয়ের স্পনসর কারা?’